সাইবার ট্রাইব্যুনালে পরিতোষের সাজায় আর্টিকেল নাইনটিন’র উদ্বেগ প্রকাশ

::
প্রকাশ: ১ বছর আগে

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন, রংপুরের সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ত্রুটিপূর্ণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চারটি ধারায় তরুণ পরিতোষ সরকারকে মোট ১১ বছরের কারাদণ্ড ও ৩০০০০ টাকা জরিমানা করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে আর্টিকেল নাইনটিন-এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত যে একজন তরুণ এমন একটি আইনের অধীনে সাজা পেলেন যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। । আমি বিশ্বাস করি, এই কথিত ঘটনার সময় পরিতোষের বয়স, নিরাপত্তার নামে কিশোর বয়সে শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে কঠোরতম অপরাধীদের জন্য সংরক্ষিত নির্জন কারাবাসের মতো অমানবিক ও নিষ্ঠুর শাস্তির মধ্য দিয়ে তার যাওয়াসহ অন্যান্য বিষয় যদি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেওয়া হত তাহলে তিনি ন্যায়বিচার পেতেন। আমি প্রত্যাশা করি তিনি উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন”।

তিনি আরও বলেন, “নির্জন কারাবাস মানুষের শরীর ও মনের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইউনাইটেড নেশনস স্ট্যান্ডার্ড মিনিমাম রুলস ফর দ্য ট্রিটমেন্ট অফ প্রিজনার্স, ২০১৫ অনুযায়ী কিশোরদের নির্জন কারাবাস একটি নির্যাতন এবং মৌলিক মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না’। বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালের নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অমর্যাদাকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ এবং নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু প্রতিরোধের জন্য ২০১৩ সালে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন প্রণয়ন করেছে। তবে শুধুমাত্র আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সরকারের দায়িত্ব শেষ হয় না। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার জন্য আইনের শাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে”।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর কথিত ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার’ কারণে স্থানীয় জনতা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামে ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনায় পরিতোষ সরকার নামে একজন হিন্দু কিশোরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ‘নিরাপত্তা’র নামে পুরো আট মাস নির্জন কারাগারে রাখা হয়। তিনি এই আট মাসে একদিনের জন্যেও তার সেলের বাইরে বের হতে পারেন নাই। তার কক্ষে কোন জানালা ছিল না এবং বাইরের আলো হাওয়া কিছুই তার রুমে আসত না। সেলের ভেতর থেকে দিন ও রাতের পার্থক্য বোঝার উপায় ছিল না তার। প্রধান দরজার একটি ছোট পকেট দরজার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ তাকে খাবার দিত। শুধুমাত্র তখনই তিনি বাইরের আলো দেখতে পেতেন। দীর্ঘ আট মাস তিনি কারও সাথে কথা বলার সুযোগ পাননি। এমনকি জেলের গার্ডরাও তার সাথে কথা বলত না। তিনি সময় কাটিয়ে ছিলেন বই পড়ে। কিন্তু একসময় সে সুযোগ থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হয়। নির্জন কারাবাসের শেষ আড়াই মাস তাকে বই পড়া বা সময় কাটানোর জন্য কিছু করা ছাড়াই কাটাতে হয়েছে।

আর্টিকেল নাইনটিন পর্যবেক্ষণ করেছে যে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদেরও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মামলা থেকে রেহাই দেওয়া হয় না। ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ ও ২০২১ সালের মধ্যে দায়েরকৃত ৯০টি ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা’ মামলার মধ্যে ৬০ শতাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত মানুষের বিরুদ্ধে করা হয়। এর অর্থ ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের চেয়ে তারা এই আইন দ্বারা বেশি লক্ষ্যবস্তুর শিকার হয়েছেন।

আর্টিকেল নাইনটিন সরকারকে পরিতোষ সরকারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগণসহ সকলের জন্য একটি সহনশীল এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায়। পাশাপাশি বাংলাদেশে নির্জন কারাবাসের শাস্তি নিষিদ্ধ করা এবং পরিতোষকে নির্জন কারাবাসে রাখার সাথে সম্পৃক্তদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানায়।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।