স্ত্রীকে নিয়ে সাভার থেকে রাজধানীর এয়ারপোর্ট এলাকায় ঘুরতে এসেছিলেন এক ব্যক্তি। সেখান থেকে খিলক্ষেত এলাকায় এক স্বজনের বাসায় বেরিয়ে রাতে ফিরছিলেন নিজের বাড়িতে। পথে খিলক্ষেতের বনরূপা এলাকার সড়ক থেকে তাদের তুলে নেয় একদল দুর্বৃত্ত।
রাতের অন্ধকারে তাদের ওই এলাকার ঝোঁপের মধ্যে নিয়ে স্বামীকে মারধরের পর মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর স্ত্রীর ওপর পালাক্রমে সংঘবদ্ধ পাশবিকতা চালায় সাত নরপশু।
গত শুক্রবার রাতে এ ভয়ংকর ঘটনা ঘটে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ আনসার বাহিনীর অঙ্গীভূত সদস্য। গত মে মাসে তার বিয়ে হয়। স্ত্রীকে বনরূপা এলাকায় ঝোঁপের মধ্যে আটকে রাখার পর মুক্তিপণের টাকা জোগাড়ে বেরিয়ে স্বামী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দেন।
এরপর পুলিশ ঘটনার রাতেই গৃহবধূকে উদ্ধার করলেও ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। অবশ্য গতকাল শনিবার খিলক্ষেত থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণে অভিযুক্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলো- আবুল কাশেম সুমন, পার্থ, হিমেল, রবিন, টুটুল, হৃদয় এবং নুরু। তাদের মধ্যে সুমন মূলহোতা।
ওই গৃহবধূর স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘোরাঘুরি শেষে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে সাভার যেতে খিলক্ষেতের বনরূপা এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময়ে কয়েক লোক তাদের জোর করে বনরূপা এলাকার ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে নিয়ে যায়। তারা তাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
তিনি জানান, অপহরণকারীরা একপর্যায়ে তার স্ত্রীকে আটকে রেখে তাকে ছেড়ে দিয়ে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে আসতে নির্দেশ দেয়। তখন তিনি ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে কৌশলে ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সহায়তা চান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনের সহকারী কমিশনার শেখ মুত্তাজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ওই রাতেই তাৎক্ষণিকভাবে খিলক্ষেত থানার টহল টিম অভিযানে যায়। পুলিশ স্বামীকে নিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধারের উদ্দেশ্যে অভিযান শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থল অপহৃত গৃহবধূর সন্ধান চালাতে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি গেলে উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা তাকে রেখে পালিয়ে যায়। পরে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে তার কাছ থেকে বর্ণনা নিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারে একাধিক টিম মাঠে নামে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবার রাত থেকে টানা অভিযান চালিয়ে শনিবার দুপুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে মূলহোতা সুমনসহ তার ছয় সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ওই গৃহবধূর ওপর পাশবিকতার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
পাশবিকতার শিকার গৃহবধূ পুলিশকে জানিয়েছেন, তার স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। কাঁদতে কাঁদতে তাদের আর না মারার জন্য বারবার অনুরোধ করছিলেন তিনি। তার আর্তনাদেও দুর্বৃত্তদের মন গলেনি। এরপরও তার ওপর অমানুষিক অত্যাচার চলতে থাকে। তার ওপর তারা পালাক্রমে পাশবিকতা চালায়। খিলক্ষেত থানার ওসি শেখ আমিনুল বাশার জানান, শুক্রবারের ওই ঘটনায় অপহরণ করে গণধর্ষণসংক্রান্তে মামলা হয়েছে। আসামিদের আজ রোববার আদালতে হাজির করা হবে। গৃহবধূকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, সংঘবদ্ধ ধর্ষণে জড়িতদের মধ্যে সুমন ওই গৃহবধূর পূর্ব পরিচিত। নববধূর ওপর কোনো ক্ষোভ থেকে টার্গেট করে সহযোগীদের নিয়ে সে এমন পাশবিক ঘটনা ঘটিয়েছে। তাকেসহ অপর ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।