রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ স্থায়ী হতে পারে কয়েক বছর

::
প্রকাশ: ২ years ago
ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন যুদ্ধে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী হিসেবে কাজ করা ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন।

একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল পুরোপুরি দখল করতে রাশিয়ার দুই বছর বা এর বেশি সময়ও লাগতে পারে। যুদ্ধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রিগোজিনের এ মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইউক্রেনে কয়েক বছর বা দীর্ঘসময় যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাশিয়ার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা।

২০২২ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে আক্রমণ করার নির্দেশ দেওয়ার পর আলোচনায় আসেন ‘কুখ্যাত’ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রিগোজিন। ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে লড়ছে ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে সেনাদল। সম্মুখযুদ্ধে রুশ বাহিনীকে সরাসরি সহায়তা করছে তারা। প্রথমদিকে ইউক্রেনে ওয়াগনারের সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ হাজার। যাদের অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন রেজিমেন্টের সাবেক সৈন্য। পরবর্তীয়তে ক্রেমলিন নিয়মিত বাহিনীর জন্য লোক পেতে সমস্যায় পড়লে এই ওয়াগনার বাহিনী বড় সংখ্যায় সেনা নিয়োগ শুরু করে। পশ্চিমাদের দাবি, ইউক্রেনে ওয়াগনার গ্রুপের ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। যার মধ্যে ১০ হাজার কন্ট্রাক্টর রয়েছে। এ ছাড়া বাকি ৪০ হাজার রুশ কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়া আসামি। তবে প্রিগোজিন দাবি করেছেন, ওয়াগনার কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া আসামিদের নিয়োগ বন্ধ করেছে ।

শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে প্রিগোজিন জানিয়েছেন, রাশিয়ার এখন মূল লক্ষ্য হলো ডনবাস দখল করা। তিনি বলেন, ‘এটি করতে দুই বছর সময় লাগতে পারে। আর যদি পুরো পূর্ব ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয় তাহলে তা তিন বছর সময় নিতে পারে।’

এছাড়া লুহানস্কের গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত শহর নিয়েও কথা বলেছেন ‘পুতিনের শেফ’হিসেবে পরিচিত প্রিগোজিন। তিনি জানিয়েছেন, বাখমুত দখলে বেগ পেতে হচ্ছে রুশ সেনাদের। বলেন, ‘এখনই বলা যাবে না আমরা বাখমুতে সাফল্য পাওয়ার কাছাকাছি আছি। ইউক্রেনের সেনারা বেশ ভালোই প্রশিক্ষিত। আর অন্যান্য বড় শহরের মতো বাখমুতও সামনে থেকে দখল করতে পারব না আমরা। তবে আমরা সাফল্য পাচ্ছি। প্রথমত নিরবে আমাদের বাখমুত দখল করতে হবে। এরপর উচ্চস্বরে বলতে হবে, আমরা বাখমুত দখল করেছি।’

এদিকে শুক্রবার ইউক্রেনের জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। দেশটির জ্বালানি কোম্পানি ইউক্রেনেরগো বলছে, পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন তবে নিয়ন্ত্রণে আছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি জালুজনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত রুশ সেনাবাহিনী ৭১টি ক্রুজ মিসাইল, ৩৫টি এস-৩০০ মিসাইল ছুড়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেন ৬১টি ক্রজ মিসাইল ভূপাতিত করেছে।

এর মধ্যেই ভিডিও সাক্ষাৎকারে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিলেন ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ক্রিমিয়া দখলের জন্য রাশিয়া ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের সহায়তা নিয়েছিল। ২০১৫ সালে সিরিয়াতে আসাদ সরকারের বাহিনীর পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করে ওয়াগনার বাহিনী। সেসময় তারা তেলের খনিগুলোও পাহারা দিত।

যে কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
২০১৪ সালে যখন রাশিয়া প্রথমবার ইউক্রেনে প্রবেশ করে, তখন প্রেসিডেন্ট পুতিন-সমর্থিত বিদ্রোহীরা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বেশ বড় একটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর থেকেই তারা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছে।

গত বছরের শুরুতে, বিদ্রোহীরা শুধু যেটুকু এলাকার নিয়ন্ত্রণ করছিল, শুধু সেটাই দাবি করে নি, বরং তারা পুরো দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে।

যুদ্ধ বন্ধে একটি আন্তর্জাতিক মিনস্ক শান্তি চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু লড়াই তাতে থামেনি। আর এ কারণেই রাশিয়ার নেতা বলছেন, ওই অঞ্চলে তিনি সৈন্য পাঠিয়েছেন।

বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে ২০১৫ সালে এ চুক্তি হয়েছিল। যেখানে প্রধান শর্ত ছিল, পূর্ব ইউক্রেন থেকে সামরিক স্থাপনা, সামরিক সরঞ্জাম ও ভাড়াটে সেনাদের সরিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলোকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়। অঞ্চলগুলোতে নিজস্ব পুলিশবাহিনী ও স্থানীয় বিচারব্যবস্থা নিয়োগের কথাও উল্লেখ হয় চুক্তিতে। তবে সেসব চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি কিয়েভ।

ইউক্রেনের ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে চাওয়ার ইচ্ছাও এ আক্রমণের আরেক কারণ। কারণ, অনেক দিন ধরে সেই বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে রাশিয়া। রাশিয়ার দাবি, পশ্চিমা দেশগুলোকে নিশ্চয়তা দিতে হবে, ‘ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে না’। ন্যাটো পশ্চিমা দেশগুলোর একটি সামরিক জোট, যেখানে ৩০টি দেশ রয়েছে।

পুতিনের দাবি, ইউক্রেন পশ্চিমা দেশগুলোর হাতের পুতুল এবং কখনোই প্রকৃত রাষ্ট্র ছিল না। এ ছাড়াও আরেকটি কারণ হলো, ইউক্রেন দেশ হিসেবে স্বীকৃতির পরও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি দেশ হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির গভীর সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে রুশ ভাষাও ব্যাপকভাবে বলা হয়।

রাশিয়া মনে করে, ইউক্রেন কোনোদিনই প্রকৃত অর্থে একটা রাষ্ট্র ছিল না। তিনি এর আগেও বলেছেন, এখন যা ইউক্রেন, তা আসলে ‘প্রাচীন রুশ ভূখণ্ড’।