আইন অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। সংবিধান অনুসারে বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ৫০। এসব সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে আলোচনায় গাজীপুরের ৬ নারী নেত্রী।
আলোচনায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- জাহানারা বেগম, তাসলিমা রহমান লাভলি, শর্মিলী দাস মিলি, শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, রীনা পারভীন ও মেহের আফরোজ চুমকি।
জাহানারা বেগম কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায়। তিনি এর আগে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাসলিমা রহমান লাভলি জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক, বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ। তিনি এর আগে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শর্মিলী দাস মিলি গাজীপুর যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক, বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ। তিনি এর আগে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন-১৩ থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রীনা পারভীন গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের কক্ষ সম্পাদক ও জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক এমপি মেহের আফরোজ চুমকিও সংরক্ষিত আসনের সদস্য সদস্য হওয়ার জন্য লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, গাজীপুরের ওই ৬ জন নারী নেত্রী আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন। প্রত্যাশীরা নিজেদের জীবনবৃত্তান্ত ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের চিত্র দেখাচ্ছেন নেতাদের। তবে প্রকাশ্যে তেমন কিছুই বলছেন না।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হওয়ার দৌড়ে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা সকলেই আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী। ছাত্রাবস্থা থেকেই দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রায় সবাই সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। সবকিছু বিবেচনা করে দল যাকে যোগ্য মনে করে তাকেই এমপি হিসাবে সিলেক্ট করবে।
জানতে চাইলে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রীনা পারভীন বলেন, আমি ছাত্র অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। দীর্ঘদিন হলো জেলা মহিলা লীগের দায়িত্ব পালন করছি৷ একদিনের জন্যেও দলের বাইরে থাকিনি। গতবার নেত্রীর কাছে সংরক্ষিত আসনের এমপি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নেত্রী আমাকে উপজেলার মনোনয়ন দেন। এবারও আমি এমপি হওয়ার জন্য আবেদন করবো।
জানতে চাইলে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, আমি স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত৷ আমাকে নেত্রী ২০১৯ সালে সংরক্ষিত আসনে এমপি হিসাবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করেছি৷ কোনো অনিয়ম করিনি৷ নেত্রী চাইলে আমি এবারও আশাবাদী।
জানতে চাইলে সাবেক এমপি মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, কাকে মনোনয়ন দিবেন এটি নেত্রীই ভালো জানেন। নেত্রী চাইলে আমি সংরক্ষিত আসনে দায়িত্ব নিতে রাজি আছি৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিবেন, আমি সে সিদ্ধান্তই মেনে নিব।
আসনবণ্টন বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যদের জন্য কোনও নির্ধারিত নির্বাচনি এলাকা নেই। তারা কেবল দলীয় বা জোটের সদস্য হিসেবে পরিচিত হবে। এক্ষেত্রে দল বা জোটের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে মহিলা আসন বণ্টন হবে। সংবিধান অনুযায়ী একটি রাজনৈতিক দলের ৬ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য থাকলে ওই দল থেকে একজন প্রার্থী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হবেন। সেই হিসাবে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৪৭ টির মতো সংরক্ষিত আসনের এমপি পাবে।
তফসিল জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন আইন-২০০৪ অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনের মতো সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করতে হয়। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কোনও কর্মকর্তা রিটার্নিং অফিসার নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে৷ তবে এখানে আমার কোন মতামত বা ব্যক্তিগত চয়েস নেই। এটা সম্পূর্ণ দল ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যদি আমার নিকট জানতে চান তাহলে মতামত দিবো। এছাড়া আমার ব্যক্তিগত কোন মতামত নেই।