পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট:
গত বছরের তুলনায় ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি)। এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন মোট এক হাজার ১৯৫ জন শ্রমিক, এর মধ্যে নিহত ৯৬৭ জন ও আহত ২২৮ জন।
শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন ওশি ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়ক এমএম কবীর মামুন। প্রতি বছরের মতো এ বছর ২০২২ সালের তারা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংস্থার পরিচালক মো. আলম হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওশি ফাউন্ডেশন এর পরিবীক্ষণের আওতায় ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসকল দুর্ঘটনার খবর সংগ্রহ করা হয়েছে তাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হিয়ে সারাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে দুর্ঘটনায় মোট ১১৯৫ জন শ্রমিক হতাহতের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে মোট ২৪৬ জন শ্রমিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৯৪৯ জন শ্রমিক হতাহতের শিকার হয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য, গতবছর ২০২১ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মোট ১০৮৯ জন শ্রমিক হতাহতের শিকার হয়েছিলেন।
২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে যে ১১৯৫ জন শ্রমজীবী মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তার মধ্যে নিহত হয়েছেন মোট ৯৬৭ জন আর আহত হয়েছেন মোট ২২৮ জন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫২ জন এবং আহত হয়েছেন ৯৪ জন। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৮১৫ জন এবং আহত হয়েছেন মোট ১৩৪ জন।
প্রাতিষ্ঠানিক খাতে যে ৯৬৭ জন নিহত হয়েছেন তার মধ্যে নারী শ্রমিক ছিলেন ২৪ জন আর পুরুষ শ্রমিক ছিলেন ৯৪৩ জন। আর অপ্রাতিষ্ঠানিকব খাতে যে ২২৮ জন আহত হয়েছেন তার মধ্যে নারী শ্রমিক ছিলেন ২৮ জন এবং পুরুষ শ্রমিক ছিলেন ১৯০ জন।
২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানিক খাতে যে ৯৬৭ জন শ্রমিক হতাহতের শিকার হন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন পরিবহন খাতে। এই খাতে মোহ হতাহতের সংখ্যা ৪৭৬, যার মধ্যে ৪২৫ জন নিহত আর ৫১ জন আহত হয়েছেন যা মোট হতাহতের ৪০ শতাংশ।
হতাহতের দিক দিয়ে পরিবহন খাতের পরেই রয়েছে সেবামূলক খাত। এই খাতে মোট ২৭০ জন শ্রমিক হতাহতের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ২১১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন আর ৫৯ জন আহত হয়েছেন যা মোট হতাহতের ২৩ শতাংশ। এই সেবামূলক খাতের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, হোটেল/ রেস্টুরেন্ট, সরকারি সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মি প্রভৃতি।
সেবাখাতের পর রয়েছে কৃষিখাত। এই খাতে মোট ১৩৯ জন শ্রমিক হতাহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১২৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন আর ১৫ জন আহত হয়েছেন যা মোট এর মধ্যে রয়েছে ফসল উৎপাদন কর্মী, জেলে, চা- শ্রমিক, গরু ও মুরগির খামার ইত্যাদি। যা মোট হতাহতের ১২ শতাংশ।
এরপর রয়েছে নির্মাণ খাত। এবছর নির্মাণ খাতে মোট ১৩৪ জন শ্রমিক বিভিন্ন দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১০৫ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন যা মোট হতাহতের ১১ শতাংশ। আর ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে মোট হতাহতের সংখ্যা ১০০ জন, যার ৬৭ জন নিহত এবং ৩৩ জন আহত যা মোট হতাহতের ১৮ শতাংশ।
এবছর তৈরি পোশাক শিল্প খাতে মোট ৫৪ জন হতাহতের শিকার হন। এরমধ্যে ২৮ জন মৃত্যুবরণ করেন এবং ২৬ জন আহত হন যা মোট হতাহতের ৪ শতাংশ। আর জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে হতাহতের সংখ্যা মোট ২২ জন, যার মধ্যে নিহত ৭ জন এবং আহত ১৫ জন যা মো হতাহতের ২% শতাংশ।
গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর মোট ১১৯৫ জন শ্রমজীবী মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ বছর সবচেয়ে বেশি শ্রমিক হতাহত হয়েছেন আগস্ট মাসে। এ মাসে মোট হতাহতের সংখ্যা ১৪২ জন যার মধ্যে ১১৭ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও জানুয়ারি মাসে ৮১ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৭৯ জন, মার্জ মাসে ৭৫ জন, এপ্রিল মাসে ৯৯ জন, মে মাসে ৯৬ জন, জুন মাসে ১০২ জন, জুলাই মাসে ১২০ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৯ জন, অক্টোবর মাসে ১১৬ জন, নভেম্বর মাসে ৭৮ জন এবং ডিসেম্বর মাসে (১-২৯ তারিখ পর্যন্ত) মোট ৬৮ জন শ্রমিক হতাহত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, ওশি ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা যায় গত এক (১) দশকে (২০১৩-২০২২) মোট ১৫২৫৯ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে হতাহতের শিকার হন যার মধ্যে ৯৫৫৮ জন নিহত এবং ৫৭০১ জন আহত হন। এখানে উল্লেখ্য, ২০২০ সালে করোনা অভিঘাতের সময় তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের তথ্য এখানে সংযোজন করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে জবাব দেন সংস্থার পরিচালক মো: আলম হোসেন এবং প্রকল্প সমন্বয়ক এমএম কবীর মামুন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ওশি ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ইশরাত জাহান, এমআইএস অফিসার মো: সোহেল শেখ, মনিটরিং অফিসার মো: নূর আলম, ডক্যুমেন্টেশন অ্যাসিসটেন্ট মো. সুমন হাওলাদার প্রমুখ।