পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
সম্প্রতি বাংলাদেশ সহ সারাবিশ্বে টেলিভিশন ও পত্রিকা সাংবাদিকতার পাশাপাশি মোবাইল সাংবাদিকতা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাবলিক রিএকশনের পাঠকের জন্য এ সম্পর্কিত প্রথম আলোর একটি সাক্ষাৎকার দেওয়া হলো:
প্রথম আলো: মোবাইল সাংবাদিকতার ধারণাটা নতুন। এই সাংবাদিকতার বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?
ইউসুফ ওমর: সংক্ষেপ বললে, কেউ যদি একটি সহজে বহনযোগ্য ডিজিটাল যন্ত্রের সাহায্যে ছবি বা ভিডিও ধারণ করে তা সম্পাদনা করে খবর আকারে প্রকাশ করে, তাকেই মোবাইল সাংবাদিকতা বলে। মোবাইল ডিভাইসটি হতে পারে একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা, গো-প্রো বা একটি সেলফোন। হতে পারে একটি সম্পূর্ণ আলাদা প্রযুক্তিও। কেউ কেউ মোবাইল সাংবাদিকতাকে সেলফি সাংবাদিকতাও বলছেন। আমার কাছে মুখ্য বিষয় হচ্ছে রিপোর্টিং, তার জন্য আপনি কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, তা গৌণ বিষয়।
প্রথম আলো: স্মার্টফোন ব্যবহার করে কাজ করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট করণীয় বা বর্জনীয় নিয়মকানুন আছে। সেসব নিয়ে একটু বলবেন?
ইউসুফ ওমর: মোবাইল সাংবাদিকেরা বড় ভুল করেন, যখন টেলিভিশন সাংবাদিকতার পদ্ধতি নকল করতে চান। তাঁরা মনে করেন, টেলিভিশনের মতো করে কাজটা করতে পারলে, টেলিভিশন উপস্থাপকের মতো বলতে পারলে সফল হবেন। কিন্তু মোবাইল সাংবাদিকতা তা নয়। আসল কথা হলো আপনাকে সৃজনশীল হতে হবে।
প্রথম আলো: তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ভিডিও প্রাথমিক উপায়। তরুণেরা সব ধরনের প্ল্যাটফর্মে ভিডিওর দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। আপনার কি মনে হয় এখন যেভাবে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকের মাধ্যমে ভিডিও কনটেন্ট নির্মাণ ও প্রকাশ করা হচ্ছে, এটা ভিডিও কনটেন্টের জন্য প্রাথমিক রাস্তা?
ইউসুফ ওমর: হ্যাঁ। বর্তমানে ইন্টারনেটের বড় একটা অংশই ভিডিওর দখলে। ২০২০ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ইন্টারনেট ট্র্যাফিক চলে যাবে ভিডিওর দখলে। ফেসবুক সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, এ বছরের মাঝামাঝি ফেসবুক স্টোরি ও ভার্টিক্যাল ভিডিওই হবে ব্যবহারকারীদের কনটেন্ট উপভোগের প্রধান উপায়। অর্থাৎ এই ভার্টিক্যাল ভিডিও ও স্টোরিজ—এগুলোই অনস্বীকার্য বাস্তবতা।
প্রথম আলো: মোবাইল সাংবাদিকদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে?
ইউসুফ ওমর: আমরা সব সময় যা বলি, এমন কিছু বানাবেন না, যেটা দেখতে টেলিভিশনের মতো হয়ে যায়। গতানুগতিকতা ঝেড়ে ফেলে নতুন কিছু তৈরি করুন। মোবাইল সাংবাদিক হতে হলে স্যুট-টাই পরতে হবে না, এমনকি ট্রাইপয়েড বা অন্য কোনো সরঞ্জাম না থাকলেও চলবে। আপনার হাতের কাছে যা আছে, সেটা ব্যবহার করেই আপনি খুব ভালো কাজ করতে পারেন। চারপাশ চষে বেড়ান এবং একটি পুরো ঘটনা খুব সুন্দর করে তুলে ধরুন।
প্রথম আলো: কেন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর উচিত তাদের নিউজ রুমে মোবাইল সাংবাদিকতা নিয়ে আসা?
ইউসুফ ওমর: কারণ, বাংলাদেশে এখন ইউজার জেনারেটেড কনটেন্টের ভান্ডার তৈরি হয়েছে। নিউজ রুমগুলো যদি এই বিশাল পরিমাণ কনটেন্ট থেকে সুনির্বাচিত কনটেন্টগুলো প্রকাশ করতে পারে, তাহলে একদম নতুন একটি ধারার সূচনা হবে। আমার মনে হয়, এখানে এখনো অনেক সংবাদমাধ্যম ওই মানে পৌঁছাতে পারেনি। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের ভিডিও সম্পাদনা বা ওই জাতীয় কাজের জন্য আলাদা টিম তৈরি করার জন্য আপনাদের এখনো যথেষ্ট লোকবল তৈরি হয়নি।
ফেসবুকের সবচেয়ে বৃহৎ বৈশ্বিক বাজার যুক্তরাষ্ট্র নয়, ভারতে এই বাজার দ্বিগুণ গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়ও ফেসবুকের বাজার দ্রুত বাড়ছে। আপনি যদি তরুণ দর্শক খুঁজতে চান, পশ্চিমে পাবেন না। দক্ষিণ এশিয়ায় তরুণ প্রজন্মের আকার বিশাল। এই অঞ্চলে আমি মোবাইল সাংবাদিকতার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আমি দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এ ধরনের সাংবাদিকতার জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। আমার ক্ষেত্রে প্রথম বাধা ছিল ইন্টারনেট সংযোগের কম গতি, আর ইন্টারনেট প্যাকেজের অতিরিক্ত দাম।
প্রথম আলো: আমরা যারা মূলধারার গণমাধ্যমে কাজ করছি, চ্যালেঞ্জটা মূলত তাদের জন্য। এ সমস্যাগুলো আমরা কীভাবে সমাধান করতে পারি?
ইউসুফ ওমর: মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের সব মানুষই উচ্চ মানের কনটেন্ট চাইবে না, ভিডিও কনটেন্ট সবাই চাইবে না। তাই এমন কনটেন্ট তৈরি করতে হবে, যা সবার কাছে পৌঁছানো যায়। আপনারা যদি আপামর জনগোষ্ঠীর মধ্যে আবেদন সৃষ্টি করতে চান, তাহলে এমন কিছু করতে হবে, যা হবে সর্বজনীন। সবাই ঢাকার বাসিন্দা নয়। অনেকেই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। অনেকে শহর থেকে অনেক দূরে বাস করে। আপনাদের এমন কনটেন্ট বানাতে হবে, যা তাদের জীবনযাপনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, প্রাসঙ্গিক। সেটা হতে পারে কৃষি নিয়ে, পানি নিয়ে—মানে আর যা যা আছে, দেশের মানুষের কাছে যেসব ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ, সেসব নিয়ে। কিন্তু এখানকার বেশির ভাগ মানুষই এখনো যথেষ্ট রক্ষণশীল আর তাদের কনটেন্ট শেয়ারিংয়ের প্রধান উপায় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফলে এখানে ব্যবহারকারীদের সৃষ্ট কনটেন্টের তথ্য যাচাই ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর বাংলাদেশে এখন প্রচুর পরিমাণে ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে।
প্রথম আলো: ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট কীভাবে কাজে লাগানো যায়? আপনার পরামর্শ কী
ইউসুফ ওমর: বাংলাদেশে এখন একটি বড় সমস্যা হলো ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি। কোথাও আগুন লাগলে মানুষ ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করতে শুরু করে। কিন্তু পরে দেখা যায়, সেগুলো বছর তিন-চারেকের পুরোনো ফুটেজ। মানুষ মৃত্যু নিয়েও গুজব ছড়ায়। আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যা সমাধানের উপায় গণমাধ্যম শিক্ষার ব্যবস্থা করা। দর্শক-শ্রোতাদের ভুয়া তথ্য চেনার উপায় বিষয়ে শিক্ষাদিতে হবে, যাতে তাঁরা নিজেরা ভুয়া তথ্য না ছড়ান।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
ইউসুফ ওমর: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সূত্র: প্রথম আলো