ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়া এক পথচারী ওপর থেকে পড়া ইটের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন- এমন একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই নারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক দিপু সানা। রাজধানীর মৌচাক এলাকায় একটি বহুতল ভবনের ওপর থেকে পড়া ইটের আঘাতে এভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।
তার মৃত্যুর পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয় মরদেহ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন। দুপুরে মর্গের পাশে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় স্বামী তরুণ বিশ্বাসকে। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। পাশেই অপেক্ষা করছেন দিপু সানার সহকর্মীরা। তাদের একজন গোলাম মোস্তফা শ্রাবণ।
শ্রাবণ বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করা হোক। আইনের আওতায় আনা হোক। এই দুর্ঘটনায় অবশ্যই অবহেলা আছে। আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটব, আমি নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা চাই। আর এ ঘটনায় যারা যারা দায়ী আছে, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় মাথায় ইট পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক দিপু সানার মৃত্যু হয়। পরে সানার স্বামী তরুণ বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যায় আমার স্ত্রী শান্তিনগর থেকে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিল। রমনা থানা থেকে ফোন দিয়ে তার মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
পুলিশ বলছে, মৌচাক ফখরুদ্দীন হোটেলের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় ওপর থেকে ইট পড়লে ঘটনাস্থলে সানা দিপুর মৃত্যু হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে।
মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে হস্তান্তর
এদিকে, দিপু সানার মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিহতের স্বামী তরুণ বিশ্বাসের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এ সময় নিহতের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়না তদন্তের জন্য নিহতের মরদেহ ঢামেকে আনা হয়। তার আগে সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে মরদেহ রাখা ছিল।
নিহতের স্বামী তরুণ বিশ্বাস বলেন, রাতে রমনা থানা থেকে ফোন আসে, দিপু সানা আপনার কী হয়। তখন বলি, সে আমার স্ত্রী। বলা হয়, আপনি থানায় আসেন আপনার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে স্থানীয় সিরাজ ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গের সামনে আমার স্ত্রীর মরদেহ দেখতে পাই। এরপর পুলিশের থেকে বিস্তারিত জানতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী সদরঘাট বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। সন্ধ্যার দিকে সদরঘাট তার কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ইট কোথা থেকে এসে আমার স্ত্রীর মাথার ওপরে পড়েছে, এটা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব পুলিশের। আমাদের গ্রামের বাড়ি খুলনার সোলাদানা গ্রামে। বর্তমানে মগবাজারে ভাড়া বাসায় থাকি। আমাদের তিন বছরের একটি সন্তান রয়েছে।
রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমেনা খানম সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, বুধবার সন্ধ্যার দিকে সিদ্ধেশ্বরী মৌচাক ফখরুদ্দিন হোটেলের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে মাথায় ইটের আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তার মাথার তালুতে ২ ইঞ্চি ফাটা দাগ এবং ডান পায়ের ওপর হালকা আঁচড়ের দাগ রয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।