রমজানে ইফতারের ফজিলত

:: পা.রি. ডেস্ক ::
প্রকাশ: ১ বছর আগে
সংগৃহীত ছবি

ইফতার প্রতিটি রোজাদারের জন্য আনন্দঘন মুহূর্ত। ইফতার অর্থ রোজা ত্যাগ করার বা ছাড়ার জন্য খাদ্য গ্রহণ করা। ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। ইফতারের আগেই ইফতারি সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং যথাসময়ে ইফতার করা সুন্নত।

ইফতারের আগমুহূর্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম সময়। হুজুর পাক (সা.) বলেছেন, ‘ইফতার করার সময় রোজাদারের দোয়া কবুল হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ)।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এতই আকর্ষণীয় যে আল্লাহ তাআলা রমজানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দাগণ যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন!! বলতে থাকবে।’

সুনান আবু দাউদের ২ খণ্ডের কিতাবুস সিয়ামের ২৩৪৯নং হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) ইফতারে উত্তম খেজুর খেতেন। তিনি ভালো মানের খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি টাটকা খেজুর না পেতেন তাহলে শুকনো খেজুর খেতেন। টাটকা খেজুর খাওয়া সর্বোত্তম, আপনি যদি টাটকা খেজুর না পান তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করুন, আর যদি তাও না পান তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করুন, এটাই সুন্নত। আপনি যদি পানিও না পান তাহলে হালাল যে কোনো খাবার দিয়ে ইফতার করতে পারেন। আবার কোনো কিছুই পেলেন না। যেমন সফরে বা যানবাহনে ইফতারের সময় হলো, তাহলে আপনি মানসিকভাব রোজা ছাড়ার নিয়ত করুন এবং তাড়াতাড়ি যে হালাল খাবার পান তা খেয়ে নিন।

হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘মানুষ ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করে নেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

সময়মতো ইফতার করা যেমন ফজিলতের, তেমনি রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলতও অনেক। হজরত সালমান ফারসি (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে, তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না।’

‘আমরা সবাই রোজাদারকে ইফতার করাতে সক্ষম’ – সাহাবায়ে কেরাম এমন আরজ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পানিমিশ্রিত এক চুমুক দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারাও যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, আল্লাহ তাকে এ পরিমাণ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তভাবে খানা খাওয়াবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজ (হাউজে কাওসার) হতে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্বে তৃষ্ণার্ত হবে না।’ (বায়হাকি ওয়াবুল ঈমান, মেশকাত)।

রমজান মাস সহমর্মিতা ও সমবেদনার মাস। তাই ব্যয়বহুল বাহারি ইফতারের আয়োজন না করে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, নিকটজন, গরিব-মিসকিন, দরিদ্র-অসহায়দের ইফতারের বিষয়ে যত্নবান ও সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। পথশিশু, ছিন্নমূল ও পথিকদের ইফতারের ব্যবস্থা করাও কর্তব্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইফতার মাহফিল ও ইফতার পার্টির আয়োজন না করে গরিব অসহায়দের দান-খয়রাত করা সমীচীন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তৃপ্তিসহ পেট পুরে পানাহার করল, তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত যাপন করল, সে মুমিন নয়।’ (মুসলিম)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, ‘রোজাদারকে ইফতার করানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে- তাকে পেট ভরে তৃপ্ত করানো ‘ (আল ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা : ১৯)

অন্যদের খাবার দেওয়ার ব্যাপারে উম্মতের সালফে সালেহিন অগ্রণী ছিলেন। তারা এটাকে মহান ইবাদত মনে করতেন। জনৈক সালফে সালেহিন বলেছেন, ‘দশজন সাথীকে দাওয়াত দিয়ে তাদের পছন্দসই খাবার খাওয়ানো— আমার কাছে দশজন গোলাম আজাদ করার চেয়েও প্রিয়।’

সালফে সালেহিনের অনেকে নিজের ইফতার অন্যকে খাওয়াতেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- ইবনে উমর, দাউদ আল-তাঈ, মালিক বিন দিনার, আহমাদ ইবনে হাম্বল। ইবনে উমর এতিম ও মিসকীনদের সঙ্গে না নিয়ে ইফতার করতেন না।

সলফে সালেহিনদের কেউ কেউ তার নিজের ইফতার তার সঙ্গী-সাথীদের খাওয়াতেন এবং নিজে তাদের সেবা-মেহমানদারি করতেন। এদের মধ্যে ইবনুল মুবারক (রহ.) অন্যতম।

আবু সাওয়ার আল-আদাওয়ি বলেন, বনি আদি গোত্রের লোকেরা এই মসজিদে নামাজ পড়ত। তাদের কেউ কখনো একাকী ইফতার করেনি। যদি তার সঙ্গে ইফতার করার জন্য কাউকে পেলে তাকে নিয়ে ইফতার করত। আর যদি কাউকে না পেত, তাহলে নিজের খাবার মসজিদে নিয়ে এসে মানুষের সঙ্গে খেত এবং মানুষকেও খেতে দিত।

খাবার খাওয়ানো অনেকগুলো ইবাদতের…
নিমন্ত্রিত ভাইদের সঙ্গে হৃদ্যতা ও ভালবাসা। যে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের কারণ। যেমনটি নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ঈমান আনা ছাড়া জান্নাত যেতে পারবে না। আর পারস্পারিক ভালোবাসা ছাড়া তোমাদের ঈমান হবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৪)

অন্যকে আতিথেয়তা করার মাধ্যমে উত্তম লোকদের সাহচর্য অর্জিত হয়। এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে ‍বিপুল সওয়াব লাভ হয়।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net