সিলেটে কোরবানীর পশু বিক্রি জমে উঠেছে

:: অমিতা সিনহা ::
প্রকাশ: ১ বছর আগে

এবারও সিলেটে শেষ মুর্হুতে পশুর হাটে ভীড় বেড়েছে ক্রেতাদের। আসন্ন কোরবানী ঈদকে কেন্দ্র করে সামর্থ্যরে মধ্যে পছন্দের গরু ক্রয় করতে পশুর হাটে দামাদামি করে যাচ্ছে। তবে ডেকা (ষাড়) গরুর দিকে বেশ চোখ পড়েছে ক্রেতাদের।

সিলেট শহরের প্রায় ৪৫টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসেছে। আর এই পশুর হাট ছাড়াও ক্রেতারা খামারীর দিকেও চোখ বুলিয়েছে। স্বাস্থ্য সম্মত তরতজা গরুর কিনতে এই পশুর হাট থেকে ওই পশুর হাটে ঘুরে যাচ্ছে অন্তিম সময়ে এসে। স্বাদ আর স্বাদ্ধের মধ্যে যেন ঠিক মতো কোরবানি পশু ক্রয় করতে পারে তার জন্য এতো ঘুরপাক করছেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষেরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সিলেটের কাজিরবাজার পশুর হাট, টিলাগড় পশুর হাট, মিরাবাজার পশুর হাট, শিবগঞ্জ পশুর হাট ছাড়াও সিলেট প্রায় ৪৫টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। ওই পশুর হাটগুলোতে সকাল থেকে মধ্যরাত অবদি গরু, ছাগল, হাঁস ও মরগিকে নিয়ে চলছে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে দামাদামি। তবে কোরবানি ঈদের জন্য গরুর দাম অতিরিক্ত চড়া করেছেন ব্যবসায়ীরা। যার দরুণ এক লাখের মধ্যে পছন্দের গরু কিনে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে সিলেটের পশু হাটের ব্যবসায়ীরা। আর এসব বাজারে গরুর সাইজের উপর নির্ভর দাম। কোনোটি ১ লাখ টাকা, কোনোটির ৭০ হাজার টাকা, কোনোটি ২ থেকে ৬ লাখ টাকার মতো।

সিলেট শহরের শিবগঞ্জের খরাদিপাড়া গরু খামারি ব্যবসায়ী আব্দুল গাফ্ফার প্রতিবেদককে বলেন, আমার খামার থেকে এখন পর্যন্ত ৪০টির মতো গরু ক্রয় হয়েছে। সবগুলো গরু ক্রয় হয়েছিলো আসছে কোরবানি ঈদের জন্য। খামারে পশুর চাহিদা হওয়ার কারন অনেকের বাড়িতে জায়গা হয়না কোরবানি পশু রাখার জন্য। কিন্তু এখানে কিনার পরও রাখার জায়গা আছে, তাই ক্রেতাদের আগ্রহ অন্য রকম। তাছাড়া খামারে পশুর যতœ বাড়তি থাকায় স্বাস্থ্য সম্মত ও মান সম্মত হয়। এখন খামারে আছে ৩০টির মতো গরু।

কাজির বাজারের পশু হাটের বিক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, সিলেটে প্রবাসী ক্রেতাদের চাহিদা আছে কিন্তু সাধারণ মানুষ দাম কষাকষি করতে দেরি করছে। শেষ সময়ে এসে এখন একটু বিকিকিনি হচ্ছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন পশুর হাটা সূত্রে জানা যায়, সিলেটে যেসব গরু কোরবানি ঈদের জন্য আনা হয়েছে সেগুলো রাজশাহী, নওগাঁ, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, সুনামগঞ্জ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে। কেউ ট্রাক কিংবা পিকাপ যোগে নিয়ে আসছে। এসময় অনেকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিও করে যাচ্ছে।

বিক্রেতা আলমগীর হোসেন জানান, শুরু দিকে লোকজন আসলেও দরদাম করে চলে যায়। কিন্তু এখন শুধু দরদাম নয় কিনেও নিয়ে যাচ্ছে শেষ সময়ে এসে। এদিকে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী সিলেটের লোকজনের কুরবানির চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত গবাদিপশু এবার স্থানীয় বাজারেই রয়েছে।

তাদের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগে দুই লাখ ১২ হাজার ৯৯৯টি কুরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৬৫ হাজার ৮৯৬টি, মৌলভীবাজার জেলায় ৩৫ হাজার ২৮, হবিগঞ্জে ৫৪ হাজার ৭০৮ এবং সুনামগঞ্জে ৫৭ হাজার ৩৬৭ কুরবানিযোগ্য পশু রয়েছে।

সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মু. আলমগীর কবির বলেন, গত বছরের থেকে এবার সিলেট বিভাগে পশুর সংখ্যা বেশি। স্থানীয় ও খামারিদের কাছে থাকা কুরবানিযোগ্য পশু মিলিয়ে চাহিদা অনেকটাই পূরণ হয়ে যাবে। আমাদের চাহিদা পূরণ করে সিলেটের পশু দেশের অন্যান্য জায়গায় যাবে বিক্রির জন্য।

এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, সিলেট মহানগরে ৭টি এবং জেলায় ৩৮ টি পশুরহাটের অনুমদন দেয়া হয়েছে। এর বাহিরে কোথাও কোরবানির পশুরহাট বসার অনুমতি নাই। কোথাও অবৈধভাবে হাট বসলে আমরা ব্যবস্থা নিব।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, জেলা প্রশাসনের অনুমোদন দেওয়া নির্ধারিত ৪৫ স্থানের বাইরে কোথাও কোরবানির পশুর হাট বসার সুযোগ নেই। এরপরও কোথাও অবৈধভাবে হাট বসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান খান জানান, সিলেট নগরীতে আট স্থানে হাট বসানোর প্রস্তুতি ছিল। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সাত স্থানে হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

 

সিলেট/ অমিতা সিনহা/ ২৭ জুন ২০২৩