রিসেলার বিজনেস কি, কিভাবে করবেন, কেমন আয়ের সম্ভাবনা?

:: ক্যারিয়ার ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ২ years ago

বর্তমান সময়টিই হচ্ছে অনলাইনের যুগ। আর অনলাইনের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করার ক্ষেত্রে ‘রিসেলার’ একটি জনপ্রিয় ও লাভজনক বিজনেস মডেল। কিন্তু অবশ্যই মাথায় রাখবেন সব বিজনেস আইডিয়ার মতোই রিসেলিং বিজনেস এর মধ্যেও আপনাকে যথেষ্ট পরিমান সময়, দায়িত্ব ও পরিশ্রম দিতে হয়। এ বিষয়ে মোটামুটি গাইডলাইন পেলে সহজেই এই কাজ শুরু করা যায়। এই প্রতিবেদনে রিসেলার বিজনেস সর্ম্পকে আদ্যপান্ত আলাপ করা হলো।

রিসেলার মানে কি?

রিসেলার হল কোনো বেক্তি বা কোম্পানি যে কোনো দ্রব্য বা সেবা ক্রয় করে থাকে পুনরায় বিক্রয়ের উদেশ্যে নিজ ভোগের জন্য না।

অর্থাৎ কেউ যখন লাভের উদ্যেশে কোন দ্রব্য বা সেবা ক্রয় করে তা পুনরায় বিক্রি করবে বলে তখন সেই বেক্তিকে আমরা রিসেলার বলবো।

রিসেলার বিজনেস কি?

যদিও আপনি ওপরের পয়েন্ট থেকে একটু হোক ধারণা পেয়েছেন তাও আমরা এই বিষয় নিয়ে আর একটু বিস্তরিত জানবো।

তো এই বিজনেসের মধ্যে আপনি হোলসেলার বা উৎপাদকের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে তা সরাসরি কাস্টমারের কাছে বিক্রয় করতে পারেন।

একজন রিসেলার হিসাবে আপনি উৎপাদক এবং কাস্টমারের মধ্যে একজন মিডিল ম্যান হিসাবে কাজ করে থাকেন।

আর এখানে আপনাকে কোনো দ্রব্য বা পণ্য উৎপাদন করতে হয় না তাই তা স্টোর বা গুদামজাত করে রাখার প্রশ্নও আসে না।

কিন্তু তাও আপনি বিভিন্ন ভ্যারাইটির প্রোডাক্ট উৎপাদকের কাছ থেকে নির্বাচন করে তা কাস্টমারকে রিসেল করতে পারেন।

অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে আপনাকে না পণ্য উৎপাদন ও স্টোর সংক্রান্ত ব্যয় ওঠাতে হচ্ছে আর না উৎপাদকের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখার।

আপনি শুধু নির্দিষ্ট লাভ বা মার্জিনের জন্য কাস্টমার ও উৎপাদকের মধ্যে মিডিয়াম হিসাবে কাজ করছেন।

রিসেলার ও ডিস্ট্রিবিউটারের মধ্যে পার্থক্য

ডিস্ট্রিবিউটারের ভূমিকা অনেক বেশি হয় সে উৎপাদকের থেকে রিসেল প্রোডাক্ট ক্রয় করে কখনো সরাসরি কাস্টমারদের বিক্রয় করে আবার কখনো বিভিন্ন রিসেলারদের বিক্রয় করে থাকে।

সাধারণত ডিস্ট্রিবিউটার কোনো প্রোডাক্টের ইনভেন্টরি বা স্টক ক্রয় করে থাকে এবং উৎপাদকের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

ডিস্ট্রিবিউটার অনেক সময় উৎপাদন পক্রিয়ায় উৎপাদকের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে মার্কেটিং, লেবেলিং এবং ব্রান্ডিংয়ের জন্য। যেহেতু ডিস্ট্রিবিউটর শারীরিক ভাবে পণ্য বা দ্রব্যের স্টক হোল্ড করে রাখে তাই তাকে অনেক দায়িত্ব পরায়ণ হতে হয়। অন্যদিকে রিসেলার বিজনেসের মধ্যে পণ্য বা দ্রব্যের রিসেল বা পুনরায় বিক্রয়ের জন্য কোনো স্টক হোল্ড করে রাখতে হয় না।

রিসেলারকে শুধু মিডিল ম্যান হিসাবে উৎপাদক এবং কাস্টমারের মধ্যে ভূমিকা পালন করতে হয়। আর উৎপাদকের সাথে সরাসরি কোনো সম্পর্ক থাকারও দরকার পরে না।

আপনার কেন রিসেলার বিজনেস শুরু করা উচিত

আপনার কেন রিসেলার বিজনেস শুরু করা উচিত

কেন আপনার রিসেলিং বিজনেস শুরু করা উচিত

সাধারানত এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে একজন রিসেলারের বা রিসেলিং বিজনেস শুরু করার কতগুলি ভালো দিক আছে।

একটি রিসেলিং বিজনেস শুরু করার অনেকগুলি ভালো দিক বা কারণ থাকতে পারে যেরকম:

১. শুরু করা সহজ

যেকোনো একটি নতুন বিজনেস শুরু করার জন্য প্রাথমিক যে উপাদানটি লাগে তা হল টাকা বা মূলধন যেটিকে স্টার্টআপ কস্ট বলে। আর একজন নিউবির কাছে কোনো বিজনেস শুরু করার জন্য একটি বড় বাজেট তৈরি করা অনেক সমস্যা বা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আপনি যদি রিসেলিং বিজনেস শুরু করতে চান তাহলে অনেক স্বল্প খরচ বা সম্পূর্ণ ফ্রীতেও তা করতে পারেন।

আর এর রেজাল্টও অনেক দ্রুত হয় আপনি যেদিন থেকে রিসেলার বিজনেস শুরু করবেন সেই দিন থেকেই বিক্রয় শুরু করতে পারেন।

২. ভ্যারাইটি রেঞ্জ অফ প্রোডাক্ট

আপনি যদি একজন রিসেলার হন তাহলে শুধু গুটিকয়েক না বিভিন্ন ভ্যারাইটি অফ প্রোডাক্ট রিসেল করার সুযোগ পাবেন। যদি জামাকাপড় রিসেল থেকে শুরু করেন আর আপনার বিজনেস ভালো চলে তাহলে খুব সহজেই অন্যান্য প্রোডাক্ট।

যেরকম জুতো, জুয়েলারি এবং অন্যান্য একসেসোরিস আপনার স্টোরে যুক্ত করতে পারবেন এবং আরো বেশি কাস্টমারদের বিক্রয় করতে পারবেন।

৩. ইনভেন্টরি বা স্টক হোল্ডের সমস্যা নেই

রিসেলিং বিজনেসের মধ্যে আরো একটি সুবিধা হল আপনাকে প্রোডাক্টের কোনো স্টক বা ইনভেন্টরি হোল্ড করতে হয় না। অর্থাৎ ইনভেন্টরি ক্রয় এবং হোল্ড সংক্রান্ত কোন চাপ থাকেনা। কাস্টমার যখন কোনো প্রোডাক্ট ক্রয় করে শুধু তার মূল্যই প্রদান করতে হয়।

আপনাকে শুধু প্রোডাক্ট নির্বাচন করতে হয় ও তা রিসেল করার জন্য সঠিক প্লাটফর্ম ঠিক করতে হয়।

 

 

৪. প্রফিট মার্জিন নিজেই ঠিক করতে পারেন

একজন রিসেলার হিসাবে আপনার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে নিজের প্রফিট মার্জিন ঠিক করার। আপনি যেরকম চান তা ঠিক করতে পারেন। আর যেহেতু রিসেল প্রোডাক্টের দাম কম হয়ে থাকে তাই আপনার ঠিক কতটা মার্জিন রাখলে ব্যাবসার লাভ হবে তা নিজেই ঠিক করতে পারবেন।

আপনি প্রফিট মার্জিন যত বেশি রাখবেন আপনার মুনাফা ততোই বেশি হবে কিন্তু অবশ্যই তা মার্কেট প্রাইসের মধ্যে রাখার চেষ্টা করবেন।

৫. ফিনান্সিয়াল রিস্ক কম থাকে

নতুন যারা উদ্যোক্তা আছে তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ ব্যবসা কারণ এখানে ফিনান্সিল রিস্ক অনেকেই কম হয়ে থাকে। কারণ আপনাকে ইনভেন্টরি, লেবেলিং এবং প্যাকেজিং সংক্রান্ত খরচ ওঠাতে হয় না, শিপিং চার্জ অনেক কম হয় আবার কিছু কিছু এপে ও প্লাটফর্মে একদমই ফ্রি হয়।

আপনি শুধু সেই সমস্ত প্রোডাক্টের জন্যই পেমেন্ট করে থাকেন যেগুলি কাস্টমার আপনার বা আপনার স্টোর থেকে অর্ডার করে।

৬. কম সময় ব্যয় করতে হয়

যারা রিসেলার তাদের এই বিজনেসের মধ্যে অধিক সময় ব্যয় করতে হয় না কারণ বেশির ভাগ কাজটাই অটোমেটেড হয়ে থাকে। অর্থাৎ অল্প সময় ও স্বাছন্দের সাথে এই ব্যবসাকে পরিচালনা করতে পারেন তার সাথে প্যাকেজিং ও শিপিং সংক্রান্ত ব্যয়ও আপনার হয় না।

অনলাইন ব্যবসা করে আয়ের মধ্যে রিসেলার ব্যবসা অনেক জনপ্রিয় ও একটি লাভ জনক বিজনেস মডেল।আপনি যদি অনলাইন আয়ের উপায় খুঁজে থাকেন তাহলে আপনার জন্য এটি একটি আদর্শ বিজনেস মডেল হতে পারে।

ইন্টারনেটে এরকম বহু প্লাটফর্ম আছে যেখান থেকে আপনি ফ্রিতে রিসেলিং শুরু করতে পারবেন তবে আপনি যদি চান নিজের রিসেলিং স্টোরও খুলতে পারেন সেই ক্ষেত্রে কিছু অর্থ ব্যয় করতে হবে। তবে এই ব্যবসার মধ্যে টাকা ইনভেস্টের পরিমান অনেকেই কম বা লেভার দিক থেকে দেখলে নেই বললেই চলে।

কিন্তু টাকা ইনভেস্ট করে নিজের স্টোর ওপেন ও বিজ্ঞাপন দেওয়ারও অনেক সুবিধা আছে এতে নিজের ব্র্যান্ড তৈরি হবে এবং বিক্রয়ও বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়া এখন বিভিন্ন রিসেলিং এপ্লিকেশন আছে যেখান থেকে আপনি সম্পূর্ণ ফ্রিতে রিসেল করা শুরু করতে পারেন।