রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো দিন দিন অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। সেখানে প্রতিনিয়ত হত্যা, মানব পাচার, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, গুম, অপহরণ ও মুক্তিপন দাবী এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। এসব কারনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও সশস্ত্র হামলার ঘটনাগুলো নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চলমান না থাকলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে এটা বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ প্রথম থেকেই জানিয়ে আসছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ (আরসা) ১০টি দুর্বৃত্ত দল ও সশস্ত্র গুষ্টি সক্রিয় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দলগুলো প্রায়ই মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২১ সালে ২২টি এবং ২০২২ সালে ৩২টি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন কারনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে। ২০২১-২২ সালে সংগঠিত ২২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মধ্যে ৬০টি ছিল নাশকতামূলক। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পাঁচ হাজার সশস্ত্র জঙ্গি এবং তাদের লক্ষাধিক সমর্থক রয়েছে। রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, অস্ত্র, মাদক পাচার, চোরাচালান সহ নানা অপরাধে জড়িত। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উপকূল থেকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশীদের পাচারের ঘটনা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।। মিয়ানমার থেকে অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে অবৈধ ভাবে মাদক ও ইয়াবা পাচার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও সীমান্তের নিরাপত্তাহীনতা পুরো দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তার হুমকি তৈরি করছে।
ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা জনসংখ্যার ঘনত্বের কারনেও এসব সহিংস ঘটনা ঘটছে। ক্যাম্প এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। বর্তমানে সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা এই ক্যাম্পগুলোতে রয়েছে। একটা ছোট এলাকায় বিপুল পরিমান মানুষের বসবাস থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।এর পাশাপাশি বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব, অর্থনৈতিক চাপ এবং অনৈতিক কাজের প্রলোভন ও সুযোগ মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতে পারে। এসব স্থানে সন্ত্রাসীদের দমন, গ্রেপ্তার এবং অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য ক্যাম্পগুলোর ভেতরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী অভিযান চালালে জনঘনত্বের কারনে অনেক সাধারণ রোহিঙ্গাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে যা সবসময় বিবেচনায় রাখতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উৎঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত নাশকতা বলে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা, নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচলের জন্য প্রশস্ত করতে হবে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্লকের পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরী, অপেক্ষাকৃত কম দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি ত্রিপল বা অন্য কিছু দিয়ে ক্যাম্পগুলো বানাতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন করতে হবে।আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ক্যাম্পের ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে দোকানপাট তৈরি করা যাবে না এবং যানবাহন চলাচলের সুবিধার জন্য প্রবেশ পথে লে-আউট স্থাপন করতে হবে। ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকে ওয়ারলেস টাওয়ার বানিয়ে ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং অপরাধ করে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পের পালানো বন্ধ করতে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করতে হবে। ক্যাম্পের জনঘনত্ব কমানো গেলেই কেবলমাত্র এ ধরনের কার্যক্রম নেয়া সম্ভব। এজন্য কিছু রোহিঙ্গাকে ক্যাম্প থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে। সেইসাথে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। বাংলাদেশের একার পক্ষে এই চাপ নেয়া সম্ভব না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রন, পরিবেশ বিপর্যয় এবং কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরগুলোর ওপর থেকে চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে যা একটি দূরদর্শী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। রোহিঙ্গাদেরকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নিতে বন্ধুরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা চেয়ে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রথম প্রস্তাব হলো রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নেওয়ার খরচ বহন করা। আর দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হলো, রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে আরও নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা। ভাসানচরে আর ও ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা দরকার, এই স্থানান্তর ব্যয়বহুল।বাংলাদেশের সাথে কাজ করা বন্ধুরাষ্ট্রগুলো কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নেওয়ার খরচ বহনে সহায়তা করবে বলে বাংলাদেশ আশা করে। ভাসানচরে যে জমি আছে, তার তিন ভাগের এক ভাগ ব্যবহার করা হয়েছে বাকি দুই ভাগ জায়গাতেও অবকাঠামো নির্মিত হলে আরও রোহিঙ্গাকে সেখানে নেওয়া যাবে। বাংলাদেশ সেখানে নতুন অবকাঠামো নির্মাণে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে সহায়তা চেয়েছে। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলো এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসলে ক্যাম্পের পরিস্থিতির উন্নতি হবে আশা করা যায়।
বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলা করছে এবং এখন পর্যন্ত ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পের চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি চেকপোস্ট স্থাপন করা ও টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্ত ক্যাম্পসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্ত্রধারীদের ধরতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পগুলোতে ড্রোন ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার বসিয়ে সন্ত্রাসীদের দমন ও শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে যৌথ অভিযান চলছে। বিভিন্ন অপরাধে ৫ হাজার ২২৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত এক বছরে বিভিন্ন ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৩৮০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও ১৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সময়ে ২৬ লাখের বেশি ইয়াবা ও ২৯ কেজি আইসসহ ৭৭৯ রোহিঙ্গাকে ধরা হয় এবং ১৩৬ টি অপহরণের ঘটনায় ১৮ টি মামলা দায়ের ও ২৯ জনকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধা, চাঁদাবাজি, মাদক ও সোনা চোরাচালান, অপহরণ, ধর্ষণ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা সহ নানা ধরনের সশস্ত্র তৎপরতার পেছনে কিছু গোষ্ঠী জড়িত এবং অন্যান্য আরও গোষ্ঠীর উপস্থিতি থাকাও অস্বাভাবিক নয়। এ ঘটনাগুলোর কারনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পূর্ব পর্যন্ত ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার দাবি জানিয়েছে। স্থানীয় অধিবাসির মধ্যে যারা এসব সন্ত্রাসীকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে তাদের বিরুদ্ধে ও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সীমান্ত এলাকায় এসব ঘটনা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করলে এ অঞ্চলে নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য বহুমাত্রিক সামাজিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত হুমকি সৃষ্টি করছে, সামনের দিনগুলোতে তা আরো জটিল হবে।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রেষণা কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে। প্রত্যাবাসনের বিরোধীদের নিস্ক্রিয় করতে প্রত্যাবাসনের পক্ষে নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বে ছোট ছোট দল ও উপদল তৈরি করে ক্যাম্পের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। স্বেচ্ছায় পাহারা ব্যবস্থার কারণে ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো অপরাধ কিছুটা কমেছে, মাদকও অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়েছে।
রোহিঙ্গাদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ত্রান সহায়তার উপর থেকে চাপ কমাতে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে ত্রান সহায়তার পাশাপাশি এই বিষয়ে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও ত্রান সহায়তা কমানো যাবে না ও তা চলমান রাখতে হবে। রোহিঙ্গাদের সাথে স্থানীয় জনগণের সম্প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।দেশী ও আন্তর্জাতিক এন জি ও এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থা এই কাজে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ক্যাম্পের জনঘনত্ব কমিয়ে দ্রুত রোহিঙ্গাদেরকে ভাসানচরে পাঠানোর কার্যক্রম নিতে হবে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এই উদ্যোগের গুরুত্ব ভালভাবে বুঝাতে হবে এবং তাদেরকে দ্রুত এই কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।
রোহিঙ্গাদেরকে কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে যাতে তারা স্থানীয়দের জন্য হুমকি কারন না হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো যাতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যহত করতে না পারে সেজন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।
মাদক ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতে হবে। ড্রোন ক্যামেরা, গোয়েন্দা তৎপরতা ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নজরদারি আর বাড়াতে হবে। নিরাপত্তা তল্লাসী ও টহলের পাশাপাশি অপরাধী নির্মূলে তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।ক্যাম্পের সামগ্রিক অপরাধ দমনে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হবে।
রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিবছর ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের প্রতি মানবিক সহায়তার দৃষ্টান্ত অব্যাহত রাখবে তবে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে দেবে না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এপিবিএনের তিনটি ব্যাটালিয়নের দুই হাজারের কিছু বেশি সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জনসংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। যে হারে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে তাতে সীমিতসংখ্যক এপিবিএন সদস্য দিয়ে এই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সৃষ্ট জটিলতা তা যেকোনো প্রশিক্ষিত বাহিনীর জন্যও চ্যালেঞ্জিং কাজ। সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে সেখানে সেনা মোতায়েন করার বিষয়েও পরিকল্পনা করছে।রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী সবসময় স্ট্যান্ডবাই থাকে এবং প্রয়োজন হলে এসওপি অনুযায়ী তাদেরকে সেখানে নিয়োজিত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এই সংকট দীর্ঘায়িত হলে ধীরে ধীরে তা আঞ্চলিক নিরাপত্তার উপর চাপ ফেলবে যা মোটেও কাম্য নয়। দ্রুত প্রত্যাবাসনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আঞ্চলিক দেশগুলোর সহযোগিতা নিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে না পারলে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে সশস্ত্র তৎপরতা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যাবাসন শুরু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। ‘প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান’ সেটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় রেখে তা নিশ্চিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে কার্যকরী ভূমিকা নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে।
লেখক: ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এম ফিল। মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক।