৪ আগস্ট রাতে তিন বাহিনীর প্রধানদের ডাকেন দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা। ওই সময় রাগে তিনি সামনের টেবিলে আঘাত করে উচ্চস্বরে তাদের উদ্দেশে ঘোষণা দেন: আমি ক্ষমতা ছাড়ব না।
তবে পরের দিন (৫ আগস্ট) সকাল থেকেই গণভবনে উত্তেজনা ও চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ১০টায় তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) গণভবনে ডাকা হয়।
শীর্ষ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি দৃঢ়ভাবে আগের কথারই পুনরাবৃত্তি করেন।
হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কঠোর হতে হবে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কাজটা কীভাবে করবেন, তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করুন।’
যদিও পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ঘনিষ্ঠজনেরা শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, পদত্যাগ করাই ভালো হবে। কিন্তু হাসিনা তাদের কথা শোনেননি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সেনাপ্রধানও বারবার ফোন করে হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বলেন।
কিন্তু শেখ হাসিনা উল্টো বিক্ষোভ দমনে সব বাহিনীকে আরও কঠোর হতে বলেন।
তবে বাহিনীগুলো এতে রাজি হয়নি।
হাসিনা অবশ্য নিজের দাবিতে অবিচল ছিলেন। তিনি সেনাবাহিনী ও পুলিশপ্রধানসহ বিভিন্ন লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন, কিন্তু কেউ তাকে আশা দেয়নি।
বরং তাদের পরামর্শ ছিল সোজাসাপটা: যত দ্রুত সম্ভব অন্য কোথাও চলে যান।
হাসিনার নিরাপত্তা কর্মীরাও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তখন উপস্থিত কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার সঙ্গে আরেক কক্ষে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। কর্মকর্তারা তাকে পরিস্থিতি জানিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন।
এরপর শেখ রেহানা বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন।
কিন্তু হাসিনা তখনও রাজি হননি, তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় থাকেন। একপর্যায়ে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিদেশে থাকা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
জয় তখন তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। ছেলের সঙ্গে কথা বলার পর অবশেষে পদত্যাগ করতে রাজি হন শেখ হাসিনা। তিনি অবশ্য পদত্যাগের আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চান জাতির উদ্দেশে প্রচারের জন্য। কিন্তু তাকে সেই সুযোগও দেওয়া হয়নি।
তখন তিনি হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেন।
পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করার আগে হাসিনা পরোক্ষভাবে তিন বাহিনীর প্রধানকে বিশ্বাসঘাতক বলেছেন।
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন, তারপর কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা কাঁদতে কাঁদতে দেশ ছেড়েছেন।
যাওয়ার আগে তিনি তার দলের সব নেতাকর্মীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেষ দিনে হাসিনার পাশে তার বোন ছাড়া আর কেউ ছিল না।