দেশে আজ থেকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। ১৮ বছর থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সী সকল বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেছে সরকার।
সেই সঙ্গে প্রবাসে থাকা যেসব বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারাও এই স্কিমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় এ পেনশন পদ্ধতি উদ্বোধন করেন। এর আগে গতকাল বুধবার পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট চালু হয়েছে। ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.upension.gov.bd। এতে বলা হয়েছে, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ’ ওয়েবসাইটের ঠিকানায় পেনশন স্কিমগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য উল্লেখ করা আছে।
জানা গেছে, শুরুতে চার শ্রেণির ব্যক্তি পেনশন কর্মসূচির আওতায় আসছেন। তারা হচ্ছেন- প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং অসচ্ছল ব্যক্তি। এছাড়া এই সর্বজনীন পেনশনের আওতায় চারটি স্কিম রয়েছে। চার স্কিমের মধ্যে রয়েছে- প্রবাস স্কিম (প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য), প্রগতি স্কিম (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য), সুরক্ষা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য) এবং সমতা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য)। এসব স্কিমে চাঁদার হার কত হবে তাও নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রবাস স্কিম
বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক তফসিলে বর্ণিত চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদান করে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারবেন এবং তিনি দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোষ করতে পারবেন। প্রয়োজনে, স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে পেনশন স্কিনের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন পাবেন।
প্রগতি স্কিম
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা প্রদান করে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মচারী এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দেবে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণ না করলে, ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সুরক্ষা স্কিম
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, ইত্যাদি তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সমতা স্কিম
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী আয়ের ব্যক্তিরা (যার বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
পেনশন সুবিধায় যা আছে
**১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল কর্মক্ষম নাগরিক এই পেনশন সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন। প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিরাও এতে অংশ নিতে পারবেন। তবে সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিষয়ে পরে বিবেচনা করা হবে, কারণ এখন তারা সরকারিভাবেই একটি পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আছেন।
**জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এটা হবে ঐচ্ছিক। পরে তা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা আছে সরকারের।
** ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা জমা দিলে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন একজন। প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি বা পেশা পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
**সুবিধাভোগীর বছরে ন্যূনতম বার্ষিক জমা নিশ্চিত করবেন। তা না হলে তাদের হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। পরে বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা পরিশোধের মাধ্যমে হিসাব সচল হবে।
**পেনশনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা (৬০ বছর) পূর্ণ হলে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন দেওয়া হবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতি মাসে এই পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
**নির্ধারিত চাঁদা জমাকারী পেনশনে থাকাকালে ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি সেই মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। মূল জমাকারীর বয়স যে বছর ৭৫ বছর পূর্ণ হত, ওই বছর পর্যন্ত নমিনিকে এই পেনশন দেওয়া হবে।
**পেনশন স্কিমে জমা করা অর্থ কোনোভাবেই কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের প্রেক্ষিতে জমা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তোলা যাবে, যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
**কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই নিবন্ধিত চাঁদা প্রদানকারী মারা গেলে জমা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
** পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে। পেনশন বাবদ মাসিক যে অর্থ পাওয়া যাবে তা পুরোপুরি আয়কর মুক্ত থাকবে।
**পেনশন কর্তৃপক্ষের খরচসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় সরকার বহন করবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিলে জমা অর্থ নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে এবং সর্বোচ্চ লাভের ব্যবস্থা করবে।
কত জমায় সর্বোচ্চ কত টাকা পাওয়া যাবে
পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদা দাতা আবেদন করলে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন, যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে এবং পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিলে।
স্কিমে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও নিবন্ধন
১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সকল বাংলাদেশি নাগরিক তাদের জন্য প্রযোজ্য কোনো স্কিমে অংশগ্রহণকারীদের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকরাও স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং সেই ক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারাও তাহাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করে তার অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।
এছাড়া নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা নবায়ন করা পাসপোর্টের অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরা তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে স্কিমে অংশগ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে। কোনো স্কিমে নিবন্ধনের জন্য দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিককে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবেদন করতে হবে। যার বিপরীতে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হবে। আবেদনে উল্লিখিত আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা দেওয়ার তারিখ অবহিত করা হবে।
মাসিক চাঁদা
মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা আর সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কর্মসূচি পরিবর্তন এবং চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ থাকছে।
যে কোনো স্কিমে নিবন্ধিত হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ওই স্কিমের জন্য ধার্য করা হারে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করতে হবে। নিবন্ধনের পর আবেদনকারী মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বা ব্যাংকের কোনো শাখায় ওটিসি পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা করবেন। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা দেওয়া যাবে। এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতি দিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দিয়ে হিসাবটি সচল রাখা যাবে।
এছাড়া কোনো চাঁদা দাতা ধারাবাহিকভাবে ৩ কিস্তি চাঁদা জমাদানে ব্যর্থ হলে তাহার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে এবং প্রতিদিনের জন্য উপবিধি অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না। চাঁদা দাতা মাসের নাম উল্লেখ করে যে কোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা দিতে পারবেন। কোনো প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশগ্রহণ করলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্য করা মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একত্রে তহবিলে জমা করতে হবে। সকল স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদা দাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকবে। চাঁদার টাকা জমা হলে চাঁদা দাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে অবহিত করা হবে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা প্রদান করা না হলে বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমাদানের জন্য চাঁদা দাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে মেসেজ দেওয়া হবে।
শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থ চাঁদা দাতার ক্ষেত্রে বিধান
কোনো চাঁদা দাতা চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হলে তাকে অসচ্ছল চাঁদা দাতা হিসাবে ঘোষণার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে আবেদন করতে পারবেন। কোনো চাঁদা দাতার অসচ্ছলতা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক পৃথক মেডিকেল বোর্ড গঠন করবে। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ ব্যতীত কোনো চাঁদা দাতাকে অসচ্ছল চাঁদা দাতা হিসাবে ঘোষণা করা যাবে না। চাঁদা দাতার মানসিক বা শারীরিক অসামর্থ্যের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর আপিল দায়ের করতে পারবেন। আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। অসচ্ছল চাঁদা দাতা হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা পরিশোধ না করলেও চাঁদা দাতার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে না।
মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি চাঁদা দাতা হলে চাঁদা দেওয়ার বিধান
কোনো চাঁদা দাতা চাঁদা প্রদানকালে মানসিক অসামর্থ্যের কারণে অসচ্ছল হিসাবে ঘোষিত হলে কর্তৃপক্ষ উক্ত স্কিমের স্বত্ব উক্ত মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির নমিনি অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীর ওপর ন্যস্ত করতে পারবেন। কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন চাঁদা দাতার নমিনি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী তাহার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাবে চাঁদার কিস্তি নিয়মিত জমা করে স্কিম চালু রাখতে পারবেন। স্কিমের মেয়াদ শেষে ওই স্কিমের বিপরীতে পেনশনের অর্থ নমিনি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা উত্তোলন করতে পারবেন।
চাঁদা দাতা বা পেনশনার নিখোঁজ হলে চাঁদা প্রদানের বিধান
চাঁদা দাতা নিখোঁজ হলে নিখোঁজ ব্যক্তির নমিনি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়রি করে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পেনশনের সম্মুখ অফিসে বা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে চাঁদা দাতার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাবে নির্দিষ্ট চাঁদার অর্থ জমা করতে পারবেন। চাঁদা দাতা নিখোঁজ হইবার ৭ বছর অতিক্রান্ত হলে এবং নিখোঁজ ব্যক্তি ফিরে না আসলে, ওই চাঁদা দাতার স্কিম স্থগিত রাখতে হবে এবং পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়া সাপেক্ষে তাকে নিখোঁজ পেনশনার গণ্য করে উপবিধি (৩) এর বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পেনশনার তার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে নিখোঁজ হলে, তার নিখোঁজ হওয়ার ৭ বছর পর পেনশনারের মাসিক পেনশন বাবদ পাওনা তার নমিনি অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীদেরকে প্রদান করা যাবে। তবে নিখোঁজ পেনশনারের নমিনি বা নমিনিরা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হতে যতদিন লাগে ততদিন পর্যন্ত মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন।
চাঁদা দাতা কর্তৃক নমিনি মনোনয়ন
স্কিমের চাঁদা দাতা, স্কিমে জমা করা অর্থ বা জমার বিপরীতে প্রাপ্য পেনশন বাবদ অর্থ তার মৃত্যুর পর গ্রহণ বা উত্তোলনের জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে এক বা একাধিক নমিনি মনোনয়ন করতে পারবেন। যে কোনো সময় নমিনি বাতিল করে এক বা একাধিক নতুন নমিনি নির্বাচন করা যাবে। চাঁদা দাতা কর্তৃক প্রদত্ত একক নমিনি বা একাধিক নমিনির ক্ষেত্রে সকল নমিনি মৃত্যুবরণ করলে চাঁদা দাতাকে পুনরায় নমিনি মনোনয়ন করতে হবে।
নমিনি নাবালক হলে চাঁদা দাতার মৃত্যুর পর নমিনি সাবালক না হওয়া পর্যন্ত নমিনির পক্ষে স্কিমের প্রাপ্য অর্থ গ্রহণ বা উত্তোলনের জন্য চাঁদা দাতা নমিনি প্রদানকালে যে কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারবেন। এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে চাঁদা দাতার মৃত্যুর পর নমিনি সাবালক না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি নাবালকের প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য হবে।
চাঁদা দাতার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাব
স্কিমের আওতাভুক্ত প্রত্যেক চাঁদা দাতার নামে একটি পৃথক পেনশন হিসাব থাকবে। যা তার কর্পাস হিসাব হবে এবং উক্ত কর্পাস হিসাবে চাঁদা দাতা কর্তৃক জমা করা চাঁদার অঙ্ক হিসাবায়ন করা হবে। কর্তৃপক্ষ প্রতি অর্থবছর শেষে সর্বজনীন পেনশন তহবিলের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী অনুযায়ী কর্পাস হিসাবের স্থিতির ওপর লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। চাঁদা দাতার জমা করা চাঁদার ওপর ঘোষিত নির্ধারিত হারে লভ্যাংশ আকলন দেখিয়ে কর্পাস হিসাবের পুঞ্জীভূত জমার পরিমাণ নির্ধারিত হবে। চাঁদা দাতার কর্পাস হিসাবে পুঞ্জীভূত জমার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মাসিক পেনশন (অ্যানুইটি)-এর পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।
স্কিমের রূপান্তর
চাঁদা দাতা যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তার অনুকূলে চালু করা স্কিমের পরিবর্তে অন্য স্কিম বা স্কিমের চাঁদা প্রদানের হার পরিবর্তন করতে পারবেন। স্কিম রূপান্তরের ক্ষেত্রে রূপান্তরিত স্কিমে নতুন চাঁদার হিসাব পৃথক রেখে লভ্যাংশ ও পুঞ্জীভূত জমার অর্থের হিসাব করতে হবে, যা পূর্বতন স্কিমের পুঞ্জীভূত জমার সঙ্গে যুক্ত হবে। স্কিম রূপান্তরের কারণে মেয়াদ পূর্তিতে মাসিক পেনশনের পরিমাণ পুনঃনির্ধারিত হবে।
স্কিমের স্বত্ব
এই বিধিমালার অধীন কোনো চাঁদা দাতার অনুকূলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু করা কোনো স্কিমের সম্পূর্ণ স্বত্ব উক্ত স্কিমের চাঁদা দাতার থাকবে। পেনশন স্কিমে চাঁদা দাতা ওই স্কিমের স্বত্ব জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সত্তার নিকট হস্তান্তর করতে পারবেন না। তবে স্কিম বা পেনশন চলাকালে যে কোনো সময়ে চাঁদা দাতার মৃত্যু হলে ওই স্কিমের অর্থ চাঁদা দাতা কর্তৃক মনোনীত নমিনি বা নমিনির অবর্তমানে চাঁদা দাতার উপযুক্ত উত্তরাধিকারী বরাবর হস্তান্তরে কোনো বাধা থাকবে না।
প্রদত্ত চাঁদা থেকে ঋণ গ্রহণ
চাঁদা দাতা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহ নির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানের বিবাহের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনে তহবিলে কেবল তার জমা করা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবেন। যা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ধার্য করা ফিসহ সর্বোচ্চ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে এবং সমুদয় অর্থ চাঁদা দাতার হিসাবে জমা হবে। গৃহীত ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত নতুনভাবে কোনো ঋণ গ্রহণ করা যাবে না।
চাঁদা দাতা বা পেনশনারের মৃত্যুর পর স্কিমের বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ প্রদান
চাঁদা দাতা নমিনি প্রদানপূর্বক মৃত্যুবরণ করলে এবং তাহার মৃত্যুর পর নমিনি মনোনয়ন কার্যকর থাকলে উক্ত স্কিমের অর্থ নমিনি প্রাপ্য হবেন। নমিনি নাবালক হলে চাঁদা দাতা বা পেনশনারের মৃত্যুর পর বিধি ১০ এর উপবিধি (৩) এর বিধান অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্কিমের বিপরীতে জমা করা অর্থ বা পেনশনের অর্থ প্রাপ্য হবেন এবং উক্তরূপ কোনো ব্যক্তি নিয়োগপ্রাপ্ত না হলে নাবালকের আইনসম্মত অভিভাবক উল্লিখিত স্কিমের আওতায় পাওনা অর্থ প্রাপ্য হবেন।
কোনো স্কিমের বিপরীতে একাধিক নমিনি থাকলে এবং যে কোনো একজন নমিনি মৃত্যুবরণ করলে এবং মৃত নমিনির বিপরীতে নতুন কোনো নমিনি মনোনয়ন না করা হইলে, জীবিত নমিনি বা নমিনিরা উল্লিখিত স্কিনে উত্তরাধিকারী হিসাবে গণ্য হবেন এবং উক্ত স্কিনের অর্থ প্রাপ্য হবেন। কোনো স্কিমের চাঁদা দাতা মাসিক পেনশন প্রাপ্যতা অর্জিত হইবার পর মৃত্যুবরণ করলে উক্ত স্কিনে জমা করা পুঞ্জীভূত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন নির্ধারণপূর্বক তার নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনি না থাকলে তার উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীদেরকে পেনশন প্রদান করা যাবে এবং এই ক্ষেত্রে উপবিধি (৫) এর বিধান প্রযোজ্য হবে।
এই বিধির আওতায় কোনো স্কিমের চাঁদা দাতা পেনশনে থাকাকালীন তার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনি না থাকলে তার উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা অবশিষ্ট সময়ের জন্য অর্থাৎ মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হতে যতদিন অবশিষ্ট থাকবে ততদিন পর্যন্ত মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। কোনো স্কিমের চাঁদা দাতা মাসিক পেনশন প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে তার নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনির অবর্তমানে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা মুনাফাসহ জমা করা অর্থ ফেরত পাবেন।
চাঁদা দাতা বা পেনশনার মৃত্যুবরণ করলে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধান
নমিনির অবর্তমানে উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কর্তৃক ইস্যু করা উত্তরাধিকার সনদের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর আপিল করতে পারবেন। আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
রেকর্ড সংরক্ষণ
কর্তৃপক্ষ স্কিমের হিসাব, পেনশন হিসাব, কর্পাস হিসাব, চাঁদা দাতা ও নমিনির জীবন বৃত্তান্তসহ যাবতীয় তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ ও নিয়মিত হালনাগাদ করার পাশাপাশি ব্যাকাপ রাখবে।