আর কিছুদিন পরেই নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু হবে। কাদের ঝুলিতে বিশ্বের সবচেয়ে নন্দিত এই পুরস্কার যাবে তা নিয়ে চলছে অনেক জল্পনা-কল্পনা। এর মধ্যে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নিয়ে আগ্রহ থাকে সবচেয়ে বেশি।
চলমান ইউক্রেন, গাজা যুদ্ধ এবং সুদানে সংঘাতে লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতির ঘটনার মধ্যে কে বা কারা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের সম্ভাব্য প্রাপক হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে যেমন ব্যক্তি আছেন, তেমনি আছে সংস্থার নামও।
এক্ষেত্রে ইউনাইটেড ন্যাশনস প্যালেস্টিনিয়ান রিফুউজি এজেন্সি, অর্থাৎ জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা এবং ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের নাম বেশ আলোচিত। আর ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত নাম জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস৷
চলতি বছর বিস্ময়করভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার স্থগিত করে জয়ী হিসেবে কারেও নাম না-ও ঘোষণা হতে পারে৷
কেউ কেউ রাশিয়ার আলেক্সি নাভালনির নাম নিচ্ছেন মুখে। কিন্তু সেটি সম্ভব নয়, কারণ কাউকে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ার রেওয়াজ নেই নোবেল কমিটির। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে আলোচনা থাকলেও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকেই।
তৃতীয় বছরে পড়া ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা সুদানে ১ কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুতির ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে নোবেল কমিটি এ বছর এমন কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে পারে, যিনি বা যেই সংগঠন বিশ্বে মানবিক সংকট কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷
অসলোর পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হেনরিক উরডাল বলছেন, এসব বিবেচনায় জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা হতে পারে চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের দাবিদার৷ কারণ, গাজা যুদ্ধে সৃষ্ট মানবিক সংকট কাটাতে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তবে ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে সংগঠনটিকে পুরস্কার দিলে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷
গত আগস্টে জাতিসংঘের এক অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থাটির ৯ জন সদস্য ওই হামলায় জড়িত থাকতে পারেন৷ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু দেশ সংগঠনটিতে অর্থায়ন বন্ধ করেছে৷
শান্তিতে নোবেলবিষয়ক ইতিহাস বিশারদ আসলে স্ভিন বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৈরি হওয়া বিশ্বব্যবস্থায় সৃষ্ট জাতিসংঘকে এবার বিবেচনা করতে পারে নোবেল কমিটি। সেক্ষেত্রে শীর্ষ আন্তর্জাতিক সংগঠনটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হতে পারেন চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল বিজয়ী৷ সেই সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসও যৌথভাবে এই তালিকায় যুক্ত হতে পারেন।
এই ইতিহাসবিদ রয়টার্সকে বলেন, ‘গুতেরেস হলেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ প্রতীক৷ আর ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের মূল দায়িত্ব হলো বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করা৷’
এরই মধ্যে রাশিয়ায় হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস৷ তা ছাড়া গাজায় যেন কোনোভাবেই জেনোসাইড বা গণহত্যার মতো ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়েও ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে৷
প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছে, নোবেল কমিটি এমন সিদ্ধান্তও নিতে পারে যে, চলতি বছর কেউই এই পুরস্কার পাবে না। সেই সিদ্ধান্ত এলে তা হবে পাঁচ দশক পর এমন কোনো ঘটনা৷ সর্বশেষ ১৯৭২ সালে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নোবেল কমিটি৷
স্টেকহোমে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটির প্রধান ড্যান স্মিথ বলেন, ‘চলতি বছর নোবেল পিস প্রাইজ কমিটি শান্তিতে পুরস্কার দেওয়া স্থগিত রাখতে পারে। তারা বলতে পারে যে, এটি (পৃথিবী) যুদ্ধে লিপ্ত একটি গ্রহ৷’
উল্লেখ্য, চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ২৮৬ ব্যক্তি ও সংস্থার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছর জেলে বন্দী ইরানের নারী অধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মাদি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেছিলেন৷