’৭২-এর সংবিধান বারবার কাটাছেঁড়া করে সরকার অকার্যকর সংবিধানে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে এ দেশের মানুষ যে সংবিধান রচনা করেছিলেন, সেটাকে বারবার কাটাছেঁড়া করে অকার্যকর একটা সংবিধানে পরিণত করেছে সরকার। তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে সংবিধানকে ধ্বংস করেছে। দেশের অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
শুক্রবার সকালে সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনে আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মী রাজপথে প্রাণ দিয়েছেন। শত শত নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। হাজারো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সারা দেশে ভয়াবহ রকমের নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে। দেশের অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা,
নির্বাচন ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের পকেট কেটে টাকা নিচ্ছে।
পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, তারা অনেক বড় বড় কথা বলে, তারা নাকি অনেক উন্নয়ন করেছে। এই উন্নয়নটা কার জন্য? এই উন্নয়ন গুটিকয় মানুষের জন্য। তারা পাতাল রেল করছে, মেট্রোরেল করছে, কত টাকা খরচ হয়েছে? যা খরচ হওয়ার কথা তার চেয়ে তিনগুণ খরচ করেছে। পদ্মা সেতু করে খুব বাহবা নেয় তারা। সেই পদ্মা সেতু বানাতে ১০ হাজার কোটি টাকা ছিল বাজেট, তার প্রকল্প, যেটা আমাদের সময় করা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার মতো, সেটা আজকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, তারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা এমন খারাপ হয়েছে যে, আজকে আমাদের
মা-বোনদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। তারা নিরাপদ বোধ করেন না এই দেশে। আজকে কোথাও কোনো আইনের শাসন নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থাকে তারা সম্পূর্ণ নিজেদের করায়ত্ত করে নিয়েছে। এভাবে তারা আজকে দেশ পরিচালনা করছে শুধুমাত্র শক্তি দিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে। তারা বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে তাদের টাকা আয় করার জন্য, চুরি করার জন্য। আদানি ভারতের বিশাল কোম্পানি, তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা লোকসান হবে। অন্য দেশের চেয়ে দ্বিগুণ দামে আমাদের কয়লা কিনতে হচ্ছে।
‘তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম এত বাড়ত না, যদি চুরি বন্ধ করা যেত। আজকে তাদের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, এটা হচ্ছে বাস্তব কথা।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে। কথা দিয়েছিল, তারা ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেবে। ১০ টাকা কেজি দরে চাল খেতে পারেন এখন? না, ৭০ টাকা কেজি মোটা চাল এখন। পত্রিকায় দেখলাম, মিহি চাল ১৭০ টাকা! ডালের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে। ডিম সাধারণ মানুষের প্রোটিনের উৎস, সেটার দাম তিন-চারগুণ বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে এক লাফে ৬০ টাকা। মানুষ কোথায় যাবে?
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা নির্বাচন করতে চায় সংবিধানের অধীনে, বর্তমান যে সংবিধান আছে সেটার অধীনে। সেই সংবিধানে কী আছে? যে দলীয়, আওয়ামী লীগের অধীনেই নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষ কেউ বিশ্বাস করে? আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তারা বিশ্বাস করে? তখন নেতাকর্মীরা ‘না’ বলে আওয়াজ দেন। ‘সরকার একটা ভয়ের রাজত্ব, ত্রাসের রাজত্ব তারা তৈরি করেছে।’
সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এমএ জাহিদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদী লুনা, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট/অমিতা সিনহা/ ১১ মার্চ ২০২৩
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।
গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net