অর্ধেকের বেশি অর্থ যাচ্ছে ঋণ পরিশোধে

::
প্রকাশ: ১১ মাস আগে
ফাইল ছবি

ডলার সংকটের মধ্যে চাপ বাড়াচ্ছে বিদেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধ। বছরের ব্যবধানে শুধু সুদ পরিশোধের হার প্রায় আড়াই গুণ। তবে আশানুরূপ ঋণ পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এর প্রভাব পড়ছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে।

ঋণ পরিশোধ বৃদ্ধির এই ধারা আগামী বছরগুলোতেও থাকবে। পর্যাপ্ত ঋণের অভাবে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদেশি ঋণের অর্থছাড় যেমন কমেছে, তেমিন বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ ও সুদের চাপ অনেকে বেড়েছে।

ইআরডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে বিদেশি ঋণের অর্থ ছাড় হয়েছে ২১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অথচ গত বছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ২৪৬ কোটি ২৪ লাখ ডলার।

ঋণ ও সুদ পরিশোধের তথ্যে দেখা যায়, গত নভেম্বর শেষে বাংলাদেশকে সুদসহ আসল পরিশোধ করতে হয়েছে ১৩৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৪ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা।

অথচ গত বছরের একই সময়ে পরিশোধ করতে হয়েছিল ৮৮ কোটি চার লাখ ডলার। পরিশোধ করা মোট ঋণের মধ্যে সুদই রয়েছে ৫৬ কোটি ২২ লাখ ডলার, দেশি মুদ্রায় তা ছয় হাজার ১৮১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৩ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, দেশি মুদ্রায় তা দুই হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে শুধু সুদ পরিশোধের চাপই বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া ছিল, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে সরকারের এখন চার হাজার ২০ কোটি টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বৈদেশিক ঋণ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে এক হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা, যা ৬.৪৬ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণের ওপর সুদ খাতে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে দুই হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বা ১৯.৫৮ শতাংশ।

বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমলেও ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে অনেক। গত নভেম্বর শেষে বিদেশি ঋণদাতা সংস্থাগুলো ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৫৮৫ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৪৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার।

ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের প্রথম দিকে সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ব্যয় কম হয়। বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দের ১০ শতাংশের কম অর্থ ব্যয় করেছে। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দের কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। তবে অর্থবছরের শেষ দিকে অর্থ ব্যয় বাড়বে।

এ ব্যাপারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর  বলেন, ‘আগে বিশ্বব্যাংক-এডিবি থেকে আমরা নির্ধারিত হারের ঋণ পেতাম। এখন সেটা কমছে। এতে আমাদের বাজারভিত্তিক সুদহারের ঋণ নিতে হচ্ছে। এই ঋণের কারণে শুধু সুদ পরিশোধের চাপ বাড়বে না, একই সঙ্গে আসল পরিশোধেও চাপ বাড়বে। কারণ বাজারভিত্তিক সুদহারের ঋণ পরিশোধের সময় কম থাকে। এই অবস্থায় বাজারভিত্তিক সুদহারের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক হতে হবে। যেসব প্রকল্পে রিটার্ন আসবে না, সেসব প্রকল্প না নেওয়াই ভালো।’

ইআরডির হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ৩৫৮ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হবে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ২৭৪ কোটি ডলার। গত মার্চ পর্যন্ত বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮২.৮৫ বিলিয়ন ডলার।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ ছাড় কম হয়েছে। এদিকে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৭৩ কোটি ডলার।