পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রের ‘বিতর্কিত প্রশ্ন’ তৈরির সঙ্গে জড়িত পাঁচ শিক্ষককে চিহ্নিত করার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রশ্নকর্তা ও চার মডারেটর যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হওয়ায় সেই শিক্ষা বোর্ডই মঙ্গলবার বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেছে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র সাংবাদিকদের বলেন, “ঢাকা শিক্ষা বোর্ড বিষয়টি আমাদের অবহিত করার পর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
“বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কে এম রব্বানীকে প্রধান করা হয়েছে; এ ছাড়া বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক এবং কলেজ উপ-পরিদর্শককে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
মাধব চন্দ্র রুদ্র আরও বলেন, “এইচএসসি বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নপত্রের একটি প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ওই প্রশ্নের উদ্দীপক (সৃজনশীল প্রশ্নের একটি অংশ) হিসেবে এমন বিষয়কে বেছে নেওয়া হয়েছে, যা খুবই সংবেদনশীল বিষয়। এটি নিয়ে ফেইসবুকেও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।”
একমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. আহসান হাবীব।
তিনি আরও বলেন, “তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠাবে যশোর শিক্ষা বোর্ড।”
রোববার উচ্চ মাধ্যমিকে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা ছিল। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে একযোগে পরীক্ষা শুরু হয় এদিন। কিন্তু ঢাকা বোর্ডের ১১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নে সনাতন ধর্মের দুই ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের বিষয় তুলে ধরা হয়।
তাতে দেখানো হয়েছে, ছোট ভাই বিরোধের জেরে বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে একজন মুসলিম ব্যক্তির কাছে জমির একাংশ বিক্রি করে দেন। জমি কেনা ব্যক্তি সেই জমিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং কোরবানির ঈদে সেখানে গরু কোরবানি দেন। এতে জমি বিক্রেতা ভাইয়ের মন ভেঙে যায়, তিনি জমি-জমা সব ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যান।
বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষার পরই আলোচনা শুরু হয়। সরকার যেখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, এই প্রশ্ন তার সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ, সেই প্রশ্ন ওঠে।
বিষয়টি ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে শিক্ষামন্ত্রী সোমবার বলেন, কী কী বিষয় মাথায় রেখে প্রশ্ন করতে হবে, তার স্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া থাকে শিক্ষকদের। সাম্প্রদায়িকতার কিছু যেন না থাকে, সেটাও সেই নির্দেশিকায় আছে।
মঙ্গলবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে জানানো হয়, বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নপত্রটি প্রণয়ন করেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল।
সেটি মডারেট করেন নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পালের ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বলাই চন্দ্র পাল সাংবাদিকদের বলেন, “প্রশান্ত কুমার পাল একজন ভাল শিক্ষক। কিন্তু তারপরও তার হাত দিয়ে এমন প্রশ্ন কীভাবে তৈরি হলো বুঝতে পারছি না। কিন্তু যেটি হয়ে গেছে সেটি তো সত্য। এখন বোর্ড যে নির্দেশনা দেবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
প্রশ্নপত্রের মডারেটর নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন বলেন, তিনি ওই প্রশ্নের মডারেশনে ছিলেন। এ ধরনের প্রশ্ন থাকলে তা সংশোধন করে দেওয়া হয়; অথবা কেটে নতুন প্রশ্ন সংযোজন করা হয়। কিন্তু কিভাবে এই প্রশ্নটি রয়ে গেল তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
সূত্র:বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম