নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফ্লিল্ড নিয়ে আগেই শঙ্কা ছিল জাতীয় পার্টির। তারা নির্বাচনে আসবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২৬টি আসন থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করার শর্তে নির্বাচনের মাঠে রয়েছে জিএম কাদেরের দল। তবুও ইতিমধ্যে চারটি আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
এদিকে সোমবার রংপুরে প্রচারণার সময় শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। জাতীয় পার্টির আরও প্রার্থীরা কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
নির্বাচন থেকে যে চার প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন তারা সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ করেছেন। তারা আসন্ন নির্বাচন নিরপেক্ষ না হওয়া, একতরফা নির্বাচন, ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ না থাকা এবং পার্টি মহাসচিবের এলোমেলো বক্তব্যসহ নানা অভিযোগের কথা তুলে ধরেন।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো ৪ প্রার্থী
হবিগঞ্জ-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শংকর পাল নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার এ ঘোষাণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন করবো না। ছাড় পাওয়া ২৬ আসনেও সরকারের সহযোগিতা ছাড়া জাপার জেতার সম্ভাবনা নেই। ’
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব চুন্নুর কথায় কোনো মিল পাওয়া যায় না। একেক সময় একেক কথা বলেন। তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করবে কি না কোনো স্টিশন নেই। ’
বরিশাল ২ ও ৫ আসনের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ অ্যাখ্যা দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি ভোট নিরপেক্ষ না হওয়ার শঙ্কায় সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
বরগুনা-১ (বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী) আসনে জাপার পার্থী মো. খলিলুর রহমান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। নির্বাচনকে একপেশে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখি না।
গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও সিটির একাংশ) আসন ও গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ ও সিটির একাংশ) আসনের প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। রোববার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণ এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক কারণে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ’
নিয়াজ উদ্দিন বলেন ‘একতরফা নির্বাচনের কারণে আমি সরে দাঁড়াচ্ছি। আমার সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও কোনো আলোচনা হয়নি। মূলত আমি আর পারছি না, যার কারণে সরে দাঁড়িয়েছি। ’
জিএম কাদেরের বক্তব্য
এদিকে সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর নগরীর কোর্ট চত্বরে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। ’ পার্টি প্রধানের এমন বক্তব্যের পর জাতীয় পার্টির নির্বাচনে থাকার বিষয়ে সংশয় আরও ঘণীভূত হয়েছে।
ভোটের মাত্র এক সপ্তাহ আগে জাতীয় পার্টির কয়েকজন প্রার্থীর সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘অনেক সময় অনেক প্রার্থী নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকেন না, কেউ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ করেন, আবার কেউ ঘোষণা করেন না। কেউ এমনিতেই বসে যান। পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে আমার একটা নির্দেশ আছে, যারা নির্বাচন করতে চান, করতে পারেন। নির্বাচন করতে না চাইলে সেটিও সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। ’
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কারণ সম্পর্কে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রার্থিতা প্রত্যাহার হুমকির কারণেও হতে পারে, অর্থের অভাবেও হতে পারে। অনেক প্রার্থী অর্থশালী হয়ে থাকে না, অর্থের কারণেও অনেকে নির্বাচন থেকে সরে যায়। তবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার সরে যাওয়াটা ওই আসনের ভোটাররা ভালোভাবে দেখে না। নির্বাচন থেকে সরে গেলে প্রার্থীরা অন্য কারও প্ররোচণায় কিংবা সমর্থনে বা আঁতাত করে অথবা ভয়ে সরে গেছে এমন একটা ম্যাসেজ যায়। যা রাজনীতির জন্য সুখবর নয়। ’
জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, ‘নির্বাচন না আসা পর্যন্ত সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকব কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। ’
এদিকে, গাজীপুর-৪ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন খান আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেবেন বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের যা বললো জাপা
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদল এনডিআই ও আইআরআইয়ের দুজন প্রতিনিধির সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেছেন জাতীয় পার্টির নেতারা। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাশরুর মাওলার বাসভবনে ওই বৈঠক হয়।
এ সময় জাপা নেতারা নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে নির্বাচনে সরকারি দলের নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেশিশক্তি ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
এ বিষয়ে মাশরুর মাওলা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিনিধিদল নির্বাচনের পরিবেশের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। ’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা গণসংযোগ করতে পারছে না। ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। ’