স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শনিবারের (২৯ জুলাই) বিএনপির সহিংসতার ঘটনায় ৭০০ জনের মতো ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। সহিংসতায় যাদের সংশ্লিষ্টতা থাকবে না, তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে কত জনকে ইতোমধ্যে আদালতে পাঠানো হয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা তিনি জানেন না।
রোববার (৩০ জুলাই) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনও ধরনের পরিবেশ, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন, জাপান ও কোরিয়ান প্রতিনিধি ছিল। নির্বাচন কেমন হবে সেসব বিষয়ে তারা পর্যবেক্ষণ করছে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী প্রস্তুতি নিয়েছে? এ বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, আমাদের পুলিশ বাহিনী, বিজিবি, আনসার কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত। তারা তাদের দক্ষতা, বিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্বে এগিয়ে রয়েছে। যেকোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের সক্ষমতা রয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, একাত্তরের পর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলোতে সঠিক ভূমিকা রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখানে মন্ত্রণালয়ের কোনও ভূমিকা থাকবে না। মুখ্য ভূমিকায় থাকবে ইলেকশন কমিশন। তাদের তত্ত্বাবধায়নেই আমাদের যত সিকিউরিটি ফোর্সগুলো থাকবে, প্রশাসনও থাকবে। আমরা বলেছি, এই সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাউকে বদলি-পদায়ন কিছুই করতে পারবে না।
তিনি বলেন, তারা জানতে চেয়েছিলেন আমাদের পুলিশ ফোর্স সংখ্যা পর্যাপ্ত আছে কি না। আমরা জানিয়েছি, আমাদের একটা শৃঙ্খল ফোর্স রয়েছে। এক বিলিয়নের মতো তৈরি রয়েছে নির্বাচনের জন্য। পুলিশ ফোর্সের পাশাপাশি তারা কাজ করবে। একটি শান্তিপূর্ণ এবং সংঘাতমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা প্রস্তুত। তারা আমাদের কথায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা এসেছেন আমরা নির্বাচনের জন্য কতটা প্রস্তুত। আমরা তাদের বলে দিয়েছি আমরা প্রস্তুত। নির্বাচন কমিশন যেদিন থেকে তফসিল ঘোষণা করবে সেদিন থেকে আমাদের পুরো ফোর্স তাদের তত্ত্বাবধায়নে চলে যাবে। শুধু ফোর্স নয়, যা কিছু আছে সবই তাদের নেতৃত্বে চলে যাবে। নির্বাচনের দিন কী করে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা হবে সে বিষয় আমরা তাদের জানিয়েছি।
ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে গতকাল শনিবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় রাজধানীর একাধিক থানায় ১১টি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় বিএনপির ৫৪৯ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় অনেককে আসামি করা হয়েছে মামলায়।
সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জানান, এসব মামলায় ৪৬৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাস পোড়ানো, ভাঙচুর, বিস্ফোরক আইন ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এসব মামলা করা হয়েছে। মামলাগুলো হয়েছে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম, দারুস সালাম, উত্তরা পূর্ব, বংশাল ও সূত্রাপুর থানায়।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মাসুদ আলী বলেন, ‘৩২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করা করা হয়েছে। ওই মামলার বাদী পুলিশ।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অজ্ঞাতের কোনো সংখ্যা নেই। অসংখ্য আসামিকে অজ্ঞাত করা হয়েছে।’
উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মো. কাজী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গতকালকের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে ওই মামলা তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’ তিনিও বলেন, ‘অসংখ্য আসামিকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।’
দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল হোসেন বলেন, ‘গতকালকের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’ তবে কতজনকে আসামি করা হয়েছে তা তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি তিনি।
এদিকে লালবাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জাফর হোসেন বলেন, ‘পুলিশ দুটি মামলা করেছে। মামলায় বিএনপির সাড়ে চারশ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। দুই মামলায় পাঁচজন করে মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
বংশাল থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ থানায় করা মামলার আসামি ২৫ জন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি রয়েছে। মামলার বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার।
বংশাল থানার ওসি মঈনুল ইসলাম জানান, মামলায় এহাজারনামীয় আসামি করা হয়েছে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীসহ ২৪ নেতাকর্মীকে।
এছাড়া সূত্রাপুর থানার এসআই নাসির উদ্দিন হাওলাদারের করা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আজ আদালতে পাঠানোর কথা রয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০/৪০০ জনকে।
এদিকে দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গতকালকে ডিএমপি অনুমতি না দেওয়া সত্ত্বেও বিএনপি একটি বেআইনী সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে অগ্নিসংযোগ করে বাস ভাঙচুর করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়, পুলিশের গাড়ি, এপিসি ভাঙচুর ও পুলিশের উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেওয়া হয়।’
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত এসব মামলায় এজাহারে উল্লেখিত আসামি ৪৬৯ জন। মামলায় উল্লেখিত আসামিসহ অন্যান্য আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৪৯ জন। ডিবি পুলিশ, ক্রাইম ডিভিশনসহ অন্যান্য বিভাগের টিম এই আসামিদের গ্রেপ্তার করেছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
দায়ের করা এসব মামলার বাইরেও আরও কয়েকটি থানায় (দারুস সালাম, ডেমরা ও উত্তরা পশ্চিম থানা) মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি ফারুক হোসেন বলেন, ‘বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমানুল্লাহ আমানকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনো মামলায় আসামি করা হয়েছে কিনা- তা মামলার এজাহার পর্যালোচনা করলে জানা যাবে।’
গতকালকে বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদেরকে সশস্ত্র অবস্থায় ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ছিল কিন্তু পুলিশের অনুমতি না থাকায় তারা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। বিএনপির কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা যখন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ জড়ায় তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের অবস্থান করেছেন। এখানে পুলিশের কার্যক্রমের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কার্যক্রমে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’