নাটোরের লালপুরে টেলিভিশনের মেকানিক সোহেল হোসেন হত্যাকাণ্ডে রহস্য উদঘাটনের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ওই হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শফিকুল ইসলাম (৪৫) নামে এক ব্যক্তি আদালতে এ জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দির তথ্য উদ্ধৃত করে পিবিআই জানিয়েছে, গ্রেপ্তার শফিকুল ইসলাম তার ঘরে স্ত্রীর সঙ্গে সোহেল হোসেনকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে সোহেলকে হত্যা করেন শফিকুল। পরে তার লাশ সড়কের পাশে ফেলে দেন।
গত ১২ মার্চ সকালে ওই এলাকার একটি সড়কের পাশ থেকে শফিকুলের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সোহেল হোসেন (৩৫) লালপুরের পুরাতন ঈশ্বরদী গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে।
এ ঘটনায় সোহেল হোসেনের স্ত্রী থানায় মামলা করে। এরপর একই গ্রামের শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও তার স্ত্রী কুলসুমা খাতুনকে (২৭) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শফিকুল বুধবার সন্ধ্যায় বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পিবিআইয়ের নাটোর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সোহেল হোসেন হত্যার ঘটনায় লালপুর থানায় মামলা হয়। পিবিআই স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। তদন্তের দায়িত্ব পান পরিদর্শক ফরিদুল ইসলাম। ঘটনার তিন দিনের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত শফিকুল ইসলামকে রাজশাহীর রাজপাড়া থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্ত্রী কুলসুমা খাতুনকে লালপুরের কদিমচিলান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি গামছা উদ্ধার করা হয়। বুধবার শফিকুল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে নাটোর কারাগারে পাঠানো হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জবানবন্দির উদ্ধৃত দিয়ে বলেন, আসামি শফিকুল ইসলামের স্ত্রী কুলসুমা খাতুনের সঙ্গে সোহেল হোসেনের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। স্বামী বাজারে থাকায় কুলসুমা খাতুন ১১ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ফোন করে সোহেলকে তার বাড়িতে ডেকে নেন। শফিকুল রাত সাড়ে ৯ টায় বাজার থেকে বাড়িতে ফিরে সোহেলকে তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পান। এতে তিনি উত্তেজিত হয়ে ঘরে ঢুকে সোহেলকে প্রথমে ঘুসি মারেন। পরে গামছা দিয়ে গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করেন। সোহেলের মরদেহ বাড়ি থেকে টেনে সড়কের পাশের ভুট্টার জমির আলে ফেলে আসেন। এরপর ওই দম্পতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
ফরিদুল ইসলাম আরও বলেন, প্রথমে নিহত সোহেলের মুঠোফোন পরীক্ষা করা হয়। তার সঙ্গে যাদের ঘটনার নিকটবর্তী সময়ে কথা হয়েছে, তাদের তালিকা বের করা হয়। এতে কুলসুমার সঙ্গে তার কথা বলার প্রমাণ পাওয়া যায়। কুলসুমা ও তার স্বামী পলাতক থাকার বিষয়টি নজরে এলে সন্দেহ হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদে তারা সোহেলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।