সি‌লেট পা‌চ্ছে নতুন নগর‌পিতা

:: সিলেট ব্যুরো ::
প্রকাশ: ২ years ago

সি‌লেট সিটি করপোরেশনের পঞ্চম নির্বাচনে কে হ‌চ্ছেন নগর পিতা? আওয়ামী লীগ না‌কি জাতীয় পা‌র্টির প্রার্থী হাস‌বেন বিজ‌য়ের হা‌সি। মেয়র পদ‌টি কি পুনরুদ্ধার কর‌তে পার‌বে আওয়ামী লীগ? না‌কি তৃতীয়বা‌রের ম‌তো বি‌রো‌ধি শি‌বি‌রেই প্রত্যাবর্তন হ‌বে? এ আ‌লোচনা নি‌য়েই জমজমাট শেষ মুহু‌র্তের নির্বাচনী আ‌লোচনা। ত‌বে যি‌নিই বিজয়ী হন না কেন নগরবাসী এবার পাচ্ছেন একজন নতুন মেয়র।

বিএন‌পি জোট সরকা‌রের আম‌লে প্রভাবশালী মন্ত্রী সাইফুর রহমানের পছ‌ন্দের প্রার্থীর বিরু‌দ্ধে ২০০৩ এবং ওয়ান ই‌লি‌ভে‌নের পর সেনা সম‌র্থিত সরকা‌রের আম‌লে ২০০৮ সা‌লে কারাগা‌রে বন্দী বদরউ‌দ্দিন আহমদ কামরান‌ দুবার নির্বা‌চিত হ‌য়েছি‌লেন।

প্র‌তিকুল প‌রি‌বে‌শে জয়ী হ‌লেও অনুকুল প‌রি‌বে‌শে নির্বাচ‌নে আওয়ামী লীগ সি‌লে‌টের মেয়র‌শিপ‌টি ধ‌রে রাখ‌তে পা‌রে‌নি। প‌রের দুবার ২০১৩ এবং ২০১৮ সা‌লে নিজ দলীয় সরকা‌রের আম‌লে ভরাডু‌বি ঘ‌টে কামরা‌নের। য‌দিও আওয়ামী লীগের দুর্গ হি‌সে‌বে প‌রি‌চিত সি‌টি ক‌র্পো‌রেশনে নি‌জে‌দের কল‌হে মেয়র‌শিপ‌টি প্র‌তিপক্ষ‌কে উপহার দি‌য়ে‌ছে ব‌লে বিশ্বাস ক‌রে দল‌টি। এই সু‌যো‌গে বিএনপির কে‌ন্দ্রিয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী পদ‌টি বা‌গি‌য়ে নেন। বর্তমান সরকারের অধীনে সকল নির্বাচন বর্জণের ধারাবাহিকতায় এবারে প্রার্থী হননি বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ফ‌লে সি‌লে‌টের নগর‌পিতার প‌দে আর হে‌ট্রিক বিজ‌য়ের রেকর্ড করা হয়‌নি।

২০২০ সা‌লের ১৫ জুন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান করোনা আক্রান্ত হ‌য়ে মারা যাওয়ায় নতুন প্রার্থী ঘোষণা ক‌রে আওয়ামী লীগ। এবার নৌকার নতুন মাঝি হি‌সে‌বে ম‌নোনয়ন দেওয়া হয় প্রবাসী নেতা আ‌নোয়ারুজ্জামান চৌধুরী‌কে।

২০০৩ সালের ২০ মার্চ বিএন‌পি জামায়াত জোট সরকা‌রের আম‌লে অনুষ্ঠিত হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন। নির্বাচনে চারদলীয় জোটের সিলেট জেলা আহবায়ক এমএ হককে প্রার্থী করেছিলো বিএনপি জামায়ত জোট। বিএনপির সব ধরণের কৌশলকে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এমএ হক পেয়েছিলেন মাত্র ৩৪ হাজার ভোট।

সি‌সি‌কের দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ৪ আগষ্ট ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সরকারের আমলে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান দ্বিতীয়বারের মতো সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। দুর্নীতির অভিযোগে কুমিল্লা কারাগারে বন্দী কামরান নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৮৩ হাজার ৩৩৯ ভোট বেশি পান। নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে কামরান পান এক লাখ ১৫ হাজার ৪৩৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক বিএনপি নেতা ও সম্মিলিত নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী আ. ফ. ম কামাল এডভোকেট টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে পান ৩২ হাজার ৯৭ ভোট। আর সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি জোট সমর্থিত প্রার্থী এম. এ হক মাছ প্রতীক নিয়ে ২৩ হাজার ৪৮৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।

তৃতীয় নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে মেয়র পদে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি– সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। ‘পরিবর্তন’ আওয়াজ তুলে আরিফুল হক চৌধুরী ৩৫ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে কামারানকে হারিয়ে দেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আরিফুল হক পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পান ৭২ হাজার ২৩০ ভোট।

২০১৮ সা‌লের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত ৪র্থ নির্বাচনে মাত্র ৬ হাজার ১৯৬ ভোট বেশি পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করেন আরিফ। তার প্রাপ্ত ভোট ৯২ হাজার ৫৯৩ । অন্যদিকে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রাপ্ত ভোট ৮৬ হাজার ৩৯৭ ভোট।

তৎকালীন সিলেট পৌরসভা থেকে বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের ১৪৫ বছরের ইতিহাসে টানা তিন বার কেউ চেয়ারম্যান বা মেয়রের পদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। আরিফের নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে ইতিহাসের সেই ধারা অব্যাহত থাকলো; নতুন একজন নগরপিতা পা‌চ্ছেন।

এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আ‌ছেন, আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা), জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহ জাহান মিয়া (বাস), মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট) ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা (হরিণ)।

বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর উপর হামলার প্রতিবাদে নির্বাচন বর্জন করে মাঠ ছাড়েন মাহমুদুল হাসান। এছাড়া শাহ জাহান মিয়া আপিল করে ও মোশতাক আহমেদ উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন। ছালাহ উদ্দিন রিমন ছাড়া বাকি সবাই প্রথমবারের মত মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ত‌বে নৌকার মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও লাঙলের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলই ‌কেবল র‌য়ে‌ছেন আলোচনায় রয়েছেন।

নির্বাচনে জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, নগরবাসী ঝড়বৃষ্টি বা যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করবেন।

লাঙল প্রতী‌কের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল অ‌ভি‌যোগ ক‌রেন, প্রশাসন তার শেষ নির্বাচনী পথসভায় বাঁধা দিয়েছে। তিনি বলেন, লাঙলের গণজোয়ার উঠেছে। যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন তারা, এই গণজোয়ারকে থামাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। লাখো ভোটের ব্যবধানে তিনি নির্বাচিত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে বুধবার সকাল ৮টায় নগরীর পাঠানটুলা শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আনোয়ারুজ্জামান সপরিবারে ভোট প্রদান করবেন। সকাল ৯টায় নগরীর আনন্দ নিকেতন কেন্দ্রে ভোট দেবেন নজরুল ইসলাম।

সাধারণ ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকায় ২৭৩ জন থাকলেও নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের প্রার্থীতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাসার সামনে সশস্ত্র মহড়া দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। এরপর জামিন পেলেও উচ্চ আদালতে গিয়েও তিনি প্রার্থীতা ফিরে পান।

সিলেট/ অমিতা সিনহা/ ২০ জুন ২০২৩।