আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সংঘর্ষের দিকেই যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা কর্মসূচির শুরুতেই বেশ কিছু ঘটনা এ আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
বেশ কয়েক মাস ধরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচি, পাল্টা কর্মসূচি অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবেই চললেও। গত ১৮ জুলাই দুই দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষসহ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে গত বছর অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কিছু বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা দেখা যায়। কিন্তু এ বছর মধ্য জুলাই পর্যন্ত দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থাকলেও বড় ধরনের সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে বিএনপি গত ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করায় রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন আসে এবং প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়। শুধু সরকার পতন নয়, এ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। ওই দিনই আওয়ামী লীগও ঘোষণা দেয় নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনার সরকারই ক্ষমতায় থাকবে এবং নির্বাচন ঠেকাতে এলে তা প্রতিহত করা হবে। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে দুই দলই লক্ষ্যে পৌঁছানো এবং অবস্থান ধরে রাখার চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।
সরকার পতনের এক দফা ঘোষণার পর গত ১৮ ও ১৯ জুলাই পদযাত্রার কর্মসূচি দেয় বিএনপি। এ দুই দিনের কর্মসূচিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহতসহ সহস্রাধিক আহত হয়েছে বলে দাবি করছে বিএনপি। বিএনপির অভিযোগ আওয়ামী লীগ ও পুলিশ কর্মসূচিতে হামলা চালালে এসব ঘটনা ঘটে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন বিএনপির দিক থেকেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
এদিকে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণার আগে থেকেই আওয়ামী লীগ বলে আসছিল রাজনৈতিক কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে তা দলীয় এবং প্রশাসনিকভাবে প্রতিহত করবে। এজন্য গত বছরের নভেম্বর থেকেই বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রয়েছে। তবে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হওয়ায় তা মোকাবিলায় আরও শক্ত অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ও এর সহযোগীরা আরও কঠিন কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত দুই দিনের ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতি নির্ধারকরাও পরিস্থিতি অস্থিতিশীল এবং সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। গত ১৮ জুলাই মিরপুরে সংঘর্ষের ঘটনার পর বিকেলে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার কর্মসূচিতে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলীয় কর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন। কেউ অন্যায় করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
গত ২১ জুলাই আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছেন বিএনপি সারাদেশে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি সুযোগ পেলেই আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাবে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা আশঙ্কা করছেন। শুধু সরকার পতনই নয়, নির্বাচনও প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এ অবস্থায় বিএনপিসহ তাদের সহযোগীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের আশঙ্কা তো আছেই। বিএনপি সংঘর্ষের দিকে যেতে চাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্যেই পরিস্থিতিকে সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাওয়া। তাদের আন্দোলনের প্রতি জনগণের সমর্থনও নেই, গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান তৈরি করার মতো সাংগঠনিক শক্তিও তাদের নেই। সরকার সুযোগ দিচ্ছে বলে তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে পেরেছে। কিন্তু এখন ভয় হলো তারা সন্ত্রাসের দিকে, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের দিকে যাবে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, বিএনপি যে দাবিকে সামনে নিয়ে আন্দোলন করছে তাতে জনসমর্থন নেই। এ আন্দোলনে তারা জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি, সামনের দিনগুলোতেও সেটা পারবে না। তবে বিএনপির কোনো নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেয়নি বলে তারা কর্মসূচি পালন করতে পারছে। আবার সরকার পতন আন্দোলনে জনসমর্থনের পাশাপাশি যে সাংগঠনিক শক্তি বিএনপি থাকা দরকার সেটাও বিএনপির নেই। এ অবস্থায় তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকবে না। দলটি সন্ত্রাস, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পথ বেছে নেবে সম্প্রতিক ঘটনায় তার ইঙ্গিত রয়েছে বলেও ওই নীতি নির্ধারকদের আশঙ্কা। আর এ আশঙ্কা থেকেই ক্ষমতাসীনরা শক্ত অবস্থান নিয়েছে বলেও সূত্রগুলো জানায়।
তবে বিএনপির নেতারা বলছেন সরকার পরিকল্পিতভাবে তাদের কর্মসূচিতে হামলা করছে। গত দুই দিনের পদযাত্রার কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ হামলা করেছে বলেও বিএনপির অভিযোগ। এ বিষয়ে কামরুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এটা তাদের অভ্যাস, তারা সব সময়ই এসব বলে থাকে। প্রত্যেকটি ঘটনাই বিএনপি ঘটিয়েছে। মিরপুর বাঙলা কলেজে তারাই হামলা করেছে। অন্যান্য জায়গায়ও তারাই বিশৃঙ্খলা করেছে। তাদের উদ্দেশ্যেই স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়া।