২০ বছর আগে-পরে, শচীন-বিরাট গেঁথে গেলেন এক সুঁতোয়

:: স্পোর্টস ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ১২ মাস আগে

কতো রান করলে আপনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারবেন? বিরাট কোহলিকে কি এই প্রশ্নটা করা যাবে? কিংবা ২০ বছর আগে শচীন টেন্ডুলকারকে এই প্রশ্নটা করা হয়েছিল?

নাহ। এমন এক মঞ্চে ২০ বছর আগে পরে তারা দাঁড়িয়ে সেই প্রতিক্রীয়া জানার সুযোগ হয়নি। জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডার্স থেকে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী ক্রিকেট স্টেডিয়াম, শচীন-বিরাট দাঁড়িয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম মুহূর্তে। নিজেদের সামর্থ্যের সবকুটু উজার করে দিয়েও তারা চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন না, শিরোপায় চুমু খেতে পারেন না। পারেন না শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিয়ে উল্লাসে মাততে। চোখের কোনে অশ্রুবিন্দু নিয়ে সবুজ ঘাসের মাঠ ছেড়ে উঠে যান। অথচ সেখানেই তারা পেয়ে যান ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। যা কেবলই শোকেস ভরিয়ে দেয়। মন জিততে পারে না।

২০০৩ সাল। দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়াতে বসে বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। ভারতের ‘টিম ইন্ডিয়া’ দুর্দান্ত ফর্মে। রিকি পটিংয়ের অস্ট্রেলিয়া আরও ভয়ংকর। টুর্নামেন্টে সেরা এই দুই দলই ওয়ান্ডার্সে মুখোমুখি হয় ফাইনালে। বিগ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ভারতকে তুলোধুনো করে জিতে নেয় শিরোপা। সেবার বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকারের রান ফোয়ারা ছুটেছিল। ১১ ম্যাচে ৬১.১৮ গড়ে শচীন রান করেছিলেন ৬৭৩। ১ সেঞ্চুরির সঙ্গে ৬ ফিফটি। বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও শচীনের হাতে উঠে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার।

২০ বছর শচীনের এই রেকর্ড অক্ষত ছিল। ত্রয়োদশ আসরে এসে শচীনকে আদর্শ মেনে বড় হওয়া, ক্রিকেটার হওয়া বিরাট কোহলি ভাঙেন তার রেকর্ড। সেমিফাইনালে নিজের ৫০তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করার পথে শচীনকে ছাড়িয়ে বিরাট করেন ৭১১ রান। ফাইনালে ৫৪ রানসহ বিরাট থামেন ৭৬৫ রানে। ২০ বছর আগে শচীনের হৃদয় যেমন ভেঙেছিল শিরোপা না পেয়ে, বিরাটেরও আজ একই অনুভূতি। ভেতরে হয়েছে চুরমার।

অস্ট্রেলিয়া যখন ২৪০ রান করে জয় দেখছিল তখন বিরাট হারিয়ে যাচ্ছিলেন শূন্যতায়। ত্রেভিস হেডের একেকটি শটে যখন বাউন্ডারি পেরিয়ে যায় তার হৃদয়ে তখন চলছিল রক্তক্ষরণ। হয়তো মনের অজান্তেই নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন…আর কী করলে শিরোপা পাওয়া যেত?

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস দিয়ে বিরাটের বিশ্বকাপ শুরু। থামলেন ৫৪ রান করে। মাঝে স্রেফ নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ৯৫.৬২ গড়ে তার রান ৭৬৫। তার পরে দ্বিতীয় স্থানে থাকা রোহিতের (৫৯৭) ব্যবধান ১৬৮ রানের। ৩ সেঞ্চুরির সঙ্গে ৬ হাফ সেঞ্চুরি। একজন ব্যাটসম্যানের রানশৃঙ্গে যেতে আর কি চাই। ব্যাটসম্যান বিরাট সব পেয়েছেন। ইডেনে ১০১ রান করে শচীনের পাশে বসেছিলেন ৪৯তম সেঞ্চুরি নিয়ে। সেমিফাইনালে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ছাড়িয়ে যান আইডলকে। সঙ্গে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড নিজের করে নেন। ফাইনালেও হাসলো তার ব্যাট। কিন্তু হাসলো না দলীয় রান। তাতেই সব ওলট-পাল্ট। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিয়েও বিরাট বিষন্ন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শচীন ঠিক ২০ বছর আগে একই অনুভূতির সাক্ষী হয়েছিলেন।

২০১১ বিশ্বকাপ তারা দুজনই জিতেছিলেন। প্রাপ্তির খাতায় এই সুখস্মৃতি অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ট, অনেক ক্ষেত্রে নয়। ২০০৩ সালে যেমন শচীনের হয়নি। ২০২৩ এ এসে বিরাটের হলো না।