সাঈদের বয়স ৩০ বছর, বিয়ে করেছেন ১৪টি, কিভাবে?

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৮ মাস আগে
মো. আবু সাঈদ। ছবি: সংগৃহীত

কখনও বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট, কখনও পুলিশের বড় কর্মকর্তা পরিচয়ে গত চার বছরে ১৪টি বিয়ে করেছেন নাটোরের গুরুদাসপুরের মো. আবু সাঈদ।

৩০ বছর বয়সী সাঈদ বিয়ের পর সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে স্ত্রীর স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তার নামে একাধিক মামলা হলেও দীর্ঘ দিন ধরে পলাতক তিনি।

এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো, উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবু সাঈদ উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের তালবারিয়া গ্রামের মো. সোহেল রানার ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবু সাঈদ ছোট বেলা থেকেই বেশ ধূর্ত। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি গুরুদাসপুর উপজেলার একটি ক্লিনিকে দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন তিনি। ওই ঘটনার পর থেকেই গত চার বছর এলাকায় দেখা যায়নি তাকে। তবে সশরীরে তাকে দেখা না গেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকে নিয়মিত দেখা যায় তাকে। কখনও পাইলটের পোশাকে, কখনও পুলিশের পোশাকে।

গ্রামে তার বাবা সোহেল রানার একটি স্টুডিও’র দোকান রয়েছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে গত চার বছরে দেখা করতে আসেননি সাঈদ। তবে বিভিন্ন সময়ে দূর-দূরান্ত থেকে আবু সাঈদের স্ত্রী পরিচয়ে অনেক মেয়ে তার সন্ধানে আসে। গত ঈদুল ফিতরের দিন দুপুরে স্বামী আবু সাঈদের সন্ধানে টাঙ্গাইল থেকে এসেছিলেন পাঁচ নম্বর স্ত্রী দাবি করা খাদিজা আক্তার সাবিনা নামে এক নারী।

খাদিজা আক্তার সাবিনা জানান, ‘প্রায় আড়াই বছর আগে টিকটকে পরিচয় হয় আবু সাঈদের সঙ্গে। তখন তিনি পরিচয় দিয়েছিলেন বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে। তার বাবা-মা কেউ নেই। এতিমখানায় বড় হয়েছেন তিনি। এভাবে বেশ কিছুদিন ধরে কথা হয়। একপর্যায়ে আমাদের ১৫ লাখ টাকা দেন-মোহরে বিয়ে হয়। টাঙ্গাইল সদরে আমার একটি বিউটি পার্লার রয়েছে। এছাড়াও একটি এনিজও পরিচালনা করি। বিয়ের পর আবু সাঈদের ওপর আমার বিশ্বাস তৈরি হয়। এ কারণে আমার দুই বোন ও এক ভাতিজিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাঈদ ৩০ লাখ টাকা চান, আমরা তাকে সেই টাকা দেই। কয়েকদিন পর আমার কাছ থেকে আরও দশ লাখ টাকা নেন তিনি। কিছুদিন পরে তিনজনকেই নিয়োগপত্র দেন এবং বলেন তিন মাস পর চাকরিতে যোগদান করতে হবে।’

পরে সাঈদ বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে আরও টাকা নিয়েছিলেন বলে দাবি করে পঞ্চম স্ত্রী খাদিজা আরও বলেন, ‘বিয়ের পর সাঈদ আমার বাড়িতেই থাকত। তবে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন মেয়ে তাকে কল দিত। জিজ্ঞেস করলে বলত অফিসের সহকর্মী। একপর্যায়ে সাঈদের আসল ঠিকানা এবং তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। তবে সাঈদ বুঝতে পেরেছিল আমি সব জেনে গিয়েছি। এমনকি চাকরির জন্য যে নিয়োগপত্র দিয়েছিল সেগুলোও ভুয়া ছিল। এ কারণে আমার বাড়ি থেকে পালিয়ে যান সাঈদ। তারপর থেকে তাকে খোঁজার চেষ্টা করেও পাইনি। এ সব ঘটনায় টাঙ্গাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে সাঈদের নামে মামলা করেছি।’

সাঈদের সন্ধান করতে গিয়ে তার আরও চার স্ত্রীর খোঁজ পান খাদিজা। তাদের সবার সঙ্গে তার (খাদিজা) যোগাযোগ হয়। সবার কাছ থেকেই বিয়ের পর বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে সাঈদ পালিয়ে যান বলে জানান খাদিজা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাঈদের চতুর্থ স্ত্রী দাবি করা এক নারী বলেন, ‘কক্সবাজারের একটি উন্নতমানের হোটেলে আমি চাকরি করি। টিকটকে তিন বছর আগে সাঈদের সঙ্গে পরিচয় হয়। এনএসআই এর কর্মকর্তার পরিচয় দিয়েছিল সে। কিছুদিন কথা বলতে বলতে প্রেম ও বিয়ে হয় আমাদের। বিয়ের পর চাকরি করে জমানো প্রায় ১০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় সে। তখন থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ। আজ পর্যন্তও তার সন্ধান পাইনি।’

কথা হয় সাঈদের আরও পাঁচ স্ত্রীর সঙ্গে। তারাও জানান, যে নারী প্রতিষ্ঠিত, অর্থ সম্পদ আছে সেই নারীদের টার্গেট করে সাঈদ টিকটক ও ফেসবুকে সম্পর্ক গড়ে তুলত। সম্পর্কের পর বিয়ে করে। পরে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান সাঈদ।

কথা হয় সাঈদের প্রতিবেশী মাসুদ রানা’র সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাঈদ ফটোশপের কাজ ভালো পারেন। নিজের ছবি এডিট করে পাইলট, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তার পরিচয় দেয়। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পোশাক পরে ছবি তুলে তা ফেসবুক ও টিকটকে পোস্ট করত। এতে সুন্দরী মেয়েরা অল্প সময়ে তার প্রেমের ফাঁদে পরে যায়।’

সাঈদের বাবা সোহেল রানা বলেন, ‘আমার দুইটি সন্তান। ছেলে সাঈদের জন্য কোথাও মুখ দেখাতে পারিনা। লজ্জা হয়, মাঝে মাঝে মরে যেতেও মন চাই। শুধু স্ত্রী ও ছোট ছেলের কথা ভেবে আর পারিনা। কোনো মতে স্থানীয় বাজারে একটি স্টুডিও’র দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থান থেকে মেয়েরা তার সন্ধানে আসে এবং ছেলের বউ হিসাবে পরিচয় দেয়। কিন্তু সাঈদের সঙ্গে গত চার বছরে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’

তার বাবা আরও বলেন, ‘পাশের গ্রামে সাঈদকে বিয়ে দিয়েছিলাম। সেই ঘরে ২টি সন্তান রয়েছে। ওই মেয়েটা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় করেছে। কিন্তু সাঈদ না আসায় বউমা এখন বাবার বাড়িতে চলে গেছে।’

আবু সাঈদের প্রথম স্ত্রী বৃষ্টি বেগম বলেন, সাঈদ ১৪ জনকে বিয়ে করেছে। বর্তমানে সে পলাতক।

আবু সাঈদের প্রথম স্ত্রীর বাড়ি জামালপুরের মাউশি এলাকায়। ২০১০ সালে তাকে বিয়ে করেন। প্রথম পক্ষে দুটি ছেলে রয়েছে আবু সাঈদের।

দ্বিতীয় স্ত্রী রিয়া’র বাড়ি রাজশাহী শহরে। তিনি একজন সংগীত শিল্পী। ২০১২ সালে তাদের বিয়ে হয়।

তৃতীয় স্ত্রী কবিতার বাড়ি পাবনার চাটমোহর এলাকায়। তাকেও ২০১২ সালে বিয়ে করেন সাঈদ।

চতুর্থ স্ত্রী সাথী। তিনি বসবাস করেন ঢাকাতে। ২০১৩ সালে তাদের বিয়ে হয়।

পঞ্চম স্ত্রী খাদিজা আক্তার সাদিয়া। তার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলায়। ২০২২ সালের ১০ আগস্ট তাকে বিয়ে করেন সাঈদ।

ষষ্ঠ স্ত্রী শাপলা খাতুনের বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলায়। তাদের ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর বিয়ে হয়।

সপ্তম স্ত্রী মিতার বাড়ি রাজধানীর রামপুরায়। ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের হয়।

অষ্টম স্ত্রী আইরিন আক্তারের বাড়ি টাঙ্গাইল মধুপুরে। ২০২২ সালে তাকে বিয়ে করেন সাঈদ।

চট্টগ্রামে নবম স্ত্রী সুমি আক্তারে বাড়ি। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল তাকে বিয়ে করেন।

দশম স্ত্রী তিশা আক্তার ঢাকার সাভারের মেয়ে। তাদের বিয়ে হয় ২০২৩ সালে।

১১তম স্ত্রী সোয়ামনি নারায়ণগঞ্জ জেলার মেয়ে। ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে বিয়ে করেন সাঈদ।

১২তম স্ত্রী রানীর বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনি থাকেন ঢাকার সাভারে। বিয়ে হয় ২০২১ সালে।

১৩তম স্ত্রী প্রিয়াংকার বাড়ি বরিশালে। ২০২৪ সালে বিয়ে হয়।

১৪তম স্ত্রীর নাম আনারকলি। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। বর্তমানে বাস করছেন গাজীপুরে। বিয়ে ২০২৪ সালে।