মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পখাত ক্ষতির মুখে পড়বে

:: পা.রি. রিপোর্ট ::
প্রকাশ: ২ years ago
প্রতীকী ছবি

সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সহায়ক নীতিমালার কারণে দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পখাত গড়ে উঠেছে। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে দেশের মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাজেটে উৎপাদনকারী ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া সুবিধার পার্থক্য কমে এসেছে। কারণ প্রস্তাবিত বাজেটে সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে মাত্র ২ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্যও প্রায় একই হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এরসঙ্গে ৩ শতাংশ অগ্রিম কর আরোপ করা হবে। এরফলে দেশের মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পখাতের প্রকৃত উৎপাদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিপরীতে লাভবান হবে সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান ও আমদানিকারকরা।

জানা গেছে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই ৩০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করে আসছে। যেখানে সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো ভ্যালু অ্যাডিশন ছিলো না। এ বছর তাদের জন্য ২০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশনের নীতি রাখা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকৃত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভ্যালু অ্যাডিশনের পার্থক্য ১০ শতাংশ। কিন্তু উৎপাদন পর্যায়ে তাদের মধ্যে যোক্তিক ভ্যাট পার্থক্য থাকছে না।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্প গড়ে তুলতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হয়েছে। তাদেরকে পাওয়ার সার্কিট বোর্ড (পিসিবি) উৎপাদন ও সংযোজন, ব্যাটারি ও চার্জার সংযোজন এবং মোবাইল হাউজিং প্রস্তুত প্রক্রিয়া স্থাপন করতে হয়েছে। সুতরাং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৩০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন এবং সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের ২০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশনের বিপরীতে যোক্তিক ভ্যাট পার্থক্য না থাকাটা এ খাতটি বিকাশে বাধা হতে পারে।

গত বাজেটে বিক্রয় পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু নানান কারণে এই ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন অবস্থায় উৎপাদন পর্যায়ে নতুন করে ২ শতাংশ ভ্যাট আরোপ দেশের মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পখাতের জন্য তা খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এরফলে সংযোজনকারীরা লাভবান হবেন। বাড়বে গ্রে মার্কেটের আধিপত্য। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে প্রকৃত উৎপাদনকারী এবং দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পখাত।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, এতে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের সঙ্গে সংযোজনকারী এবং অবৈধ আমদানিকারকদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। বর্তমানে দেশের মোবাইল ফোন বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ এই ধরনের আমদানিকারকদের দখলে। সুতরাং মোবাইল ফোনের উৎপাদন পর্যায়ে প্রকৃত উৎপাদনকারী ও সংযোজনকারীদের মধ্যে যোক্তিক ভ্যাট পার্থক্য না থাকলে তা স্থানীয় বিনিয়োগে প্রভাব ফেলবে।

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিপুল বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়বে। এতে স্থানীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো নিরুৎসাহিত হবে। যারফলে দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পখাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হয়ে উদ্যোক্তারা সংযোজনে বেশি মনোযোগী হবেন। পাশাপাশি গ্রে মার্কেটের আধিপত্য আরো বাড়বে।

সুতরাং, সবদিক বিবেচনায় দেশীয় মোবাইল ফোন শিল্পের সুরক্ষা ও বিকাশে প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোন উৎপাদনের ওপর আরোপিত ভ্যাটের যৌক্তিক পার্থক্য থাকা জরুরি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এ বাজেট উপস্থাপন করেন মন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন। জাতীয় সংসদে ‘দেড় দশকের উন্নয়নের পর স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতা দেন তিনি।

এটি দেশের ৫২তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পঞ্চম বাজেট।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net