গল্প: ভাগ্য | মেঘ

:: কলরব ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

ভাগ্য
মেঘ

ফয়সালের মা মারা গেলেন ভোর পাঁচ টায়। ফয়সালকে পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে এলো বেলা এগারোটার দিকে। ফয়সালের প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দিয়েছে। প্রতিবেশীদের সবার ধারণা ফয়সাল তার মায়ের হত্যাকারী। কারণ মায়ের লাশের পাশে বসে সে কোনরকম কান্নাকাটি হা-হুতাশ করেনি।

ফয়সাল আধা কেজি মিষ্টি খেয়েছে। বড়ই সুস্বাদ। গতকাল সকালে ফয়সাল চাকরি পেয়েছে, সেই সুসংবাদে রাতে বাসায় ফিরেছে মিষ্টি নিয়ে। ঐ মিষ্টি মা খেতে চায় নি। তবুও ছেলের অমন খুশি মুখ দেখে না করতে পেরে শেষমেষ মিষ্টি খেলেন। সকালে মা মারা গেলেন। মায়ের লাশের পাশে বসে ফয়সাল মিষ্টি খেয়ে পরীক্ষা করছিলো,মিষ্টিতে কোন ঝামেলা রয়েছে কি না। মিষ্টিতে ঝামেলা ছিল না। মিষ্টি বড়ই সুস্বাদ।

মায়ের বয়স হয়েছে, সে জন্য মা মারা গিয়েছে। মৃত্যুতে কারো হাত নাই। আল্লাহর জিনিস আল্লাহ নিয়ে গেছে। কিন্তু এই মৃত্যুর শোকে ফয়সালকে নিয়ে এসেছে থানায়। অবশ্য থানার পরিবেশ মানুষ যতটা খারাপ বলে ততটা খারাপ নয়। ভালোই। একটা জানালা আছে বাঁ দিকে,সে জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়। সবচেয়ে চমৎকার যে বিষয়টি, ফয়সাল এই কামড়ায় একা নই, ফয়সালের সঙ্গে আরেকজন আছে। উদ্ভব গন্ধ তার গায়ে, চুলে জট, রোগা-সোগা জরাজীর্ণ দেহ, দাঁড়িতেও জট। মনে হচ্ছে সাধু সন্ন্যাসী কেউ একজন। আসার পর থেকে ফয়সাল খেয়াল করে দেখলো, উনি দেওয়ালের গায়ে লিখছে একটা নাম নূরবানু।
ফয়সালের তো মনে হচ্ছে নির্ঘাত এই লোক মানসিক রোগী। কারণ দু’ঘণ্টা যাবৎ ফয়সাল এই কামড়াতে এসেছি, অথচ লোকটি একবারো ফয়সালের দিকে কর্ণপাত করলেন না। অদ্ভুত।

বাহিরের আকাশ কালো হচ্ছে ধীরে ধীরে, মেঘেরা দল বেঁধে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে,সম্ভবত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কখন ঝাঁপিয়ে পড়বে ব্যস্ত নগরীর উপর। সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ হলেই কার্যক্রম শুরু করা হবে। বিদ্যুৎ চমকানো ব্যবস্থা রয়েছে নিশ্চয়ই,বাতাসকে এতক্ষণে ডেকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়ে গেছে,তুমি পূর্ব দিক থেকে আক্রমণ করো। সূর্যকে মনে হয় বলা হয়েছে, তুমি বিদায় হও। আজ আর তোমার কাজ নেই,তুমি বিশ্রাম নাও। হাওয়া শুরু হয়েছে শা-শা করে। এখন শুরু হবে প্রাথমিক বৃষ্টি।

ওসি সাহেব বসে বসে চিন্তা করছেন, সম্ভবত ভাবছে দুপুরের খাবার আজ বাসা থেকে কি করে আসবে। কারণ বেলা বারোটা বাজে এখন মনে হচ্ছে সন্ধ্যা ছয়টা। চারদিক ঘোলাটে ঠান্ডা হাওয়া,বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে একটু পর পর, সেই সাথে আকাশের গর্জন। পিনপিনে ঠান্ডা বাতাসে ফয়সালের চোখ নিভে আসছে ঘুমে। ফয়সাল চোখ বন্ধ করে ঝিমাচ্ছিলাম। অর্ধ ঘুম অবস্থাতেই একটা স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্নটা স্পষ্ট নয় ঘোলাটে। কেউ যেন বলছে, স্বপ্ন দেখো স্বপ্ন দেখো, তুমি স্বপ্ন মানব। তুমি যা স্বপ্ন দেখবে তাই হবে। বড় মধুর ঐ গলার সুর কিন্তু যে,বলছে তাকে ফয়সাল স্পষ্ট দেখতে পারছে না। শুধু মেয়েদের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। স্বপ্ন দেখো,স্বপ্ন দেখো,স্বপ্ন দেখো। ফয়সাল আৎকে উঠলো ঘুম থেকে। চোখ খুলতেই বুক ধকধক করে উঠলো। হঠাৎ একটা উদ্ভব গন্ধ পেটের ভিতরে ঢুকে নাড়িভুঁড়ি উল্টে দেওয়া মতো অবস্থা হলো। ওই লোকটা ফয়সালের চোখের ঠিক দুই আঙ্গুল সামনে ঝুঁকে এসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,তার দিকে। ফয়সাল হকচকিয়ে উঠতেই তিনি গম্ভীর গলায় বললেন,সিগারেট আছে??

এই কামড়ার ভিতর আবছা আলোতে উনাকে দেখতে এখন ভয়ংকর বিচ্ছিরি লাগছে। ফয়সাল ভয়ে কলিজা শুঁকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। ফয়সাল ভয়ে ভয়েই জবাব দিলো, না আমি সিগারেট খাই না। আপনি জানেন না, “সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধূমপানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ক্যান্সার”।

তিনি শব্দ করে দুলে দুলে হাসতে শুরু করলেন, ঐ হাসি দেখে ফয়সালের গা ছমছম করে উঠলো।

তিনি বললেন, “মানুষের জন্য সিগারেট ক্ষতিকর নয়– মানুষ সিগারেটের জন্য ক্ষতিকর”।

উনার অদ্ভুত কথা শুনে ফয়সালের ভ্রু কুঁচকে গেলো।ফয়সাল সাহস সঞ্চয় করে বললো,আপনার কথাবার্তা শুনে পাগল ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না এখন, আপনাকে। তিনি ফের হেসে হেসে বললেন, পাগলামি জীবনযাপন যদি স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেয়ে শান্তির হয়, তবে পাগল সাজা শ্রেয় নয় কি?
“শান্তিপূর্ণ ধ্যাঁতরা খাতার কাছে–রাজত্বহীন মুকুট নস্যি”।

ফয়সাল আক্কেল গুডুম হলো লোকটির কথা শোনে। বড্ড শক্তপোক্ত কথা বলে। এতক্ষণ পাগল মনে হলেও এখন আর তা মনে হচ্ছে না। ফয়সাল বিস্ময় সামলে নিয়ে পুনরায় বললো, আপনাকে থানায় ধরে এনেছে কেন?

” থাপ্পড় মেরেছিলাম”
থাপ্পড়! কাকে?
“ওসি হারামজাদাকে”

রীতিমতো একটা ঝটকা লাগলো ফয়সালের। অদ্ভুত এই লোক, ওসি সাহেবকে থাপ্পড় মেরে দিয়েছে। মোটেও সুবিধার লোক নয়।

থাপ্পড় কেন দিয়েছেন?
“হারামজাদা আমার কাজে বাধা দিয়েছে”।

কি কাজ করেন আপনি?
“ভাগ্য খুঁজি”!

মানে ভাগ্য কি খোঁজর জিনিস। কোথায় ভাগ্য খোঁজেন?

“যখন যেখানে ইচ্ছে করে সেখানে।কখনোও খুঁজি ড্রেনের ভেতর, কখনো ময়লার স্তূপে, কখনো বা সমুদ্রের কিনারে, খোলা নিরব মাঠে, কখনো খুঁজি আকাশে। মানুষ বলে সবকিছু ভাগ্যে থাকা লাগে, সবকিছু যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে– ভাগ্য কোথায় থাকে?”

ভাগ্য কোথায় থাকে তা তো জানিনা, আপনি খুঁজতে থাকেন একদিন পেয়ে যাবেন।

 


[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]