সিসিক নির্বাচনে বড় দুই চ্যালেঞ্জ; নতুন ১৫ ওয়ার্ড, নতুন ভোটার

:: অমিতা সিনহা ::
প্রকাশ: ২ years ago

আসছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে জনপ্রতিনিধি প্রার্থীদের। বিগত দিনের সিসিকের নির্বাচনে রাজনৈতিক নানা ইস্যু কিংবা বহু ধরণের অজুহাতের রহস্য উন্মোচন হয়েছিলো, এবার ২১ জুন সিসিকের নির্বাচনে পুরোটাই ভিন্ন চিত্র বদলে দিতে পারে নতুন ১৫টি ওয়ার্ড ও ৫টি সংরক্ষিত আসন।

এর আগে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা ছিল না প্রার্থীদের। কিন্তু আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের ভোটার আর নতুন ভোটাররা পাল্টে দিতে পারে আসন্ন সিসিক নির্বাচনের হিসেব নিকেশ।

পাঁচ বছর আগে ২৭টি ওয়ার্ডের ভোটার ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৭০৩ জন। বর্তমানে নতুন ১৫টি ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভূক্ত হওয়া আর নতুন ভোটার সংযুক্ত হলে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখের ঊর্ধ্বে। যদিও নির্বাচন অফিস এখনো নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করেনি।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নতুন ১৫টি ওয়ার্ড অন্তর্ভূক্ত হয়েছে প্রায় এক বছর ধরে। অথচ সেখানে এখনো কোনো প্রকারের সিটি কর্পোরেশনের সেবা দেওয়া হয়নি। তবে এসব নতুন ওয়ার্ডের জায়গার আচমকা দাম বেড়েছে। এর ফলে নতুন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জায়গা বিকিকিনি খুব কম করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, যে ১৫টি ওয়ার্ড নতুনভাবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, সেই সব ওয়ার্ডের এলাকার রাস্তা খুবই নাজুক অবস্থা। রাস্তা ঘেঁষে ড্রেনের ময়লা বর্জ্য পানি সমসমানভাবে তলিয়ে আছে। অল্প বৃষ্টির পানি কিংবা সামান্য পানিতেই পুরো এলাকার রাস্তায় ময়লা বর্জ্যরে ড্রেনের পানিতে তলিয়ে যাবে এমনি অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া নতুন ওয়ার্ডের এলাকায় পচাঁ ময়লা বর্জ্য ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। এলাকায় নেই সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা। পাড়া মহল্লার বাসিন্দারা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বিশুদ্ধ পানি পান করছে। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে নেই রাস্তাঘাট, নেই ব্রীজ-কালভার্ট, নেই পানি সরবরাহ আর নেই পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা।

সিটির নতুন এলাকার বাসিন্দাদের এখনো ধারণা নেই, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নতুন ওয়ার্ডের ভোটারদের ভূমিকা কি হতে পারে। কেন প্রার্থীরা রাস্তাঘাট উন্নয়ন কিংবা অন্যান্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বলে ভোটাদের দোয়ারে রীতিমত ঘুঁরছে। কেন সিসিক নির্বাচনে প্রার্থীরা নিজ থেকে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন।

আবার অনেকেই সচেতনভাবে প্রথমবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট দেবেন বলে জানান। ফলে বিশেষত্ব ১৫টি ওয়ার্ডে ভোটারদের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্তির কোনো ফায়দা খোঁজে পাচ্ছেন না। এসব ভোটার ভেবে চিন্তে ভোট দেবে আসছে সিসিক নির্বাচনে। ফলে তারাই নীতি নির্ধারক ভোটার হবেন আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে।

পরিদর্শনকালে ৩৭নং ওয়ার্ডের টুকের বাজারের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. পারভেজ আহমদ (৪৫) প্রতিবেদককে বলেন, আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছি। এখন নতুন ওয়ার্ড থেকেই কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। এই এলাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এলাকার রাস্তার ড্রেনের অবস্থা খুবই নাজুক। একটু পানিতে এলাকায় আবর্জনার পানি মূল রাস্তায় তলিয়ে হাঁটু পানি হয়ে যায়। তাই আমি নির্বাচিত হলে রাস্তা উন্ননয়সহ ড্রেনের দুর অবস্থা দুরীকরণ করবো বলে ভোটাদের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছি। তাই নির্বাচন বিজয়ী হতে ভোটারদের কাছে ভোট চাচ্ছি। একই এলাকার এইচ এস সি পডুয়া নতুন ভোটার মো. এহসানুল হক নাদিম বলেন, এলাকায় অনেক মানুষ সিটি নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া এই এলাকার ভোটাররা প্রথমবার ভোট দেবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। যাকেই ভোট দিতে যাবো, ভেবেচিন্তে যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবো। তবে এখনো এলাকায় যোগ্য প্রার্থীকে চোখে পড়েনি। আর নগর পিতা হিসেবে যদি ভোট দিতে যাই, তবে উন্নয়ন কর্মকা-কে মাথায় রেখে মেয়র পদে ভোট দিতে যাবো।

সত্তর বয়সের বাচ্চু বিবি বলেন, সামনে নাকি নির্বাচন। শুনেছি আমাদের এলাকা নাকি সিটি হয়েছে। কিন্তু এখনো আমরা কোনো উন্নত সেবা পায়নি। এখনো আমরা বস্তির মতো পরে আছি। একই স্থান থেকে মোদি দোকানদার আমেনা বেগম(২৫) জানান, নির্বাচন আসছে। কিন্তু কিসের নির্বাচন আমরা জানিনা। এখানে কি হয় আমি কিছুই বুঝিনা।

একই বিষয়ে ওই এলাকার সরকারি স্কুলের চাকরিজীবি মো. বাবুল মিয়া (৩০) বলেন, বছর খানিক হয়েছে এই এলাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় হয়েছে। কিন্তু এখনো সিটি থেকে কোনো প্রকারের সেবা দেওয়া হয়নি। আমরা আমাদের সামর্থ্যনুযায়ী জীবন-জীবিকা করে যাচ্ছি।

তবে সিটি হওয়ার পর জায়গার দাম বেড়েছে। আগে ডিসিমেল প্রতি জায়গা বিক্রি হত তিন বা /সাড়ে তিন লাখ টাকা। এখন দ্বিগুণ বেড়েছে। অন্যান্য সিটিতে যেসব সেবা দেওয়া হয়, সেই সব সেবা এলাকায় এখনো পৌছেনি। শুধু প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা দেখছি।

একই পরিবারের গৃহিনী দৌলাত বেগম (৫০), রিয়া বেগম (২২) ও তাসলিমা বেগম (২৫) জানান, আগে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। সেখানে ভোট দেওয়ার পর বিজয়ী প্রার্থীরা নিজেরাই সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। আমাদের আর তাকিয়েও দেখে না। এসব নির্বাচনে ভোট দিয়ে কি লাভ। এলাকায় কত ধরণের সমস্যা থাকে। তারও ওরা খবর রাখেনা। সময় বলে দেবো নির্বাচনে ভোট দিতে যাবো কিনা।

এদিকে কুমার গাঁও এর ৩৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী জয়নাল আহমদ (৩০) বলেন, এই এলাকা সিটির আওতায় হওয়ার পর থেকে সিটি থেকে বর্তমান মেয়র আরিফ নিজে পরিদর্শন করেছেন। এলাকায় বড় সমস্যা হচ্ছে রাস্তা। অল্প পানিতেই হাটু পানি হয়ে জলাবদ্ধতা হয়ে যায়। এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য এক ওয়ার্ড থেকে ৮/৯জন কাউন্সিলর আর ১০/১৫জন সংরক্ষিত আসনের জন্য প্রার্থী হয়েছে। কার কি যোগ্যতা এখনো কেউ ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। তবে এই এলাকা সিটির আওতায় হয়ে যাওয়ায় জায়গার দাম বেড়েছে। তাই বেশিভাগ স্থানীয়রা জায়গা বিক্রি করছেন না।

নতুন ভোটার আমিনুল ইসলাম (১৯) ও আরিফুল হক (২০) বলেন, সিটি নির্বাচনে নতুন ভোটার হয়ে প্রথম ভোট দিতে যাবো এলাকার উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে। যে প্রার্থী এলাকা ও সিটির উন্নয়ন অগ্রগতি দেখাতে পারবে, তাকেই বিবেচনা করবো ভোটের দিন।

একই স্থানের বাসিন্দা কৃষি জীবি কামাল আহমদ (৩২) বলেন, আমরা কখনো দেখিনি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এবার দেখবো ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে। এলাকার ভালো মানুষকেই আমি ভোট দেবো।

অপর দিকে রায়নগরের ১৯নং ওয়ার্ডের নতুন ভোটার ইয়াসিন আরাফাত (২৩) বলেন, আমি সিটির বাসিন্দা হয়ে দেখেছি এলাকায় কোনো প্রার্থী কিভাবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। তাই আমি সিটি নির্বাচনে তাকেই ভোট দেবো, যারা রাস্তা, পানি, কলনির সমস্যা সমাধান করতে পারে। আর উন্নয়নের ধারা সিটিকে উন্নত আধুনিক সিটিতে পরিণত করতে পারে। সিলেট শহরের যাতে জলাবদ্ধতা আর বিশৃঙ্খলা পরিবেশ না হয় এমন ব্যক্তিকেই ভোট দেব।