শিরোনামহীন চিঠি

::
প্রকাশ: ১ বছর আগে

মা, আমাদের ছেড়ে তুমি কোথায় চলে গেলে? তোমার আদরের মেয়ে মানহা তোমাকে না দেখে সারাক্ষণ কাঁদে। গতকাল রাতে তোমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাবা সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকে, কথাও বলে না, হাসেও না, ঘর থেকে তেমন একটা বেরও হয় না। রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কী যেন বলে।

মা, তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেছ, এই কথা শোনে প্রতিদিন আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী আরও কত মানুষজন বাসায় আসে। ওরা বাবাকে সান্তনা দেয়, আর আমাকে বলে তুমি বড় ছেলে, ছোট ভাই-বোনদের তোমাকেই দেখতে হবে, ওদের খেয়াল রাখতে হবে। ওরা কেন এসব বলে মা? এসব বললে আমার খুব কান্না পায়।

মা, ছোট ফুফিও যেন কেমন। প্রতিদিন আমাদের সাথে ফোনে কথা বলে আর কাঁদে। ফুফি এতো কান্না করে কেন? ফোনের ওপাশ থেকে ফুফির কান্না শোনে আমার কষ্ট লাগে না বুঝি। মা ফুফিকে কান্না করতে মানা করে দিও।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

সেদিন, এই দুই-তিনদিন আগে কি হয়েছিলো জানো মা? তোমার ছোট ছেলে আরাফ স্কুল থেকে বাসায় ফিরে সে কী কান্না। জিজ্ঞেস করতেই আমাকে জড়িয়ে ধরে আরও জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, মা কোথায়, মা কোথায়? বন্ধুদের মায়েরা স্কুল ছুটির পর ওদের আনতে যায়। মা কেন আমাকে আনতে যায় না? বন্ধুদের মায়েদের মাঝে আমি মাকে কেন খোঁজে পাই না? আমি ওকে কী করে বোঝাই, মা তুমি যে আমাদের ছেড়ে অজানা দেশে চলে গেছ, সেখান থেকে কখনো ফিরে আসবে না। কাঁদতে কাঁদতে বুকে মাথা রেখে আরাফ কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতেই পারিনি।

মা, ছোট মামী ও বড় মামী বাসায় এসেছিল, সাথে মাওয়া ও হাফসাও এসেছিল। মানহা, মাওয়া ও হাফসার সাথে খেলা করার সময় হঠাৎ কাঁদতে থাকে, কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে আমার মা কোথায়, আমি মায়ের কাছে যাব, মায়ের কাছে যাব, আমার মাকে এনে দাও, মাকে এনে দাও, সে কি কান্না। মানহার কান্না দেখে বাসার সবাই ওকে বুকে জড়িয়ে কী যেন বলে, তবুও তোমার আদরের ছোট মেয়ের কান্না থামে না। মানহার কান্না দেখে মাওয়া ও হাফসা ওকে বলে তুমি কেঁদো না, তোমার মা আকাশ থেকে তোমাকে দেখছে, তুমি কাঁদলে উনি কষ্ট পাবেন। মা, সত্যিই তুমি কি আকাশে আছ? আকাশ থেকে চলে আস মা। আমরা তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না। তুমি ফিরে এসো মা।

মা, এখন আর খেতে বসলে ভালো লাগে না। ডাইনিং টেবিলের চারপাশের চেয়ারে বসে বাবা, আরাফ, মানহা ও আমি খেতে বসি। সবগুলো চেয়ারে সবাই বসা, শুধু তোমার চেয়ারটাই খালি। খাবার টেবিলে তুমি নাই তাই খেতেও ভালো লাগে না। খাবার খেতে আগের মতো স্বাদ ও মজা লাগে না। প্রতিদিন তুমি আমাদের জন‍্য নানা স্বাদের কত রকমের খাবার রান্না করতে। সেই খাবার সবাই পেট ভরে তৃপ্তিসহ খেতাম। তুমি কি আমাদের আর রান্না করে খাওয়াবে না? কতদিন হলো তোমার হাতের রান্না খাই না।

কাল ঈদ। মা, আমার বন্ধুরা সবাই বলছে ঈদের দিন সকালে ওদের মায়ের হাতের সেমাই খেয়ে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাবে। নামাজ শেষে মাকে সালাম করে সালামি নিবে। আরও কত কথা বলাবলি করছে। আমি, আরাফ আর মানহা কাকে সালাম করব? আমাদেরও তো ইচ্ছে করে তোমার হাতের সেমাই খেয়ে ঈদগাহে যেতে।

মা, একটু আগে নানু ফোন করেছিল। নানুকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি কখন আসবে। নানু কিছু বললো না, শুধু ফোনের ওপাশ থেকে কাঁদতে লাগলো। নানুর কান্না শোনে আমারও কান্না পেল, আমিও কাঁদতে লাগলাম। আমার কান্না শোনে নানু বললেন, তুমি নাকি চিরদিনের জন্য আকাশে চলে গেছো। আকাশের তারা হয়ে আমাদের দেখছো।

মা, এখন অনেক রাত, আরাফ, মানহা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিছুতেই আমার ঘুম আসছে না, শুধুই তোমার কথা মনে পড়ছে। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। আকাশে অনেক তারা ওঠেছে, জ্বলজ্বল করছে। তারাদের মাঝে আমি তোমাকে খুঁজছি। মা, তুমি কি আমাকে দেখতে পাচ্ছো? আমি তো তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না, তবে অনুভব করতে পারছি। মা, তুমি ওই দূর আকাশ থেকে আমাদের জন্য দোয়া কর। তুমি আকাশের ওপারে ভালো থেকো। ভোর হয়ে আসছে, কিছুক্ষণ পর মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসবে। আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে, তুমিও আলোতে মিশে যাবে। প্রতিদিন রাতে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকব তোমার অপেক্ষায়।

লেখক: মো. নবী আলম, উন্নয়ন কর্মী ও সাংবাদিক।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net