সালটি আমার সুনির্দিষ্টভাবে মনে নেই। সম্ভবত ১৯৮৩-৮৪ সাল হবে। তখন আমি ছোট। প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস টু কি থ্রিতে পড়ি। কোনো এক রোজার ঈদ। বাসায় কাউকে না বলে গাজীপুরে ঝুমুর সিনেমা হলে ছবি দেখতে যাই। রাজ্জাক-ববিতা অভিনীত লাইলি মজনু ছবি। সিনেমা হলে ওটাই আমার প্রথম ছবি।
আমাদের তিনতালার ফিরোজ আমাকে ও পাশের বাসার খোকন ভাইকে সাথে করে নিয়ে যায়। দুপুর ১২টার শো। গাড়ি থেকে নেমে দেখি সিনেমা হলের টিকিট কাউন্টারে বিরাট লাইন। টিকেট কাটা নিয়ে ধাক্কাধাক্কি। মুহূর্তেই সব টিকেট শেষ। এত কষ্ট করে এলাম। ছবি বুঝি দেখা হবে না। ফিরোজ বললো, তোরা একটু দাঁড়া, আমি টিকেটের ব্যবস্থা করছি। দেখি কয়েকজন লোক বলতে লাগছে টিকিট লাগবে, টিকেট..। ফিরোজ ওদের কাছ থেকে টিকিটের মূল্যের ডবল মূল্য দিয়ে আমাদের জন্য তিনটা টিকেট কিনল। আমি বললাম, ওরা টিকেট পেল কোথায়? ফিরোজ বললো ও তুই বুঝবি না, চল হলের ভিতরে যাই। সত্যিই সেদিন আমি বুঝি নাই, ওরা যে ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি করে।
পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
হলে ঢুকে আমি ভয় পেয়ে যাই। ফিরোজকে বললাম, ছবি দেখবো না, রাত হয়ে গেছে, চল চলে যাই। আব্বা-আম্মা, বড় ভাই রাগ করবেন। ফিরোজ বললো ধুর বোকা, সিনেমা হলের সব লাইট বন্ধ করে দিছে তাই এত অন্ধকার। এখন তো বাজে দুপুর ১২টা।
আমি স্বস্তি পেলাম। যাক বাঁচা গেল। ভেবেছিলাম অনেক রাত হয়ে গেছে। ছবি তো তিন ঘন্টা।দিনে দিনেই বাসায় ফেরা যাবে। আব্বা কিছুই জানতে পারবেন না। জানলে কপালে দুঃখ আছে।
ছবি আরম্ভ হওয়ার আগে সবাই হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। আমিও দাঁড়ালাম। দেখি বড় পর্দায় লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা পত পত করে উড়ছে, সঙ্গে জাতীয় সংগীত বাজাতে লাগলো। প্রথম বড় রুপালি পর্দায় এভাবে পতাকা উড়তে দেখে ও জাতীয় সংগীত বাজতে শোনে আমার হৃদয়ে অজানা এক অনুভূতি সৃষ্টি হলো। এ দৃশ্য ও অনুভূতি কখনো ভোলার নয়।
যথারীতি ছবি শুরু হল। বেশ আনন্দ নিয়ে দেখলাম। কখন যে শেষ হলো, বুঝতেই পারলাম না।
ছবি শেষ, হল থেকে বের হলাম। এমন সময় কে যেন নাম ধরে ডাকলো। আমি ভয়ে চমকে উঠলাম। খুব আপনজনের কণ্ঠ। তাও আবার ওপর থেকে আসছে। পিছনে ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখি আব্বা দাঁড়িয়ে। আমার তো মাথায় হাত। হাত-পা কাঁপা শুরু করছে। এখানেই পিটুনি শুরু করেন কি না। আব্বা ওপর থেকে নেমে কিছু না বলে আমাদের সবাইকে বাসায় নিয়ে গেলেন। পথে সমস্ত রাস্তায় বুক ধড়ফড় করছে। বাসায় গিয়ে আচ্ছা মত দিবে। গাড়িতে বসে আল্লাহ্ আল্লাহ্ করতে লাগলাম। ঈদের দিন মাইর খেতে হবে।
বাসায় আসলাম, আব্বা কিছু বললেন না। বড় ভাই ও বোন দুজনে বলতে লাগলেন, আজ তোর কপালে মাইর আছে। কাউকে না বলে সিনেমা দেখা। আম্মা কিছুই বললেন না। উনি আমাকে আদর করে পোলাও-মাংস খেতে দিলেন। ভয়ে ভয়ে খেয়ে নিলাম। সেদিন আমি আর বাইরে বের হলাম না। আব্বা আমার ওপর খুব রেগে আছেন, অথচ তেমন কিছু বললেন না। আমি বেঁচে গেলাম।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।
গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net