নগরের কোতোয়ালী থানার নিউমার্কেট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক যুবককে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণে আহত করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন কফিল নামে এক যুবক। মামলার বাদী নিজেই নগর যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় আসামিও কফিল। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানা পুলিশের খাতায় রয়েছে অস্ত্র-মাদকসহ তিনটি মামলা এবং আনোয়ারা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি।
একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে জেলেও গেছেন। নগরে ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপ অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন মিছিল–সমাবেশে বাবরের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। নিজের হোয়াটসঅ্যাপের প্রোফাইলের ছবিতে বাবরের সঙ্গে তার ছবিও আছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলাটি করেছিলেন নগরের নন্দনকাননের বাসিন্দা পরিচয় দেওয়া কফিল উদ্দিন। ওইদিন আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য এ এ মোতালেব, মজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ, পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, ডিবির প্রধান হারুন অর রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি ওবায়দুল হক, নেজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ মহসীন, জাহিদুল কবির, এসআই বোরহান উদ্দিন, খাজা এনাম এলাহীসহ ২৬ পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম, সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ, ওয়াসিম উদ্দিন, মোবারক আলীকেও আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, গত ৪ আগস্ট নগরের নিউমার্কেট গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। ওই দিন আসামিদের কয়েকজনের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় বাকি আসামিরা গুলি করেন। ককটেল বিস্ফোরণও ঘটান। এতে বাদী হাতে আঘাত পান। ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি হন। ঘটনায় জড়িত আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ ও সুস্থ হতে সময় লাগায় মামলা করতে দেরি হয়েছে।
মামলার এজাহারে কফিল উদ্দিন দাবি করেছেন তিনি একজন চাকরিজীবী। স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নে। বর্তমানে নগরের কোতয়ালী থানার নন্দনকানন এলাকায় দুই নং গলিতে থাকেন। বাবার নাম মৃত জেবেল হোসেন।
তবে আনোয়ারার স্থানীয় লোকজন সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কফিলের বাড়ি আনোয়ারার বারখাইন এলাকার ৬ নম্বর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। পুলিশের মামলার রেজিস্ট্রারে তার নাম মো. আফছার প্রকাশ কফিল।
অন্যদিকে গত ৫ তারিখ শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাবর পালিয়ে যান। গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিনজন। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে সেদিন অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যুবলীগ নেতা বাবর। ৪ আগস্ট নিউমার্কেট এলাকায় বাবরের অনুসারী অনেক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে সহিংসতায় অংশ নিতে দেখা গেছে। বাবরের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত হত্যা, অস্ত্র ও হত্যাচেষ্টার অনেক মামলা হলেও কফিল তার মামলায় বাবরের নাম উল্লেখ করেননি।
কফিল উদ্দিনের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমাদের যা তথ্য আমরা তা আদালতে দিয়েছি। এর বাইরে কিছু জানি না। আপনি আদালত থেকে তথ্য নেন। বাদীর বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলা আছে কিনা জানি না। আমি শুধু আইনজীবী হিসাবে মামলা ফাইল করেছি।
তবে মামলার বাদী কফিল যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে স্বীকার করে বলেন, বিবেকের তাড়নায় আন্দোলনে ছিলাম। সরকার দলীয় রাজনীতি করলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলাম কারণ রাজনীতিতে আমি বৈষম্যের শিকার, আমার পদ-পদবী ছিল না। এটা সত্য আমি বাবর ভাইয়ের সঙ্গে রাজনীতিতে ছিলাম।