কলাগাছের আশেঁর সৃষ্ট সূতায় শাড়ী সৃষ্টি করে নতুন এক বুনন শিল্পের উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দেশে বাজিমাত করল রাধাবতী দেবী। তৈরি করেছেন ‘কলাবতী শাড়ি’।
৬৬ বসন্তে এসেও দমে যাননি রাধাবতী। স্ব ইচ্ছে শক্তির মেধা আর হাতের যাঁদুকরি শৈলী পোষন করে মাত্র ১২দিনে মাথায় প্রথমবার কলায় গাছের আশঁ দিয়ে শাড়ী রুপান্তর করে চমক দেখালো মনিপুরী সম্প্রদায়ের গুণী এই শিল্পী।
পাঁচটি কলাগাছের তন্তু থেকে এক কেজি সূতা উৎপাদন করে ১২ দিনের মাথায় ১৩ হাতের একটি শাড়ি তৈরি করলেন রাধাবতী দেবী। তাঁর এই নতুন এক বুনন শিল্পের যাত্রায় উৎসাহ ও সহযোগীতা করেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাঝেরগাঁও গ্রামের ব্রজ ভল্লব সিংহের কন্যা রাধাবতী দেবী। ৬৬ বছরের কোটায় তাঁতশিল্পী রাধাবতী দেবী। সংসার জীবনে নেই কোনো সন্তান। কাজ পাগল রাধাবতী দেবী এক সময় কাজ শিখার জন্য সিলেটে মনিপুরি তাঁত শিল্পের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। কিছুদিন প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ফের নিজ আবাসস্থলে ফিরে যান। সেখানেই তিনি ধীরে ধীরে তার বিদ্যা প্রয়োগ করতে থাকেন।
পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
রাধাবতী দেবী বলেন, ১৯৯২ সালের দিকে মনিপুরি শাড়ি হাত দিয়ে বুনন করতে শিখেছি। পরবর্তীতে বিভিন্ন এনজিও সংস্থানে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি। মনিপুড়ি হস্তশিল্পের দক্ষতা আমার বহু দিন আগের। আমার ফুফাতো ভাই বান্দরবনে থাকে। সেখানেই ওর পরিবারও আছে। একদিন ওর স্ত্রী আমাকে বান্দরবানে আসার জন্য নিমন্ত্রণ দিয়েছিলো। এরপর আমি বান্দরবনে যাই। সেখানে গিয়ে বান্দরবনের জেলা প্রশাসকের সাথে কলাগাছের তন্তু দিয়ে শাড়ি তৈরির বিষয় নিয়ে কথা বলেন। শুরুতে এই প্রস্তাব পেয়ে ভয় পেয়ে যাই। কি করবো, না করবো বুঝে উঠতে পারিনি। কিন্তু ওদের উৎসাহের তাগিদে আমি আমার তাঁতের মেশিনসহ যা যা প্রয়োজনী সরঞ্জাম আছে, তার সবই নিয়ে আসি বান্দরবনে।
তিনি বলেন, ১৩ হাতের শাড়ি মাত্র ১২ দিনে তৈরি করতে সক্ষম হই আরেক সহযোগী শিল্পী হেমন্তকে নিয়ে। ও ছিলো বলে এতো বড় একটা চ্যালেঞ্জ পরিপূর্ণ করতে পেরেছিলাম। যদি বান্দরবনের জেলা প্রশাসক উদ্যোগ না নিতো তবে কলাগাছের তন্তু দিয়ে উৎপাদিত সূতার আবিষ্কার হতো না। হতো না ‘কলাবতী শাড়ি’ও। উনার উৎসাহ উদ্দিপনা ও সহযোগীতায় কলাগাছের তন্তু দিয়ে শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, এই কলা গাছের তন্তুর সূতা আরও মান সম্মত হলে কাপড় বুনন করা আরও নিক্ষুত করা সম্ভব।
বান্দরবনের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, যখন নতুন অবস্থায় বান্দরবন জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে আসি, তখন স্ব চোখে দেখি বান্দরবানের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে কলাগাছের তন্ত দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পণ্য তৈরি হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি গৃহে সজ্জিত আছে কলাগাছের তন্তু দিয়ে সৃষ্ট কলমদানি, পাপশ, শতরঞ্জি, ফোল্ডারসহ আরও বিভিন্ন ধরণের পণ্য সামগ্রী। এসব দেখে মনে মনে ভাবি, যদি কলাগাছের তন্তু দিয়ে এসব পণ্য সৃষ্টি করা যায়, তবে কাপড়ও তৈরি করা যাবে। ওই ভাবনা থেকেই ভালো দক্ষ সাহসী একজন তাঁত শিল্পীকে খুঁজতে থাকি। এক পর্যায়ে তাঁত শিল্পী রাধাবতী দেবী সাথে দেখা হয়। যে শাড়িটি কলাগাছের তন্তু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, তার নাম শিল্পী রাধাবতী দেবীর নামের সাথে মিল করে ‘কলাবতী ’ শাড়ি রাখা হয়েছে। যদি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় কলাগাছের সূতা উৎপাদন করতে। তবে এই আবিষ্কৃত নতুন বুনন শিল্প দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে ঘুঁরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।
গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net