টাকার বিনিময়ে সীমান্ত দিয়ে নিরাপদে আওয়ামীলীগ নেতাদের ভারতে পালানোর সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক উদরাতুল বারী আবু বিরুদ্ধে। শুধু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাই নয়, পাশ্ববর্তী ফেনী, লক্ষীপুর এবং নারায়নগঞ্জেরও বেশ কিছু আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতাদেরও কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালাতে সহায়তা করেছেন বাবু। বিনিময়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
স্থানীয়রা জানান, কুমিল্লার সাবেক সিটি মেয়র তাহসীন বাহার সূচনার সঙ্গে আগে থেকেই বিশেষ সর্ম্পক ছিল এই আবুর। সূচনা মেয়র থাকাকালীন সময়েও একচেটিয়া টেন্ডার বাণিজ্য ও ঠিকাদারী কাজের নিয়ন্ত্রণ করতেন এই বিএনপি নেতা। এই সম্পর্কের জেরেই গত ৫ আগস্ট সরকার পরবির্তনের পর আবুর শেল্টারেই ছিলেন তাহসীন বাহার সূচনা। এরপর সুযোগ বুঝে তাকে সীমান্ত পার করে দেন আবু। আর এই সেইফ এক্সিটের জন্য নগদ দশ কোটি টাকা বখরা নেন এই মহানগর বিএনপি নেতা। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ‘সিটি করপোরেশনের টেন্ডার ও অসম্পূর্ণ ঠিকাদারীর সকল কাজ এখন থেকে আবুর কথামতো চলবে’ মর্মে সূচনার কাছ থেকে স্ট্যাম্পে লিখে নেন।
নারায়নগঞ্জের আলোচিত এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার পরিবারের সদস্যদেরও ভারতে পালাতে সাহায্য করেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক উদরাতুল বারী আবু। এর বিনিময়েও আবু ওই আওয়মী লীগ নেতার কাছ থেকে নগদ ২৫ কোটি টাকা নিয়েছেন। ফেনীর আলোচিত সংসদ সদস্য ও তার অনুসারীরাও আবুর মাধ্যমেই ভারতে পালিয়েছেন। এছাড়াও লক্ষীপুরের বেশ কিছু যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কোটি টাকার বিনিময়ে সীমান্তের কাঁটাতার পার করিয়েছেন উদরাতুল আলম বাবু।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির একটি অংশ অভিযোগ করেছে, সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট বিকাল থেকেই কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নগদ টাকা, চেক আর শেয়ার লিখে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিজের নামে করে নেন এই আবু।
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাদের মামলা থেকে বাঁচানো, পুলিশী হয়রানি থেকে রক্ষার নামেও বাণিজ্য করেছেন এই বিএনপি নেতা। তাদের কাছ থেকেও বিপুল টাকা নিয়েছেন। আর যারা নগদ টাকা দিতে পারেননি তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার নিয়েছেন।
এদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে কুমিল্লা শহরের প্রতিটি ফুটপাত, বাসস্ট্যান্ড, বেবিস্ট্যান্ড, রেল স্টেশনের দখলের পাশাপাশি আঞ্চলিক সরকারী প্রতিটি অফিসের দখল নিয়েছে বাবু ও তার অনুসারীরা। বাবুর দখলের থাবা থেকে রেহাই পায়নি মসজিদের জায়গাও।
স্থানীয় লোকজন বলছে, শহরজুড়ে আবু’র বেপরোয়া দখলদারিত্বে সবার মাঝে এটাই মনে করিয়ে দিয়ে, কুমিল্লা শহরে আবু’র কথাই শেষ কথা। ভয়ে কেউই মুখ খুলছে না। আর যারাই এসবের প্রতিবাদ করছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া আর পুলিশী হয়রানির মাধ্যমে ঘর ছাড়তে বাধ্য করছে উদরাতুল বারী আবু।
করপোরেশনের অসমাপ্ত কাজ, টেন্ডার আর ঠিকাদারীর একক কতৃর্ত্ব আবু’র কাছে। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দৈনিক ১০০টি বই বরাদ্দ আবু’র নামে। এলজিইডি অফিস, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের যে কোনো কাজে এখন আবু’র নিদের্শ ছাড়া হচ্ছে না। শাসনগাছা, জাঙ্গালিয়া, পদুয়ার বাজার বাস টার্মিনাল আবু’র মদদে তার সহযোগিরা দখল করে নিয়েছে।
শাসনগাছা বাস স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ আবু’র অনুসারী কোতোয়ালী থানা বিএনপি’র আহবায়ক রেজাউল কাইয়ুম, জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রিয়াজ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র আহবায়ক মাহবুব।
পদুয়ার বাজার টার্মিনালের দায়িত্ব ২২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য সচিব মিজান, সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সায়েম ও যুবদল নেতা খোকা। নগর পরিবহন দখল করে পরিচালনা করছেন আবু’র সহেযাগী যুবদল নেতা ভুট্টু। এমনকি মালিক সমিতি ও বিআরটিএ’র অনুমোদন ছাড়া নতুন পরিবহন সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
কয়েকটি পরিবহন সার্ভিসের মালিকানার শেয়ার উদরাতুল বারী আবু নিজের ও তার অনুসারীদের নামে জোর করে লিখে নিয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা শহরের গত ৩০ বছরের রামঘাটলা মসজিদের তত্বাবধানে থাকা বেবি স্ট্যন্ড উঠিয়ে দিয়েছে আবু’র সহেযাগী মহানগর যুবদলের আহবায়ক পাবেল। সেখানে রাতারাতি মার্কেট তৈরি করা হয়েছে। উদরাতুল বারী আবু’র দখলদারিত্বে মহানগর জুড়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশের না শর্তে কুমিল্লা মহানগর বিএনপি’র এক নেতা বলেন, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আবু। সে কাউকেই তোয়াক্কা করছে না। টাকার বিনিময়ে একাধিক আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের তিনি ভারতে সেইফ এক্সিট দিয়েছেন। চাঁদাবাজি, দখলদারি কী করছে না। তাকে নিয়ে পুরো কুমিল্লা বিএনপি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। আমাদের সকল অর্জন তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। বিএনপি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক উদরাতুল বারী আবুর মোবাইল ও হোয়াটসআপে নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও, তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।