দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি। আওয়ামী লীগ যাকে প্রার্থী করবে, তিনিই হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি- এটি মোটামুটি নিশ্চিত। আর এ কারণেই রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ কাকে প্রার্থী করবে বা মনোনয়ন দেবে সেটি নিয়েই আলোচনা চলছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলটি কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হচ্ছে ১২ ফেব্রুয়ারি রোববার। গত ২৫ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণার পরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।
আজ শুক্রবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) অফিস করবেন না। আগামীকাল তিনি অফিস করতেও পারেন। তবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য ইসি খোলা থাকবে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার অফিস ত্যাগের সময় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রশ্ন করা হয়, শুক্রবার ও শনিবার অফিস করবেন কি না? তখন তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন কেন অফিস করব? ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, মনোনয়নপত্র নেওয়ার সময় সিইসি স্যারের উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক নয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই দিতে পারবেন। তবে জমা দেওয়ার সময় সিইসি স্যার থাকবেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার একাদশ জাতীয় সংসদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সপ্তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় রাষ্ট্রপতির নাম ঠিক করা যায়নি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন তা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তফসিল অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচনী কর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত, মনোনয়নপত্র পরীক্ষা ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহার সময় ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল হয়েছে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি। সেবার ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ থাকলেও একক প্রার্থী হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত হন তিনি।’ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের প্রার্থীর রাষ্ট্রপতি হওয়াটা প্রায় নিশ্চিত। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে- নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। প্রার্থী একজন হলে এবং পরীক্ষায় তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। তবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে নির্বাচনের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করবে ইসি। একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটের আয়োজন করবেন।
নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে নিজের সই দিয়ে তা জমা দেবেন সংসদ সদস্যরা। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
যদি একাধিক প্রার্থী থাকেন, সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ সদস্যরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন। ১৯৯১ সালের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর ওই সংসদেই একবার রাষ্ট্রপতি পদে দুই জন প্রার্থী থাকায় সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছিলেন। এরপর আর কোনো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী দেখা যায়নি। আর তাই ভোটেরও প্রয়োজন পড়েনি। ক্ষমতাসীন দল যাকে প্রার্থী করেছে তিনিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, সংবিধান অনুযায়ী দেশে যে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। সরকার প্রধান অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এরপরও জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ধরনের সংকট তৈরি হলে রাষ্ট্রপতির পদক্ষেপ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এসব বিষয় চিন্তায় রেখে তেমন একজনকেই আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পদে তিনি কাকে মনোনীত করবেন, সেই ইঙ্গিত দেননি।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (১) রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে এ পদ শূন্য হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। প্রার্থী এক জন হলে এবং পরীক্ষায় তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। তবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে নির্বাচনের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করবে ইসি।
একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটের আয়োজন করবেন। নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে নিজের সই দিয়ে তা জমা দেবেন সংসদ সদস্যরা। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করবে। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।
দলীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট করতে হয়েছিল। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন।