রেলে আগুন নিয়ে সারাদিনে যে যা বললেন

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ১ বছর আগে

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাসে নাশকতার পর রেলে বড় ধরনের নাশকতা দেখল বাংলাদেশ।

নাশকতার ঘটনায় বিএনপিকে দোষারোপ করছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলছেন, বিএনপি যখনই কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয় তখনই রেলে নাশকতার ঘটনা ঘটে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চলমান সংগ্রাম থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন লাগানো হয়েছে।

এদিকে রেলে নাশকতাকে ‘বিদেশি নেতাদের মদদ’ বলছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান বলেছেন, বিদেশি নেতাদের মদদে দেশি এজেন্টের মাধ্যমে দেশে হরতাল-অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও নাশকতা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

বিএনপি যখনই কর্মসূচি দেয় তখনই রেলে নাশকতা ঘটে : রেলমন্ত্রী
বিএনপি যখনই কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয় তখনই রেলে নাশকতার ঘটনা ঘটে বলে মন্তব্য করেছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন লাগার ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে রেলমন্ত্রী এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, রেলের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আজকের ঘটনার জন্য ডিভিশনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাদেরকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

রেলে আগুন লাগার ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে রেলমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখনই রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে তখনই সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এর অর্থ যারা কর্মসূচি দিচ্ছে তারাই এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। যাত্রী হয়ে গান পাউডার নিয়ে রেলে উঠলে কিভাবে আমরা বুঝবো তারা নাশকতা করার জন্য উঠেছে। আমরা চেষ্টা করছি। রেলকে তারা আগুনের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে। কেউ যদি পরিকল্পিত সহিংসতা করে তাহলে কখনোই নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়।

মন্ত্রী আরও বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে রেলের এই সহিংসতা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে রেলে আক্রমণ হলেও আমরা রেল চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তা এখন নাশকতায় রুপ নিয়েছে। গত ১৬ নভেম্বর টাঙাইলে একটি রেলে আগুন দেওয়া হয়। এরপর জামালপুরে আগুন দেওয়া হয় ১৯ তারিখে। ২২ তারিখে আগুন দেওয়া হয় সিলেটে। গাজীপুরে রেললাইন কাটা হয় ১৩ ডিসেম্বর। এই ঘটনাগুলো একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কিত।

রেলে নাশকতা ফৌজদারি অপরাধ উল্লেখ করে সুজন পূর্নাঙ্গ ঘটনা জানার আগ পর্যন্ত এ ব্য্যাপারে কোনো মন্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

রেলে নাশকতা কেন ঠেকানো যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, দেশের ট্রেনে এক্সেস কন্ট্রোল এর ব্যবস্থা নেই। তাই রেলের ভেতরের নিরাপত্তা জোরদার করা যাচ্ছেনা। তবে ঝুকিপূর্ণ স্টেশনের বাইরে ট্রলির ব্যবস্থা করা হয়েছে। রেলের নিরাপত্তা বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ২৭০০ আনসার মোতায়েনের আবেদন করা হয়েছে। শিগগিরই তারা কাজ শুরু করবেন।

তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন, বিবৃতিতে যা বললেন রিজভী
তেজগাঁওয়ে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে সুপরিকল্পিত নাশকতা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে তিনি বলেছেন, নাশকতাকারীরা মানবসভ্যতার শত্রুপক্ষ, এরা মানবজাতিকেই অস্তিত্বহীন করতে চায়।

আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেনের পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভোরে যারা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন দিয়ে চারজন যাত্রীর প্রাণপ্রদীপ নিভিয়ে দিলো তারা নিঃসন্দেহে মানুষ নামের কলঙ্ক।

মহল বিশেষের প্রশ্রয় ব্যতিরেকে এ ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ করা সম্ভব নয়। মূলত চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এটি কুটচাল কি না তা নিয়ে জনগণের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের রোমহর্ষক ও পৈশাচিক কাজ কেবল অবৈধ ও গণবিরোধী শক্তির মদদেই হওয়া সম্ভব। আমি এই বর্বরোচিত ও হৃদয়বিদারক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, ধিক্কার ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা এই ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।

যোগ করেন, আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে হতাহতের ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতিকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি। নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।

বিদেশি নেতাদের মদদে দেশি এজেন্টের মাধ্যমে নাশকতা করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার
বিদেশি নেতাদের মদদে দেশি এজেন্টের মাধ্যমে দেশে হরতাল-অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও নাশকতা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান।

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তেজগাঁওয়ে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ও আহত দেখতে এসে এ মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজধানীর বনানী কাকলী এলাকার কাছে এলে ‘জ’ বগিতে যাত্রীরা আগুন দেখতে পায়। এ সময় অনেকে জানালা দিয়ে অনেকে দরজা দিয়ে নামতে পারলেও নামতে না পারায় চারজন জীবিত পুড়ে মারা গেছে। তাদের মধ্যে এক মা ও তার সন্তান ইয়াসিনকে শনাক্ত করা গেছে। বাকি দুজনকে শনাক্ত করা যায়নি। আমাদের সিআইডি এক্সপার্ট ডিএমপি সবাই তাদের পরিচয় শনাক্তে একসঙ্গে কাজ করছে। তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। তাদের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে পরবর্তীতে তাদের শনাক্ত করা যায়।

কমিশনার আরও বলেন, এই ঘটনায় পুলিশের সব ইউনিট কাজ করছে। যারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে নাশকতার সঙ্গে যুক্ত তাদের খুঁজে বের করার জন্য। আপনারা জানেন একটি রাজনৈতিক দলের লোকজন কিছুদিন ধরে হরতাল-অবরোধের নামে মানুষের জীবন ও সম্পদ ধ্বংস করে চলছে। সেই প্রক্রিয়ারই একটি অংশ হিসাবে প্রাথমিকভাবে পুলিশ এটি মনে করে।

শনাক্ত মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে কি না, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, এই মরদেহ দুটির পোস্টমর্টেম না। যেহেতু আগুনে পোড়া এটি দৃশ্যমান। রেলওয়ে পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এই নাশকতার দায় আপনি কার বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই যারা অবরোধ করছে, হরতাল করছে তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এটি আমাদের কাছে স্পষ্ট। এর আগে যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন কয়েকদিন আগে গাজীপুরে রেললাইন কেটে ফেলে দুর্ঘটনার মাধ্যমে একজনকে হত্যা করা হয়েছে, আমি এটাকে হত্যাই বলব। এই ঘটনাটি যারাই ঘটিয়েছে তারা হরতাল-অবরোধকারীর অংশ বলেই মনে করি। শুধু একটি অংশ নয়, এটি কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তেই তাদের যারা অনুসারী আছে তাদের যারা লেলিয়ে দেওয়া লোকজন আছে তারাই এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

এখানে তো রেল পুলিশ ছিল তাদের কোনো গাফিলতি আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। একজন আহত ব্যক্তি যিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, যারা আগুন দিয়েছে তারা ট্রেনের ভেতরেই ছিল। তিনি দেখেছেন সিটের ভেতরেই প্রথম তারা আগুন দেয়। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। যে যেভাবে পেরেছে ছোটাছুটি করছে কেউ দরজা দিয়ে কেউ জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে বের হতে পেরেছে। যেহেতু তখন ভোর ছিল তখন অনেকেই ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। আমরা দেখেছি একজন মা নাদিরা আক্তার পপি তার তিন বছরের সন্তান মা ছেলেকে জড়িয়ে ছিল, ছেলে মাকে জড়িয়ে ছিল ওই অবস্থাতেই পুড়ে মারা গেছে তারা। মা ছেলেকে নিয়ে হয়ত বাঁচার অনেক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের আর বাঁচতে পারেনি।

বাসে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বা ট্রেনে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে সে বিষয়ে আপনারা নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা জানেন এর আগে যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউই রেহাই পায়নি। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই ঘটনাও যারা ঘটিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।