ফেব্রুয়ারি মাস আসলে আমাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যায়। বিশ্বে একমাত্র আমরাই মায়ের ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগে আজ আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছি। বাংলা আমার অহংকার, বাংলা আমার গর্ব। আমি গর্বিত, আমি বাঙালি।
আমার বয়স চল্লিশের ওপরে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে শোনছি দেশের সর্বত্র বাংলাভাষা ব্যবহারের দাবি। ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই সরকারগুলো এ দাবির প্রতি সম্মান দিয়ে জাতিকে আশ্বস্ত করে, অচিরেই সর্বত্র বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে।
পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বর্তমান প্রজন্মের অনেকে বাংলাভাষাকে যেভাবে বিকৃত করে ব্যবহার করছে, তা জাতিকে হতাশ করছে। বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে রাস্তার বিভিন্ন সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডে ইংরেজিতে বিজ্ঞাপন। এছাড়া আমাদের দেশের ছোট বড় দোকান, বিভিন্ন শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণীবিতান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এনজিও সংস্থার নামকরণ ইংরেজি ভাষায়। যা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। এমনকি আমাদের দেশের উচ্চ আদালতের রায়ও ইংরেজিতে লেখা হয়। এছাড়াও আমাদের দেশের অধিকাংশই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বার্ষিক প্রতিবেদন ও ব্রুসিয়র ইংরেজিতে প্রকাশ করে। প্রকাশিত ইংরেজি প্রতিবেদন ও ব্রুসিয়র সদস্যরা হাতে পেয়ে বুঝতে পারেন না, এ নিয়ে কী করবেন হাসবেন, না কাঁদবেন। বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ গ্রহীতার সাথে চুক্তি করে। চুক্তির সকল শর্ত ইংরেজিতে। যেখানে আমরা বাংলা ঠিকমতো পড়তে এবং উচ্চারণ করতে পারি না, সেখানে বিদেশি ভাষার ব্যবহার কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা সত্যিই প্রশ্নবিদ্ধ।
ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ। এ দিনটিকে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার মানুষ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে। কেন এ দিনটি ভাষা দিবস তা আমাদের কারো অজানা নয়। তারপরও কেন আমরা আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে সর্বত্র চালু করতে পারি না। বিদেশি ভাষার প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নাই। এমনকি ঊর্দু ভাষার প্রতিও নাই। জ্ঞানের প্রসার ঘটাতে হলে অন্য ভাষাও জানতে হবে। তাই বলে নিজের ভাষাকে অবজ্ঞা করে নয়। যে জাতি মায়ের ভাষাকে সম্মান দিতে জানে না, সে জাতি কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এ সত্য উপলব্ধি করে জাতিসংঘে বাংলাভাষায় বক্তৃতা করে বাংলাকে বিশ্বদরবারে উঁচু করে গেছেন। যে সন্তান মাকে সম্মান করে না, সে অন্যের কাছে কখনো সম্মানীয় হতে পারে না। সরকারের কাছে অনুরোধ সর্বত্র বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করুণ। আসুন ঘর থেকে বাংলার ব্যবহার শুরু করি। ছড়িয়ে দেই সবখানে। সর্বত্র বাংলার ব্যবহার হলে ভাষাশহীদদের আত্মা শান্তি পাবে এবং আমরাও ভাষা নিয়ে গর্বিত হবো।
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তি লাভ করে। যদিও এর আগে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ৩০তম অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আরও পিছনে ফিরে গেলে রবীন্দ্রনাথের নোবেল কিংবা সত্যজিৎ রায়ের অস্কার জয়ের কথা বলতে হয়। বাংলাদেশে ও বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবিটি জোরালো হচ্ছে।
বাংলা ভাষার অবস্থান বিশ্বে ৫ম হলেও এই ভাষাটি মাত্র ৩টি দেশের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাতৃভাষা হিসেবে বিশ্ব-ভাষা তালিকায় বাংলার অবস্থান পঞ্চম এবং বহুল ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে এর অবস্থান সপ্তম। বিশ্বের প্রায় ২৭ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে। জাতিসংঘের বৈঠকে ব্যবহৃত ছয়টি ভাষাকে বলা হয় জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা। জাতিসংঘের সকল আনুষ্ঠানিক দলিল দস্তাবেজগুলোও এই ছয়টি ভাষায় লিখা হয়। ভাষাগুলোর নাম বর্ণানুক্রমিক ক্রমে আরবি, ইংরেজি, ফরাসি ভাষা, মান্দারিন, রুশ ভাষা, স্প্যানিশ।
আশাকরি, ভবিষ্যতে সপ্তম ভাষা হিসেবে বাংলাভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি পাবে।
লেখক: মো. নবী আলম; উন্নয়ন কর্মী ও সাংবাদিক।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।
গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net