যেসব কারণে এবার জিপিএ-৫ এবং পাসের হার কমেছে

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট
প্রকাশ: ২ years ago
ফাইল ছবি

২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। এবার পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ছিলেন ১২ লাখ তিন হাজার ৪০৭ জন।

ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ ৫ কমেছে। নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলাফল নয়, সব সূচকই নিম্নমুখী।

পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা, শতভাগ পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সবই কমেছে।

এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯ হাজার ১৪৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০ টির কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। আর সব শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক হাজার ৩৩০টি। গত বছর কেউ পাস করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫টি। সেই হিসাবে এবার শতভাগ ফেল প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ১০ গুণ। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীই পাস করেছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০২১ সালে ছিল ১ হাজার ৯৩৪টি। এবার সেই সংখ্যা থেকে কমেছে ৬৪০টি।

বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলছেন, তিন কারণে এবার উচ্চ মাধ্যমিকের পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ছয়টি বিষয়ের দুই পত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এর আগের বছর করোনার কারনে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষা শুরুর আগে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে আকষ্কিক বন্যা হয়। এতে পরীক্ষা পেছানো হয়। বন্যা কবলিত অঞ্চলে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা ঘাটতির বিষয়টি পরীক্ষার ফলাফলেও উঠে এসেছে। দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে। ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসিতে পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ০৮ শতাংশ। সামগ্রিক ফলাফলে দিনাজপুর বোর্ডের নিম্ন পাসের হার ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া যেসব বিষয়ে পাস ফেল ফলাফল নির্ভর করে সেগুলোতেও শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। বেশিরভাগ বোর্ডে অন্যান্য বিষয়ে যেখানে পাসের হার ৯০ শতাংশের উপরে সেখানে ইংরেজি, রসায়ন, হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে পাসের হার ৭৯ শতাংশ থেকে ৮৮ শতাংশের মধ্যে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক তোফাজ্জুর রহমান জানান, বোর্ডে এ বছর পাসের হার গতবারের তুলনায় কমেছে। গতবার পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ৪৩। বোর্ডের ২৪টি কলেজের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর ১৩টি কলেজে শতভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এই বোর্ডের সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে পঞ্চগড় জেলা। এই জেলায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, করোনা ও বন্যার কারণে বিলম্বিত এইচএসসি পরীক্ষায় এবার পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে এবার সবচেয়ে বেশি, ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। নভেম্বরে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্র প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি নিয়ে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। আলোচিত বোর্ডটি এইচএসসিতে দেশসেরা ফলাফল করেছে।

এ বছর পাস শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে আর শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান কমেছে। উচ্চ মাধ্যমিকে ৯ হাজার ১৪৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০ টির কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। আর সব শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক হাজার ৩৩০টি। গত বছর কেউ পাস করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫টি। সেই হিসাবে এবার শতভাগ ফেল প্রতিষ্ঠানের বেড়েছে ১০ গুণ। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীই পাস করেছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০২১ সালে ছিল ১ হাজার ৯৩৪টি। এবার সেই সংখ্যা থেকে কমেছে ৬৪০টি।

পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে এবারও এগিয়ে আছে মেয়েরা। ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮৬৫ জন ছাত্রী, তাদের মধ্যে পাস করেছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৩ জন। আর পরীক্ষা দেওয়া ৬ লাখ ৯৫ হাজার ২২ জন ছাত্রের মধ্যে ৫ লাখ ১৫ হাজার ২৪৪ জন পাস করেছে।

ছাত্রীদের পাসের হার যেখানে ৮৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সেখানে ছাত্রদের মধ্যে পাস করেছে ৮৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ বছর ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৫ হাজার ৭২১ জন। আর ছাত্রদের মধ্যে ৮০ হাজার ৫৬১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। অর্থাৎ ছাত্রদের চেয়ে ১৫ হাজার ১৬০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।