উসমান বিন আবদুল আলিম:
‘সালাম’ মূলত একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ- শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, আরাম, আনন্দ ইত্যাদি। সালাম শান্তির প্রতীক ও একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামী অভিবাদন। মুমিন-মুসলমানের মধ্যকার অভিবাদনের একমাত্র মাধ্যম। সালাম রাসূল সা:-এর সুন্নতগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। সালামের উপকারিতা, গুরুত্ব, তরিকা ইত্যাদি প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। সেই নিমিত্তে সালাম সম্পর্কীয় বক্ষমাণ রচনার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
সালামের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। যা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হবে।
সালাম শান্তির বার্তা পৌঁছায় : আল্লাহ তায়ালা বলেন, অতঃপর যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করো, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও।’ (সূরা নূর ২৪:৬১)
সালামকারীকে আল্লাহ হিফাজত করেন : আল্লাহ তায়ালা সালামের প্রচলনকারীর জন্য জিম্মাদার হয়ে যান। তাদের হিফাজতে রাখেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তিন শ্রেণীর লোকের জিম্মাদার হন। তাদের মধ্যে প্রথম হলো, যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। অর্থাৎ ঘরে বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাইবোন, ছোট-বড় যেই থাকুক না কেন; তাদের সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। আল্লাহ তায়ালা ওই বাড়িকে এবং ওই ব্যক্তিকে হিফাজত করেন।’ (আদাবুল মুফরাদ-১০৯৪)
সালাম দিলে সওয়াব হয় : পরস্পর সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ে রয়েছে অনেক সওয়াব। সালামের সওয়াব লাভের নমুনা প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর হাদিসে পাকে উঠে এসেছে, হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা: বর্ণনা করেন, একবার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে এসে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (একটু বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’ তখন আল্লাহর রাসূল সা: তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (আরো একটি শব্দ বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু’। তখন রাসূলুল্লাহ সা: তার (সালামের) উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’ (সুনানে তিরমিজি-২৬৯০) ইমাম তিরমিজি রহ: এই হাদিসের মান ‘হাসান’ বলেছেন।
সালামের দ্বারা জান্নাত মেলে : হজরত আবদুুল্লাহ বিন সালাম বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি, ‘হে লোক সকল! তোমরা সালামের ব্যাপকভাবে প্রচার প্রসার করো। (ক্ষুধার্তদের) আহার করাও। আত্মীয়স্বজনদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন ওঠে নামাজ পড়ো। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’ (তিরমিজি : ২৪৮৭)।
সালামে মুহাব্বত বৃদ্ধি পায় : এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘…আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা বলে দেবো না! যা করলে তোমাদের পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? (তা হলো) তোমরা তোমাদের পরপস্পরের মাঝে ব্যাপকভাবে সালামের প্রচার প্রসার করো।’ (মুসলিম : ১/৫৪ হা: ৫৪, তিরমিজি : ২/৭ হা: ২৬৮৯)
সালাম দিলে অহঙ্কার দূর হয় : যে প্রথমে সালাম দিলো সে যেন অহঙ্কারমুক্ত থাকলে। ইমাম বায়হাকি রহ: তার নিজ গ্রন্থ ‘শুআবুল ঈমানে একটি হাদিস বর্ণনা করেন- হজরত আবদুুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, তোমাদের যে প্রথমে সালাম দেবে, সে যেন অহঙ্কার থেকে মুক্ত থাকল।’ (মেশকাত : ৪৬৬৬, শুআবুল ইমান : ৮৭৮৫)
আল্লাহ তায়ালা আমাকে, আপনাকে উপরোল্লিখিত হাদিসগুলোর ওপর আমল করে রাসূল সা:-এর সুন্নাত আঁকড়ে ধরে সুন্নাত অনুযায়ী জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: মোহাদ্দিস, দারুল উলুম মোহাম্মদপুর কওমি মাদরাসা, চাটমোহর, পাবনা।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। আপনিও লিখুন।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net