পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট:
আধুনিক যুগে প্রযুক্তি ছাড়া উন্নয়ন আর জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রারম্ভে যেসব প্রযুক্তিগত বিষয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেগুলোর মধ্যে মেশিন লার্নিং,আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স,ডিপ লার্নিং, ব্লকচেইন অন্যতম। প্রযুক্তির এই অসাধারণ হাতিয়ারগুলোর অন্তর্ভুক্ত ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং বা এনএলপি অদম্য। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পন্ন সুবিধাগুলোর মুলমন্ত্র এই এনএলপি। রোবটকে নির্দেশনা দেওয়া,চ্যাটবটের স্বয়ংক্রিয় উত্তর কিংবা মুঠোফোনের ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্টের মুলমন্ত্র এই ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এনএলপি)।
গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) যৌথ আয়োজনে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি বিভাগ) এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও আমাজন ওয়েব সার্ভিসেসের সহযোগিতায় রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের প্রথম ৩৬ ঘন্টাব্যাপী ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এনএলপি) হ্যাকাথন।
শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্বের বিজয়ী দলগুলোকে সর্বমোট এক লক্ষ টাকা মূল্যেমানের প্রাইজমানি হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া সকল অংশগ্রহণকারীদেরকে সার্টিফিকেট এবং পারফরমেন্সের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীতে ফুল টাইম চাকরি ও ইন্টার্নশিপ দেয়ার জন্য সুপারিশ করার কথাও বলা হয়।
দুইদিনব্যাপী এই হ্যাকাথনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. যারিফ উল আলম, রামিশা আলম ও সামীন সাহগীরের টিম বুয়েট সিমান্টিক সেনানিগান্স; প্রথম রানার্স আপ হয়েছে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মো: আজমাইন মাহতাব, শেখ আয়াতুর রহমান ও আনিকা তাহসিনের টিম লিংগুয়েস্টিক ম্যাভরিক্স; দ্বিতীয় রানার্স আপ হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিদওয়ানুল হাসান তানভির, সিহাত আফনান ও সায়েক বিন ইসলামের টিম রিটার্ন জিরো।
বিডিওএসএনের আয়োজনে এর আগে ন্যাশনাল গার্লস প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়াটা তার আজকের এই অর্জনের ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রেখেছে বলে বিশ্বাস করেন চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য রামিশা আলম।
এ সময় কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমলুক ছাবির আহমেদ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. নাবিল মোহাম্মেদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.রিফাত শাহরিয়ার, ইজি সেবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এম আরিফুর রহমান, লিঙ্ক থ্রির ডেপুটি ম্যানেজার (ব্রান্ড,সেলস ও মার্কেটিং) সাব্বির হাসান, উইকিমেডিয়া ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ডেভেলপার নাজিয়া তাসনিম, বিকাশের ইঞ্জিনিয়ার মো: ইশতিয়াক হোসাইন শিহাব,বিডিওএসএনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা সহ আরো অনেকেই উপস্থিত হয়ে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার পাশাপাশি এ ধরনের আয়োজন নিয়মিতভাবে করার প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন মমলুক ছাবির আহমেদ। সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে রাজধানী এবং দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের আয়োজন করার কথাও বলেন তিনি। হ্যাকাথনের প্রথম দিনে অনলাইনে একটা সেশন পরিচালনা করেন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপক এবং ব্যাপকভাবে গৃহীত ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম আমাজন ওয়েব সার্ভিসেসের সলিউশন আর্কিটেক্ট মোহাম্মদ মাহদী-উজ-জামান অপু। এ সময় বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটির অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন সহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
দুইদিনব্যাপী এই হ্যাকাথন পরিচালনা করেন আমাজন আলেক্সার এপ্লাইড সায়েন্টিস্ট সুদীপ্ত কর এবং ব্রাক ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক (সিএসই) ড.ফারিগ সাদেক। বাংলাদেশে এই প্রথম এমন আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মুনির হাসান জানান, এনএলপি নিয়ে অনেক দিনের পরিকল্পনার ফসল এবারের হ্যাকাথন। এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর তারিখে বিডিওএসএনের আয়োজনে এবং সুদীপ্ত করের পরিচালনায় রাজধানীতে আয়োজন করা হয়েছিল স্টোরি অফ এনএলপি শীর্ষক কর্মশালা। সেই কর্মশালার পরে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানীয় সমস্যার সমাধানে এনএলপিতে দক্ষ লোকজনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই এমন হ্যাকাথন আয়োজন করা হলো। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন টেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মিলিয়ে অর্ধ শতাধিক অংশগ্রহণকারীদের নিয়েই এই হ্যাকাথন অনুষ্ঠিত হলো। এবারের হ্যাকাথনের সকল স্পন্সর প্রতিষ্ঠানকে কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এই হ্যাকাথনের গোল্ড স্পন্সর হিসেবে ছিলেন ব্রেইন স্টেশন ২৩, সিলভার স্পন্সর হিসেবে ছিলেন ইজি সেবা এবং ইন্টারনেট পার্টনার হিসেবে ছিলেন লিঙ্ক থ্রী টেকনোলজিস।