বঙ্গবন্ধুর প্রতি কোটি কোটি মানুষের শ্রদ্ধা আমাকে বিমোহিত করে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বাবার মুখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও জীবনী বহুবার শুনেছি। শোনতে শোনতে কখন যে বঙ্গবন্ধু হৃদয়ের মণিকোঠায় গেঁথে গেছে বোঝতেও পারেনি। ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম, পড়তে শিখলাম। বাসায় বড় ভাই ইত্তেফাক পেপার রাখতেন। পেপারে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যে কোনো লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। বঙ্গবন্ধু এতো বড়মনের মানুষ ছিলেন, অথচ খুবই সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। তিনি দেশের মানুষকে আপনজনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন ও বিশ্বাস করতেন।
পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাবার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল। তাঁর ভালোবাসায় কোনো স্বার্থ ছিল না। দেশের প্রতিও বাবার মমত্ববোধ ছিল।বিশেষ করে নিজ গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের মানুষের প্রতি ছিল তাঁর গভীর ভালোবাসা। বাবা অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। এখন তো আশপাশে অনেক অসাম্প্রদায়িকদের দেখি, বাবা তাদের মতো অসাম্প্রদায়িক ছিলেন না। বাবা ছিলেন মনে-প্রাণে অসাম্প্রদায়িক। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। সে-ই সুবাধে আমাদের সরকারি আবাসিক এলাকায় থাকা। একবার বাবার পাশের গ্রাম থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন বয়স্ক লোক তার মেয়েকে নিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় এসেছিলেন। রাতে ওই বাসায় থাকতে চাইলে লোকটি হিন্দু তাই থাকতে দেননি। বাবা জানতে পেরে তাদের বাসায় নিয়ে আসেন। রাতে যথাসাধ্য আপ্যায়ন করেন। পরের দিন সকালে নাস্তা করিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দেন।
প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে বাবার ভূমিকা ছিল। যুদ্ধ শেষে বাবাকে অনেকে সার্টিফিকেট নিতে বলেছিলেন, বাবা নেননি। শোনা যায়, মুক্তিযুদ্ধ না করেও কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিচ্ছেন।
ছোটকালে দেখতাম বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণে মানুষের ভিতরে অলিখিত নিষেধাজ্ঞার ভয় কাজ করতো। ওই সময়ে বাবাকে দেখেছি, অকেতোভয়ে মানুষের সাথে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা করতে। বাবা খুব-ই গর্বের সাথে বুক ফুলিয়ে বঙ্গবন্ধুর কথা বলতেন। যাদের মুখে কখনো বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ তো দূরের কথা, বরং নাম শোনলে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠতো, আজ তারাই বঙ্গবন্ধুর নাম জবতে জবতে মুখে ফেনা তুলে। সরকারি সুযোগ- সুবিধা ভোগকারী নও বঙ্গবন্ধু প্রেমীরা নানাভাবে নিজেদের জাহির করার চেষ্টা করেন। এই সুবিধাবাদীদের দুঃসময়ে আন্দোলন, সংগ্রামে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, দলীয় অফিসের আশপাশেও দেখা যায়নি। অথচ এদের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণকারী প্রকৃত আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় দেশ যেমন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, বিদেশেও তেমন প্রশংসিত হচ্ছে। ঠিক সেইভাবে প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মূল্যায়িত হলে ভবিষ্যত প্রজন্মের তরুণ নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হবে। আগামী প্রজন্মের শিশুদের শুধু মুখে নয়, বুকেও থাকুক বঙ্গবন্ধু। ক্ষুদ্র একজন মানুষ হিসেবে শেখ হাসিনার কাছে এটিই আমার চাওয়া।
লেখক: মো. নবী আলম, উন্নয়ন কর্মী ও সাংবাদিক।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।
গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net