ভারতের রাজধানী দিল্লিতেই অবস্থান করছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্য কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আগে সেখানেই আরও কিছুদিন থাকতে হবে তাকে। তার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে তার সাময়িক আশ্রয় হতে পারে বেলারুশ।
ভারতীয় সূত্র থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সোমবার ভারতে পৌঁছার পর শেখ হাসিনার জন্য যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সে চেষ্টা এখনও সফল হয়নি। যুক্তরাজ্য না হলে ইউরোপের আরেক দেশ ফিনল্যান্ডে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা। তবে ফিনল্যান্ডও তাঁকে আশ্রয় দিতে রাজি নয়। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার শেষ গন্তব্য কোন দেশে হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকা জানায়, শেখ হাসিনাকে এত কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছে যে, তিনি কোন দেশে আশ্রয় নেবেন, তা নিয়ে কাজ করার সময় পাননি। তবে তার পরিবার ও নিকটাত্মীয়রা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড ও ভারতে রয়েছেন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং সৌদি আরবও শেখ হাসিনার আশ্রয় নেওয়া দেশগুলোর অন্যতম হতে পারে।
যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, দেশটির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকসহ তাদের পরিবারের বসবাস। শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির স্ত্রী পেপে সিদ্দিক ফিনল্যান্ডের নাগরিক। পেপে সিদ্দিক ঢাকায় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থায় (আইওএম) কর্মরত ছিলেন। পরে তাকে বদলি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় থাকেন। আর ভারতে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কার্যালয়ে আঞ্চলিক পরিচালক পদে রয়েছেন শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
এরই মধ্যে শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা স্থগিত হওয়ার খবর ভারতের গণমাধ্যমে এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র জানান, মার্কিন আইন অনুযায়ী ভিসা-সংক্রান্ত তথ্য গোপনীয়। এ কারণে কোনো ব্যক্তির কাছে এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত আমরা প্রকাশ করি না।
নাম না প্রকাশের শর্তে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র সমকালকে জানায়, শেখ হাসিনাকে আরও কিছুদিন দিল্লিতেই থাকতে হবে। তিনি জানান, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার আবেদন ফিরিয়ে দিচ্ছে। পরিবার ও নিকট আত্মীয়রা যে দেশগুলোতে বসবাস করছেন, সেখানেই প্রথমে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অবস্থানকে অনুসরণ করছে। ফলে রাশিয়ার আশপাশের কোনো দেশে তার শেষ গন্তব্য হতে পারে। তবে তার আগে কিছু দিন তাঁকে বেলারুশে থাকতে হতে পারে। এ বিষয়ে কাজ করছে ভারত।
বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল ভারতে সর্বদলীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে জয়শঙ্কর জানান, কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশে ভারতীয়দের পরিস্থিতির দিকেও নজর রাখছে। আপাতত তাদের জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে আনা হচ্ছে না। তবে প্রয়োজনে যে কোনো সময় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নয়াদিল্লি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে তারা।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারত আপাতত শেখ হাসিনাকে কিছু দিন সময় দিতে চায়। তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ভারত সরকারকে জানাবেন। তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ভারত।
সেই বৈঠকেই রাহুল গান্ধী প্রশ্ন করলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতির নেপথ্যে বিদেশি কোনো শক্তির হাত আছে কিনা? বিশেষত চীনের যোগ আছে কিনা– জবাবে জয়শঙ্কর নাকি বলেছেন, বিদেশি শক্তির হাত থাকার বিষয়টি এখন উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বৈঠকে রাহুল এ ইস্যুতে মোদি সরকারকে সমর্থন দেবেন বলে জানান। বৈঠকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, সংসদবিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজেজুরাও উপস্থিত ছিলেন।
এর পর দেশটির সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, আমাদের জানা মতে নিরাপত্তাবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। খুব কম সময়ের নোটিশে তিনি সাময়িকভাবে ভারতে আসার অনুমতি চান। একই সঙ্গে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ‘ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সের’ জন্যও অনুরোধ আসে আমাদের কাছে। শেখ হাসিনা সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছেছেন।
আমরা বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চাই– শশী থারুর
এদিকে ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও কংগ্রেস দলীয় এমপি শশী থারুর বলেছেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে, সেটার ওপর প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণ বিস্তারের কোনো ইচ্ছা ভারতের নেই। দিল্লি ‘অস্থিতিশীল অথবা অবন্ধুসুলভ প্রতিবেশী’ চায় না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের উচিত সবাইকে এই নিশ্চয়তা দেওয়া যে, আমরা অবন্ধুসুলভ শক্তি নই। বাংলাদেশে যা ঘটছে, সেটার ওপর প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণ বিস্তারের কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা সহায়তা করতে চাই। আমার বিশ্বাস, আমাদের উচিত সরকারি ও বেসরকারিভাবে এই বার্তা পাঠানো।’
তিনি বলেন, যদিও জামায়াতে ইসলামীর ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে ভারতের কিছু উদ্বেগ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী অতীতে ভারতের প্রতি অত্যন্ত বৈরী মনোভাব দেখিয়েছে। চীন ও পাকিস্তানের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ নিয়েও উদ্বগ রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট সোমবার ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটে। সোমবার দুপুরে হেলিকপ্টারে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারত পালিয়ে যান তিনি। ঢাকা ছাড়ার আগে চাপে পড়ে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।