‘স্মার্ট বাংলাদেশ- আরও এক বিস্ময়কর অভিযাত্রা

::
প্রকাশ: ২ years ago

উন্নত বিশ্বের মহাসড়কে সমানতালে দেশকে এগিয়ে নিতে ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষনা দিলেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচনী অঙ্গীকারে সরকার রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশী জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা। এই পরিক্রমায় এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের পথে।

জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৮ হাজার ৮০০ ডিজিটাল সেন্টারে ১৬ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা কাজ করছেন। বর্তমানে ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৭০ লাখেরও অধিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি। প্রত্যন্ত এবং দুর্গম এলাকায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সারাদেশে ‘এক দেশ এক দরের’ একটি সাধারণ শুল্ক চালু করা হয়েছে।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

পেপারলেস কমিউনিকেশন চালু করার লক্ষ্যে সরকার ই-নথি চালু করেছে। ই-নামজারি সিস্টেমে আগত ৫২ লাখেরও অধিক আবেদনের মধ্যে ৪৫ দশমিক ৬৮ লাখেরও অধিক আবেদনের নিষ্পত্তি করা হয়েছে অনলাইনে। বর্তমানে দেশব্যাপী সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে তারা কয়েক’শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছেন। বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষামতে, অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে দ্বিতীয়।

এই অভিযাত্রায় গত ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল দিবসের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার রূপকল্প-২০৪১-এর ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি-এ চারটি মৌলিক স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। দেশের প্রতিটি নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে হবে দক্ষ ও উপযোগী, অর্থনীতির সব লেনদেন ও ব্যবহার হবে প্রযুক্তিনির্ভর, সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ও কর্মকাণ্ডসহ সর্বত্র হবে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আমাদের পুরো সমাজটাই হবে প্রযুক্তিবান্ধব।’ যার মূল হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগ।

সাধারণ নাগরিকরা যখন একটি টেকসই ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে নিজেদের তথ্য আদান-প্রদানে দক্ষ ও সক্ষম হয়, তখনই তাদেরকে ‘স্মার্ট সিটিজেন’ বলা হয়। প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যাগুলোর সমাধান ও সিদ্ধান্ত নিতে এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর যুক্ত নথি আদান-প্রদানে স্মার্ট নাগরিক এবং সিটির পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং মানসিকতা হবে এক ও অভিন্ন। আরও যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এক্ষেত্রে জরুরি তা হলো- প্রথমত, সরকারি এবং বেসরকারি খাতে তথ্য বা পরিষেবার মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগের উপায়কে রূপান্তরিত করা। সামাজিক এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিতে সমতা তৈরি করে সকলের জন্য তথ্য এবং পরিষেবায় দক্ষ ও সহজবোধ্য নিয়ম চালু করা।

দ্বিতীয়ত, শ্রমবাজারের সুযোগ, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সকল বয়সের জনসংখ্যার জন্য আজীবন ব্যবহারযোগ্য স্মার্ট অবকাঠামো তৈরি। তৃতীয়ত, স্মার্ট সিটিজেন একটি শহর বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সমৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা। স্মার্ট ইকোনমি একটি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে। সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি, স্টার্ট-আপ ও বিনিয়োগকারীর জন্য লোভনীয়, আকর্ষণীয় এবং প্রতিযোগিতামূলক উদ্ভাবনী পন্থা বাতলে দেয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে, যা সমস্ত স্টেকহোল্ডারের জন্য স্থিতিশীল এবং অনুকূল পরিস্থিতি তৈরিতে সহায়তা করে।

স্মার্ট ইকোনমিতে নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, সম্পদের দক্ষতা, স্থায়িত্ব এবং উচ্চ সামাজিক কল্যাণের ওপর ভিত্তি করে একটি টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি এমনভাবে দাঁড় করায়, যেখানে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে উৎপাদন ও প্রতিযোগিতা বাড়ায়, নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে। এতে নাগরিকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, পণ্যের গুণগত মান এবং মূল্য নির্ধারণে উন্নত বিশ্বের সমতুল্য হয় এবং মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সমতা আনে। স্মার্ট দৃষ্টিকোণ থেকে উপরোক্ত সুযোগগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে এবং তথ্যপ্রবাহে স্বচ্ছতাসহ পণ্য বেচাকেনা হয় ক্যাশ-লেস্ট্রানজেকশনে।

স্মার্ট গভর্ন্যান্স বলতে বোঝায় সহজ, জবাবদিহিমুলক, প্রতিক্রিয়াশীল এবং স্বচ্ছ শাসন। এক্ষেত্রে আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের নীতি-নির্ধারণ, পরিধান ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণসহ একটি ব্যবহারবান্ধব সরকারের রূপরেখাকে বোঝায়। স্মার্ট গভর্ন্যান্সে আরও যেসব সেবা নিহিত থাকে সেগুলো হলো- স্বচ্ছ রিপোর্টিং, সচেতনতা বৃদ্ধি, জনসাক্ষরতা ও জনসম্পৃক্ততা, আন্তঃবিভাগের সমন্বয়ে অপারেশনাল কম খরচ এবং কর্মক্ষেত্রের সর্বস্তরে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহারে নিশ্চিত করা। যাতায়াতের জন্য সমস্ত স্টেশনগুলো থাকে অত্যাধুনিক গণপরিবহণের আওতায়। রাস্তাঘাট থাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং শব্দহীন। দোকানপাট ব্যবসাবাণিজ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খুলে এবং বন্ধ হয়। সরকারি-বেসরকারি চাকরির বেতনে থাকে না পার্থক্য। থাকে না চাঁদাবাজি, অপরাধ। ফলে পুলিশ থাকে দর্শকের ভূমিকায়।

অর্থাৎ সরকার এবং সমস্ত স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সংযোগ এবং মিথস্ক্রিয়া জোরদার করা। প্রযুক্তিনির্ভর একটি স্মার্ট কৌশল অনুসরণ করে সরকার এমন একটি গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে, যেখানে সমস্ত অংশীজনের পরিষেবার গুণগত মান, স্কেল এবং সুবিধাগুলো সহজে ব্যবহার ও পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকে। এখানেও নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষতা এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রহণযোগ্যতা, স্বচ্ছতা, বিশ্বাস এবং আস্থায় সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত হয়। পরিশেষে স্মার্ট সোসাইটির প্রসঙ্গ। পৃথিবী একটি অবিশ্বাস্যভাবে উত্তেজনাপূর্ণ ও অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। ক্রমবর্ধমান ও বার্ধক্যজনিত জনসংখ্যার ফলে সৃষ্ট নানা সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ব আজ এক বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। স্মার্ট ফোন থেকে শুরু করে ব্লাড প্রেসার সেন্সর পর্যন্ত সবকিছুতেই মানুষ এমনভাবে প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে যে, গত তিন বছরে এত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য/ডাটা উৎপন্ন হয়েছে, যা সমগ্র মানব ইতিহাসে হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ‘স্মার্ট সোসাইটি’ ক্রমবর্ধমান সকল চ্যালেঞ্জ যেমন- প্রয়োজনীয় এবং মানসম্মত খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও শক্তি সরবরাহের জন্য পরিবেশগত উদ্বেগের পাশাপাশি পরিবহণ, অবকাঠামো মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকে। কারণ একমাত্র স্মার্ট সোসাইটিই এই সমস্যাগুলোর দিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নজর রাখতে পারে।

এই স্বপ্নের জগতে পৌছানোর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের জন্য গত আগস্ট ১৬, ২০২২ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে গঠিত হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’র সদস্য সংখ্যা ৩০ জন, যার মধ্যে রয়েছে পাঁচজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিবকে এ টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব করা হয়েছে।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’-এর নয়টি কার্যপরিধিও সুস্পষ্ট করা হয়েছে, যথা- অগ্রসরমাণ তথ্যপ্রযুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান; শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দিকনির্দেশনা প্রদান; স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক ও বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিধিবিধান প্রণয়নে দিকনির্দেশনা প্রদান; বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান; এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনোটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান; ব্লেন্ডেড এডুকেশন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং ফাইভজি সেবা চালু-পরবর্তী সময়ে ব্যান্ডউইথের চাহিদা বিবেচনায় চতুর্থ সাবমেরিন কেব্‌লে সংযোগের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান; রপ্তানি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মেড ইন বাংলাদেশ পলিসি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে দিকনির্দেশনা প্রদান; আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান এবং স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে দিকনির্দেশনা প্রদান। এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর/ সংস্থা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করেছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ গ্রাম, শহর, অফিস সবই স্মার্ট হবে। স্মার্ট সিটি, স্মার্ট ভিলেজ এবং স্মার্ট অফিস ধারণাকে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে এটুআই প্রকল্প। এরই মধ্যে, এটুআই প্রকল্পের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অংশীজনের সহায়তায় ‘স্মার্ট ভিলেজ’ কনসেপ্টের পাইলটিং করা হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ও নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায়।

তথ্যপ্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবনের পথ ধরে অপার সম্ভাবনার চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বিজয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া বর্তমান সরকার বহুমাত্রিক পরিকল্পনা-কর্মকৌশল গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের প্রতিশ্রুত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রায় শতভাগ দৃশ্যমান হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের’ তৃতীয় সভায় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ’ভিশন বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণার সফল কার্যকারিতা দেশকে কোন পর্যায়ে সমাসীন করবে, তা সহজেই অনুমেয়।
এ লক্ষ্যে নানা প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম ও সরকারের নানামুখী প্রায়োগিক কর্মতৎপরতা অবলোকনে দেশবাসী নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত। এ ক্ষেত্রে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে যদি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি—এ চারটি মূল ভিত্তির ওপর নির্ভর করে আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশের আশা আমরা করতেই পারি।

এটুআই সহযোগিতায় বিচারিক ব্যবস্থাকে সহজ করতে চালু হয়েছে অনলাইন কজলিস্ট, জুডিশিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং আমার আদালত (মাইকোর্ট) অ্যাপ যা আগামী ২০৪১ সালের স্মার্ট বিচারিক ব্যবস্থা করতে সক্ষম হবে। স্মার্ট ইকোনমির অংশ হিসেবে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবাস যাত্রা সহজ করতে এবং প্রবাসে যাওয়ার প্রস্তুতিমূলক কাগজপত্র ও সেবাসমূহ একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস পয়েন্ট থেকে প্রদানের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে প্রবাসী হেল্প ডেস্ক চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে এটুআই চালু করেছে ‘সাথী’ নামক একটি নেটওয়ার্ক। বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহযোগিতায় এটুআই প্রাথমিক পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তা নিয়ে এ নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু করেছে। দেশের সব পরিষেবা বিল, শিক্ষাসংক্রান্ত ফি ও অন্যান্য সব ধরনের সরকারি সেবার ফি/বিল প্রদানের পদ্ধতি সহজ ও সমন্বিতকরণে চালু হওয়া সমন্বিত পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ‘একপে’তে বিভিন্ন ধরনের করতে নতুন আটটি আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নতুন পেমেন্ট চ্যানেল যুক্তকরণ।

সরকারের এবারের ফোকাস হচ্ছে কেউ পিছিয়ে থাকবে না (leaving no one behind) যেমনটি রয়েছে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (Sustainable Development Goal-SDG) মূল কথায়। এ কারণে, ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ এর প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি’। প্রকৃতপক্ষে, আগামী ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে গেলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অগ্রাধিকার টেকনোলজি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিকস, আইওটি ও সাইবার নিরাপত্তা হবে মূল বিষয় এবং এ ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে ভিত্তি তৈরি করে গেছেন, সে পথ ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এক যুগের বেশি পথচলায় প্রমাণিত হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক উন্নয়ন দর্শন। সেই দর্শনের সফল অনুসরণের পরিক্রমায় ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বের মহাসড়কে পদার্পণে আরও এক বিস্ময়কর অভিযাত্রা স্মার্ট বাংলাদেশ। একটি আধুনিক ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির জন্য শুধু সরকার নয়, প্রয়োজন আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ।

লেখক: মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, সাবেক চীফ ফিচার রাইটার, তথ্য অধিদপ্তর।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net