হলিউড অভিনেত্রী অ্যানি হ্যাথাওয়ে। ১৯৮২ সালের ১২ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়সে বাবা-মা এবং দুই ভাইয়ে সঙ্গে নিউ জার্সির মিলবার্নে চলে যান। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল অ্যানির।
অ্যানির মা কেট পেশায় একজন অভিনেত্রী ছিলেন। তিন সন্তানকে সামলানোর জন্য অভিনয় থেকে সরে যান অ্যানির মা। ছোটবেলায় মাকে মঞ্চে পারফর্ম করতে দেখে অ্যানিরও ইচ্ছা হয় অভিনয় করার। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন মনে মনে বুনতে শুরু করেন তিনি।
অভিনেত্রী হতে চাওয়ার কথা বাড়িতে জানালে শুরুতে আপত্তি জানান অ্যানির বাবা-মা। স্কুল-কলেজে পড়াশোনার সময় থিয়েটারে অভিনয় করতে শুরু করেন অ্যানি। ১৯৯৯ সালে সম্প্রচারিত ‘গেট রিয়্যাল’ নামে একটি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান অ্যানি।
২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দ্য প্রিন্সেস ডায়েরিজ’ সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় অ্যানিকে। এই সিনেমায় অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অ্যানি। তারপর ‘এলা ইনচান্টেড’, ‘দ্য ডেভিল ওয়েয়ার্স প্রাডা’, ‘গেট স্মার্ট’, ‘ব্রাইড ওয়ার্স’, ‘লাভ অ্যান্ড আদার্স ড্রাগস’, ‘ইন্টারস্টেলার’, ‘দ্য ইনটার্ন’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেন।
‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’, ‘অ্যালিস থ্রু দ্য লুকিং গ্লাস’ সিনেমায় হোয়াইট কুইন চরিত্রের পাশাপাশি ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইসেস’ সিনেমায় সেলিনা কাইলি চরিত্রে অভিনয় করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যান অ্যানি। অভিনয় ক্যারিয়ারে সাফল্য পেলেও এই জার্নিটা সহজ ছিল না। অনেক কিছুই মেনে নিতে পারতেন না তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে অ্যানি জানিয়েছিলেন— অডিশন দেওয়ার সময় তাকে অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ২০০০ সালের দিকে যখন সিনেমায় অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে যেতেন, তখন সেখানে উপস্থিত কাস্টিং ডিরেক্টররা অ্যানিকে অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রস্তাব দিতেন। অ্যানির দাবি— ‘ওই সময়ে অডিশন দিতে গেলে এই নিয়ম মেনে চলতে হতো।’
ব্যাখ্যা করে অ্যানি বলেছিলেন, ‘একজন অভিনেত্রীকে সকলের সামনে অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হতে বলা যেন খুব সাধারণ বিষয় ছিল। বড় পর্দায় কোন জুটির সম্পর্কের রসায়ন ভালোভাবে ফুটে উঠবে তা খতিয়ে দেখার জন্যই অডিশনের সময় এই প্রস্তাব দেওয়া হতো অভিনেত্রীদের।’
দশজন পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন অ্যানিকে। সেই ঘটনা বর্ণনা করে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমি একদিন অডিশন দিতে গিয়েছি। হঠাৎ আমাকে একজন বললেন, ‘আজ ১০ জনকে আসতে বলেছি। তোমার অডিশন নেওয়া হবে। ১০ জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবে তুমি। উত্তেজনা কাজ করছে না তোমার?’ এই প্রশ্নের উত্তর ঠিক কী দেব, তা বুঝতে পারছিলাম না। খালি মনে হচ্ছিল যে, আমার মধ্যে কোনো গোলমাল রয়েছে। কারণ আমি উত্তেজিত ছিলাম না। পুরো বিষয়টি আমার কাছে নোংরা মনে হয়েছিল।”
২০০০ সালের দিকে অডিশন নেওয়ার পদ্ধতি অন্যরকম ছিল। অ্যানিকে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্য কারো ছিল না। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে অ্যানির সম্পর্কে ধারণা বদলে যেতে পারে, সেই কারণেই চুপ করে থাকতেন এই অভিনেত্রী। এ বিষয়ে অ্যানি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন— ‘তখন সময় অন্যরকম ছিল। এখন কাজকর্মের ধরন বদলে গেছে।’