রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতি আস্থাহীনতাই খালাসী নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যাপক অনুপস্থিতির কারণ

::
প্রকাশ: ২ years ago

মো. মনিরুজ্জামান মনির: 
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির বিরোধিতা সত্ত্বেও গত ২৫ নভেম্বর সারাদেশের ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭২৬ জন পরীক্ষার্থীর নিয়োগ পরীক্ষা একযোগে ঢাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজে অনুষ্ঠিত হয়। এ বিশাল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা রাজধানীতে নিলেও এর আগে সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগে মাত্র ৪০ হাজার পরীক্ষার্থীর নিয়োগ পরীক্ষা বিভাগীয় পর্যায়ে নেয়া হয়েছিল। কোন অসৎ উদ্দেশ্য থাকায় প্রায় ৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীর নিয়োগ পরীক্ষা একযোগে ঢাকায় নেয়া হচ্ছে বলে সিদ্ধান্তের সাথে সাথে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছিল।

রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির একটি টিম রেলওয়ে খালাসি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যা খুবই কম ছিল। রাজধানীর মিরপুর কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, রামপুরা একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, উত্তরা হাই স্কুল এন্ড কলেজ সহ বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানিয়েছেন যেখানে ৮০ জন পরীক্ষার্থী আসন বিন্যাস করা হয়েছিল সেখানে উপস্থিত ছিল মাত্র ১১ জন পরীক্ষার্থী, কোথাও ৬৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯ উপস্থিত, ৬৫ জনের মধ্যে ১৬ জন উপস্থিত, ১০২ জনের মধ্যে ২৫ জন উপস্থিত, ৭০ জনের মধ্যে ৭ জন উপস্থিত, ৮০ জনের মধ্যে ১৯ জন উপস্থিত, ৭০ জনের মধ্যে ১২ জন উপস্থিত, ৭০ জনের মধ্যে ১৩ জন উপস্থিত। আমাদের পরিদর্শনে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রর প্রায় একই চিত্র উঠে আসে। প্রায় ২ লাখ ৬৮ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২০% থেকে ২৫% পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে এসেছেন।

অনেক পরীক্ষার্থীকে বলতে শোনা গেছে রেলপথ মন্ত্রীর লোকজন সারাদেশে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে এমসিকিউ এবং ভাইবাসহ চাকরি দেবার কথা বিভিন্ন জনকে নিশ্চিত করেছে। সেখানে পরীক্ষা দিয়ে কি হবে? অভিযোগ রয়েছে এর আগেও অনেক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও অনেকেই রেলওয়েতে চাকরি পেয়েছেন। কিছু কিছু পরীক্ষাথীর সাথে উপস্থিতির সংখ্যা কম হওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে তারা বলেন, পরীক্ষা হচ্ছে লোক দেখানো যাদের চাকরি হওয়ার তারা পরীক্ষা না দিলেও হবে। কারণ রেল মন্ত্রীর আত্মীয়—স্বজনরা এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলভবনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিয়োগ দুর্নীতির সাথে সরাসরি জড়িত। মেধা তালিকায় ২০% নিয়োগ পাবে আর ৮০% নিয়োগ বানিজ্য সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়োগ হবে। রেলপথ মন্ত্রী ৮০ কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্যের মিশন নিয়ে খালাসী পরীক্ষা সম্পূর্ণ করেছেন। এসব অভিযোগ উঠায় অনেকেই বাড়তি অর্থ খরচ করে ঢাকায় এসে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী হননি।

স্বৈরাচারিতামূলক নিয়োগ বিধিমালায় জনবল নিয়োগ করা হচ্ছে। নিয়োগ বিধি সংশোধন এর জন্য কমিটি গঠন হলেও গত এক বছরেও সংশোধন হয়নি। রেলওয়ে পোষ্যদের অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে। নিয়োগবিধি সংশোধন না করে জনবল নিয়োগে তাড়াহুড়ো দেখে মনে হচ্ছে বর্তমান রেলপথ মন্ত্রী তার মেয়াদকালীন সময়ে হাজার কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের মিশনে নেমেছেন। রেলপথ মন্ত্রী এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপর আস্থাহীনতার কারণেই রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রতি চাকরি প্রত্যাশীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

 

লেখক: কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি।