ব্রাজিলের জার্সি ‘হলুদ’ কেন?

::
প্রকাশ: ২ years ago

স্পোর্টস ডেস্ক: 
বিশ্বকাপের আগেরদিনের খেলার ভিডিওতে হয়তো দেখেছেন ব্রাজিল সাদা রঙের জার্সি পড়ে খেলছে। এরপর ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের জার্সির রঙ ‘হলুদ’ হওয়ার পেছনে রয়েছে অন্যরকম এক ঘটনা।

১৯১৪ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় ব্রাজিলের। তখন নেইমারদের পূর্বসূরীরা সাদা রঙের জার্সি গায়ে মাঠে নামতেন। জার্সির গলা ও হাতার শেষপ্রান্ত রাঙানো ছিল নীল রঙে। সেই জার্সি পরে ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকা জয় করে ব্রাজিলিয়ানরা। সেলেসাওদের ফুটবল জয়ের ইতিহাস শুরু হয় ১৯১৯ সালের কোপা আমেরিকা জয়ের মাধ্যমে। এরপর ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপের মঞ্চেও তাদের সাদা জার্সি গায়ে দেখা গেছে। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সাদার ওপর নীল ডিজাইনের জার্সিতেই খেলেছে তারা। ১৯৫০ সালের মারাকানা ট্রাজেডির পর জার্সির ডিজাইন ও রঙ বদলের সিদ্ধান্ত নেয় ব্রাজিল।

 

মারাকানা ট্রাজেডি কি?
ফুটবল বিশ্বকাপের শুরু থেকে টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও শুরুতে ভালো করতে পারেনি ব্রাজিল। ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিল বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকে। এর পরের বার ব্রাজিল বিদায় নেয় প্রথম পর্ব থেকে এবং এর পরে বিশ্বকাপে ৩য় স্থান দখল করে ব্রাজিল। এরপর ১৯৫০ সালের ব্রাজিল বনাম উরুগুয়ের ফাইনাল ম্যাচে ঘটে যায় এক বিরাট ঘটনা যা ফুটবল ইতিহাসে ‘মারাকানা ট্রাজেডি’ নামে পরিচিত।

ব্রাজিল বনাম উরুগুয়ে ম্যাচ। ফাইনাল ম্যাচ বলে ছিল না কোনো আয়োজন। যে দল বেশি পয়েন্ট নিয়ে শেষ করবে তারাই জিতবে বিশ্বকাপ- এই ছিল নিয়ম। ১৬ জুলাই মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিল বনাম উরুগুয়ে ম্যাচটিই ছিল মূলত ফাইনাল। ঘরের মাঠে জুলে রিমে ট্রফি জয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল সেলেসাওরা।  কানায় কানায় পূর্ণ ছিল সেদিনের মারাকানা। অফিসিয়াল রেকর্ডে দর্শক সংখ্যা ছিলো ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৪ জন। বেসরকারি হিসাব বলছে, দুই লক্ষাধিক দর্শকের সমাগম হয়েছিল সেদিন রিও ডি জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়াম। তারা ধরেই নিয়েছিল কাপ এবার তাদের হাতেই উঠবে। দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়ে ৪৭ মিনিটে ফ্রিয়াসার গোলে এগিয়ে যায় আয়োজক দেশ ব্রাজিল। উৎসবে মেতে ওঠে দেশটি। ৬৬ মিনিটে শিয়াফিনোর গোলে উরুগুয়ে সমতায় ফিরলেও ব্রাজিলিয়ানদের আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। কারণ খেলা ড্র হলেও ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন। তবে স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিল উরুগুয়ের ঘিঘিয়ার। তার ৭৯ মিনিটের গোলে ব্রাজিলিয়ানদের কাদিয়ে শিরোপা উল্লাসে মাতে উরুগুয়ে।

হারের যন্ত্রণা সেদিন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল ব্রাজিলিয়ানদের। দর্শকদের মারাকানার ছাদ থেকে লাফিয়ে জীবন দেওয়ার ঘটনাও শুনতে পাওয়া যায়। এরপরই এই সাদা নীল জার্সিকে অভিশপ্ত জার্সি ভাবতে শুরু করে ব্রাজিলিয়ানরা। শুরু হয় নানা সমালোচনা। এরপর নতুন জার্সির জন্যে নড়েচড়ে বসে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন। তারা নতুন জার্সি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়। সাদা নীল জার্সি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না বলেও অভিযোগ আনা হয়। জার্সি ডিজাইনের জন্য চাওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় হলুদ, সবুজ, নীল ও সাদা রঙ থাকতে হবে। যা একইসঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করবে দেশের পতাকার।

ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ মিনাস গেরাইসের জার্নাল ‘ফুলিয়া’র তথ্য অনুযায়ী, দেশের জার্সিতে প্রাণশক্তি যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল ফুটবল কনফেডারেশন। জার্সির ডিজাইনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব পায় ব্রাজিলের সংবাদপত্র ‘কোরিয়ো দ্য মানহা’। বলে দেওয়া হয়, হলুদ, সবুজ, নীল এবং সাদা ছাড়া অন্য রঙ ব্যবহার করা যাবে না।

বিজ্ঞপ্তির পর ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনে অসংখ্য জার্সির ডিজাইন জমা পড়ে। সেখান থেকে বর্তমান হলুদ জার্সি বেছে নেওয়া হয়। ১৯৫০-এর দশকে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল দলকে ক্যানারিনহা বলা হতো। ক্যানারিনহা শব্দটি ক্যানারি  শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ হলদে। সেলেসাওদের এই নামের অর্থের সাথে মিল রেখে হলুদ রঙের জার্সিকে চূড়ান্ত করে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন। মজার ব্যাপার এই জার্সি পরেই ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল।

এরপর থেকে ব্রাজিলিয়ানদের কাছে এই হলুদ জার্সি অনেক বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করে। জার্সি প্রসঙ্গে ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার বলেছেন, হলুদ জার্সি পরলে ব্রাজিলিয়ানরা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বলাবাহুল্য এই জার্সি পরেই বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিল।