খুন হওয়ার আগের দিন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানি ও গ্যাস চুক্তির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ প্রকৌশলী বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। পরদিন গ্রামের বাড়ি থেকে হলে ফিরলে ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত হন তিনি।
এই মেধাবী শিক্ষার্থীর আজ পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রাত ৩টার দিকে হলের দ্বিতীয় তলা থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দেওয়ার সময় আবরার কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। পরদিন ৬ অক্টোবর বিকালে তিনি বাড়ি থেকে বুয়েটের হলে ফেরেন।
ওই দিনই শেরেবাংলা হলের গেস্টরুমে আসামিরা সভা করে বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র আবরারকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।
পাঁচ বছর আগের আবরার ফাহাদের সেই স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
১. ৪৭-এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ছয় মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিল। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।
২. কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চায় না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দেব।
৩. কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তর ভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দেব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।
হয়তো এ সুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মতো সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’