সামাজিক সংগঠন কেন করবেন | আহমেদ হানিফ

:: আহমেদ হানিফ ::
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

রক্তে মাংসে গড়া আমাদের শরীরটাকে আমরা মানবসত্তা বলতে পারি।মানুষের শরীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিকশিত হয় তার জীবসত্তা।কথিত আছে প্রাণ থাকলেই প্রাণি বলার এখতিয়ার আছে তবে মানুষ বলার ক্ষেত্রে ভাবতে হবে।কারণ সমাজে অমানুষ নামক একটি প্রত্যয় আছে যারা রক্ত মাংসের শরীর নিয়েও মানুষ হতে পারে না।

বহুবিধ কারণ রয়েছে অমানুষ হয়ে উঠার ক্ষেত্রে, চলনে,বলনে জানান দিয়ে যায় পৃথিবীর সব মানুষ সমমানসিকতার হয়ে উঠেনা-তাই বলা হয় মন থাকলেই সে মানুষ হবে।তবে, মনস্তাত্ত্বিক সত্তার গঠনের আগে জানতে হবে তার চারপাশের অবস্থা,আত্মীকৃত চিন্তার বিষয়গুলো কতটা মানবহিতৈষীমূলক।মানুষের জৈবিক সত্তার বিকাশের মাধ্যমে শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন গুলো সহজেই অনুমেয় হলেও আপনি সহজে উপলব্ধি করতে পারবেন না তার মানবিক সত্তার বিকাশের ধারাটি।এই অদৃশ্য ভালোত্বের জানান দিতে হলে আমাদের অনেক গুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়।ভালোত্বের মেলবন্ধনের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় চারপাশের অবস্থাকে,তবেই খানিকটা বিবেচনায় আসতে পারে মানুষ হিসেবে সে কতটা মানবহিতৈষী।

এই কঠিনতর কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি মানব সত্তা থেকে বিকশিত হয়ে সামাজিক সত্তায় রূপান্তরিত হতে পারে।
সামাজিক সত্তা সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে পারা যায় একজন মানুষ হিসেবে সে কিভাবে সমাজের উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে মানুষের অন্তরে অবস্থানের মাধ্যমে নিজেকে স্বকীয়তা জানান দিতে পারায় হলো সামাজিক সত্তার উপস্থিতি।
আপনি যদি নিজেকে সামাজিক মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে কি হবে?

এমন প্রশ্ন আসতেই পারে তাহলে উত্তর কি হবে?
আচ্ছা, এমন চিন্তা থেকেই বলতে পারা যায়-
আপনি যদি সামাজিক মানুষে রূপান্তরিত হতে পারেন তবে,
আপনি নিজেকে আর একজন ভেবে ‘আমি’ বলবেন না-
আপনার উত্তর আসবে ‘আমরা’, আমাদের সবকিছু
মানুষের জন্য কিছু করার প্রেরণা পাবেন
ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে সামষ্টিক চিন্তা করবেন
মানুষ আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে
আপনার সামষ্টিক চিন্তায় তারাও আমরাত্বের প্রয়োগ করবে।
সামাজিক সত্তার বিকাশের ফলে আমাদের নানাবিধ পরিবর্তন সাধিত হলেও আমাদের জানা দরকার আমরা কিভাবে সামাজিক মানুষে পরিণত হতে পারবো?
আমরা কি কোনো অলৌকিক ক্ষমতা বলে এইসব গুণাবলি অর্জন করতে পারবো।
অবশ্যই না,
তাহলে মানবিক গুণাবলি অর্জনের জন্য আমাদের কার কাছে দ্বারস্থ হতে হবে,কিভাবে গুণাবলি রপ্ত করতে পারবো তাহলে শুনুন-

সামাজিক সংগঠন কি?
সমাজের ভালোর জন্য সমাজের কতিপয় সমাজ চিন্তকদের সমন্বয় করে যে প্রতিষ্ঠানের সূচনা হয় তাকে সামাজিক সংগঠন বলতে পারি।
সামাজিক সংগঠনের মূল কাজ যে সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখা হবে এমনও না সামাজিক সংগঠনের কাজ ব্যক্তিত্বের বিকাশ করানোও হতে পারে।
সামাজিক সংগঠনের কাজের মধ্যে আমরা দেখতে পাই,
খেলাধুলা, পাঠাগার, বৃক্ষরোপণ, দুঃস্থ মানুষের সহায়তা, বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রকাশনী এমর বহুবিধ কাজ করে থাকেন।
সমাজের মানুষের মাঝে ঐক্যের সমন্বয় হয় সংগঠন দ্বারা।

সামাজিক সংগঠনের উপকারিতা:
আপনি একা চাইলে একটা সমাজ পরিবর্তন করতে পারবেন না,একার পক্ষে কখনো দশ জনের কাজও করা সম্ভবপর না।সমবায় নীতি আপনি অগ্রসর হতে পারলে আপনি দশের সাথে মিলে সমাজের জন্য কিছু করতে পারবেন।
সামাজিক সংগঠন করার ফলে আপনার মধ্যে বিরাজমান একাকিত্বের লাঘব হবে, আপনি ব্যক্তিত্বের বিকাশ করতে পারবেন।আপনার মেধা যোগ্যতার বলে নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করতে পারবেন।
পারবেন সমাজ সংস্কারক হিসেবে ভূমিকা রাখতে, পারবেন মানুষের কল্যাণে কাজ করতে।
সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে আপনি শিখতে পারবেন-
পরমতসহিষ্ণুতা লাভ করতে
সামষ্টিক স্বার্থের কাছে নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিতে
নেতৃত্বের বিকাশ করতে
গণতান্ত্রিক চিন্তায় বিশ্বাসী হতে
পরচর্চা থেকে বিরত হতে সামনে অগ্রসর হতে
নিজের সুকুমারর্যের বিকাশ করতে

সামাজিক সংগঠন অপকারিতা:
সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে আপনি সমাজের মানুষের জন্য কিছু করতে পারবেন তা ভালো কথা তবে আপনি যদি এটাকে মূল ভেবে ক্ষমতার লোভে নিজেকে স্বার্থপর করে তুলেন তাহলে আপনার দ্বারা সমাজের মানুষের ক্ষতিই বেশি হবে।
আপনি অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের মাধ্যমে নিজের মূল লক্ষ্য থেকে হারিয়ে যেতে পারেন, আপনার স্বার্থ কেন্দ্রিক চিন্তার ফলে সমাজের বিরাট ক্ষতিও হতে পারে-
আপনি যদি নিজের স্বার্থের সিঁড়িতে বসে সামাজিক উন্নয়ন চিন্তা করেন তাহলে-
আপনার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য থেকে বের হয়ে যাবেন
দলাদলি, মারামারি হতে পারে
সমাজের মানুষের অমঙ্গল হতে পারে
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সামাজিক সংগঠন কেন করবেন?

আমি আগেই বলেছি সামাজিক সংগঠনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
আপনি বুঝতে পারছেন সামাজিক সংগঠন কি,তার বিকাশের নানা দিক।
এবার বলি আপনার সামাজিক সংগঠন করার দরকার কেন?
আপনার মাধ্যমে সমাজের নানান উন্নয়ন হবে যদি চিন্তা করতে পারেন তাহলে আপনার দ্বারাই সামাজিক সংগঠন হবে।
আপনি নিজেকে সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন।
ভালোত্বের গুণাবলি দিয়ে দূর করতে পারবেন সামাজিক নানান অসামাজিক কার্যকলাপ।
নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশ করতে চাইলে,সমাজের উন্নয়নের সারথি হতে চাইলে আপনার সামাজিক সংগঠন করা দরকার।
সর্বোপরি বলতে চাই,
নিজের মেধা ও যোগ্যতার সমন্বয়ে, মানুষের কল্যাণের প্রয়াসে যদি কিছু করতে চান তবে সংগঠন করুন।
কারণ, আপনার মাধ্যমেই তবে সমাজের মানুষের অমঙ্গল হবে না, আপনি মানুষের মঙ্গলের জন্য পদক্ষেপ নিবেন।
তাই, সামাজিক সত্তার বিকাশের জন্য হলেও আপনি সামাজিক সংগঠন করবেন।

 

লেখক: আহমেদ হানিফ; শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]