সম্পত্তির লোভে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানা এলাকায় হাসান আলী নামের এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যার পর লাশ টুকরো করে স্কুল ব্যাগে ভরে সমুদ্র সৈকত এলাকায় ফেলে দেওয়ার লোমহর্ষক জবানবন্দী দিয়েছে গ্রেপ্তার পুত্রবধূ আনারকলী। স্বামী ও ভাসুর মিলে হত্যার পর শ্বশুরের লাশ গুম করতে নিজের সহযোগিতার কথাও জবানবন্দীতে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এই নারী।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে আনারকলী জবানবন্দি প্রদান করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান।
তদন্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস খান জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়কের জমির ভিলার ৭ নম্বর বাসায় স্ত্রী ও সন্তান মিলে প্রবাস ফেরত হাসান আলীকে হত্যা করেন। এরপর তার লাশ কেটে টুকরো করে লাগেজ ও বস্তায় ভরে পতেঙ্গা ও আকমল আলী সড়কের পাশে ফেলে দেওয়া হয়। গত শুক্রবার হাসান আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িত তার পুত্রবধূ আনারকলীকে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন শনিবার আদালতে হাজির করে আনারকলিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতকে নিয়ে প্রথমে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা বাসার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। সাগরের বিভিন্ন স্থানে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ভুক্তভোগীর কাটা মাথা পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার আনারকলি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আনারকলী বলেন, আমার বাড়ি মহেশখালী। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় আমার প্রথম বিয়ে হয়। স্বামী মারধর করায় আর সংসার করিনি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শফিকুর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীরকে বিয়ে করি। তার ভাইয়ের নাম মোস্তাফিজুর রহমান। আমার শাশুড়ি অসুস্থ বিধায় আমার বাসায় ছিল। গত ১৯ সেপ্টেম্বর আমার শ্বশুর হাসান আলী আমার বাসায় আসেন। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে আমাদের ঘরের পাশের একটা খালি ঘরে আমার শ্বশুর, স্বামী ও ভাসুর মোস্তাফিজ যায়। ওই ঘরের ভেতর তারা কী করে আমি সব দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি একবার লুকিয়ে দেখতে গিয়ে জানালা দিয়ে দেখতে পাই আমার স্বামী শফিক ও ভাসুর মোস্তাফিজ শ্বশুরকে একটা বস্তায় ভরছে। পরে বিকেলে জানতে পারি ওরা আমার শ্বশুরকে মেরে ফেলছে। বিকেলে আমার স্বামী ও আমি লাশ আমার ঘরে নিয়ে যাই। ওরা মরদেহটা টুকরো করে লাগেজ, স্কুলব্যাগ ও বস্তায় ভরে। আমার স্বামী পলিথিন ও টেপ আমাকে দেই। আমি সেগুলো ভাসুরকে দেই। রাতে একটা লোককে দিয়ে ওরা বস্তা ফেলে দেয়। কোথায় ফেলে দেয় জানি না। পরের দিন ভোর বেলা আমি শফিক ও মোস্তাফিজ লাগেজ ১২ নম্বর ঘাটের দিকে ফেলি। স্কুলব্যাগে মাথা ছিল। সেটা আমি ও শফিক সৈকতে নিয়ে যাই। শফিক মাথাটা পুলিশ বক্সের একদম নিচের দিকে পাথরের ভেতর ফেলে দেয়। আমাকে বলে ব্যাগ ফেলে দিতে। কিন্তু আমি ফেলিনি।
আনারকলী বলেন, ক্লাস ওয়ান থেকে এইট পর্যন্ত আমার রোল নম্বর এক ছিল। আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পিএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাই। আমি খুনের বিষয় জানতাম না। পরে জেনেও চুপ ছিলাম। ভাবলাম সংসার ভেঙে যাবে কি না। অভাবের জন্য আমাকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে দেওয়া হয়। আমি পুলিশকে ধামা ও ব্যাগ উদ্ধারে সহায়তা করি।
প্রসঙ্গত, গত ২১ সেপ্টেম্বর হাসান আলীর মরদেহের অংশ বিশেষ পুলিশ উদ্ধার করে। আঙুলের ছাপ নিয়ে তার পরিচয় শনাক্ত করে পিবিআই। পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও সন্তান মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।