পবিত্র মাহে রমজান অত্যন্ত মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ। এ মাস সিয়াম সাধনা ও তাকওয়ার মাস, কল্যাণ ও বরকতের মাস, রহমত, মাগফিরাত এবং জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তি লাভের মাস। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ মাসটিকে বহু ফজিলত ও মর্যাদা দিয়ে অভিষিক্ত করেছেন। মুসলমানদের জন্য বছরের এ মাসটিই এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয় অশেষ পুণ্য লাভের। তাই এ মাসের গুরুত্ব এত বেশি।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে। (সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫)
এ মাসে যারা সঠিকভাবে সিয়াম পালন বা রোজা রাখবেন তাদের মর্যাদাও হবে অনেক। রোজাদারের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, মানুষ যত প্রকার নেক কাজ করে আমি তার সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করে দিই। কিন্তু রোজা এই নিয়মের বাইরে। রোজার সওয়াব একই নিয়মে সীমাবদ্ধ বা সীমিত নয়। রোজার সওয়াবের পুরস্কার স্বয়ং আমি প্রদান করব। অথবা আমি নিজেই রোজার সওয়াবের পুরস্কার। রমজানের রোজার সওয়াব সম্পর্কে আল্লাহ তায়লা নিজেই এরশাদ করেন- ‘নিশ্চয় রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দিব। –(সহিহ বোখারি ও মুসলিম)।
পবিত্র রমজানে এবাদতের ফজিলতের কোনো শেষ নেই। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে উল্লেখ হয়েছে, যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নফল কাজ করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজই আদায় করল। আর যে এ মাসে কোনো ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল।
আর রোজাদারের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সা,) এরশাদ করেছেন, রোজাদারের নিদ্রা ইবাদতের সমতুল্য, তার চুপ থাকা তসবিহ পাঠের সমতুল্য, সে সামান্য ইবাদতে অন্য সময় অপেক্ষা অধিকতর সওয়াবের অধিকারী হয়। ঈমান ও এহতেসাবের সঙ্গে যে ব্যক্তি রোজা রাখে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ এ কারণেই বলা হয়, পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে ইবাদত, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, শোকর ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম।
মানব জাতির মুক্তির সনদ পবিত্র কোরআন মজিদ একত্রে লাওহে মাহফূয থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইজ্জতে অবতীর্ণ হয় এ মাসেই। রাসূল (সা.)-এর নিকট সর্বপ্রথম এ মাসেই ওহি অবতীর্ণ হয়। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- ‘রমজান মাসই হল সে মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। -(সূরা বাকারা, ১৮৫)
পবিত্র রমজান মাসে রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। হাদিসে আছে- ‘রমজন মাস শুরু হলেই রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়।’ –(সহীহ মুসলিম)। অন্য এক হাদীসে এ মাসের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘রমজন মাসের শুভাগমন উপলক্ষে জান্নাতের দরজাসমুহ উন্মুক্ত এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে করা হয় শৃংখলাবদ্ধ।’ (-বোখারি ও মুসলিম)। হাদিস শরিফে এসেছে- ‘আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ -(মুসনাদে আহমদ)
এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে মুক্তির পরওয়ানা লাভ করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। কেননা এটি জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভের মাস। সুতরাং এ মাসে মুমিনের কর্তব্য বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা এবং তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে মুক্তির সনদ লাভে সচেষ্ট হওয়া। তাই এমন মাস পেয়েও যে ব্যক্তি স্বীয় গুনাহ মাফ করাতে পারল না সে খুব হতভাগা।
প্রকৃত পক্ষে রমজান মাসের রোজা, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, সাহরি, ইফতার, তারাবি নামাজ, সাদাকাতুল ফিতর, জাকাত, দান-খয়রাত প্রভৃতি আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতরাজি, যা রোজাদারদের কুপ্রবৃত্তি দমন ও তাকওয়া বা খোদাভীতিপূর্ণ ইবাদতের মানসিকতা সৃষ্টিতে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা জোগায়। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে প্রকৃত রোজা পালন এবং আমাদের সবাইকে আরো উত্তম আমল করার তাওফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট।