লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা ছবি মোনালিসার পেছনের দৃশ্যপট নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। অনেক শিল্প-ইতিহাসবিদের মতে, ভিঞ্চির কল্পনা থেকে জন্ম ওই প্রাকৃতিক পটভূমিটির। আবার অনেকে দাবি করেছেন, ইতালির একাধিক স্থানের সঙ্গে ওই দৃশ্যের যোগ রয়েছে।
এখন একজন ভূতত্ত্ববিদ ও রেঁনেসা শিল্পবিদ মনে করছেন, তিনি অবশেষে বিশ্ববিখ্যাত ছবিটির এ রহস্যটি সমাধান করেছেন। দুটি বিষয়ে নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অ্যান পিজ্জোরুসো সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, লিওনার্দো উত্তর ইতালির লম্ব্যার্ডি অঞ্চলের কোমো হ্রদের পাড়ের লেকো শহরের বেশকিছু স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য তার ছবিতে এঁকেছেন।
মোনালিসার পেছনের সেতু, পর্বতমালা আর হ্রদের সঙ্গে পিজ্জোরুসো লেকোর ১৪ শতকের অ্যাজোন ভিসকন্তি সেতু, দক্ষিণ-পশ্চিম আল্পস ও লেক গার্লেতের মিল খুঁজে পেয়েছেন। ৫০০ বছর আগে ওই হৃদে লিওনার্দো ভ্রমণ করেছিলেন বলে জানা যায়।
এ মিল অস্বীকার করার উপায় নেই মন্তব্য করে পিজ্জোরুসো বলেন, ‘ব্যাপারটা নিয়ে আমি বেশ উত্তেজিত। মনে হচ্ছে এটা একটা দুর্দান্ত ফলাফল।’
এর আগে ২০১১ সালে দাবি করা হয়েছিল, ছবির সেতু ও রাস্তা উত্তর ইতালির ছোট্ট শহর বব্বিওর ওপর কেন্দ্র করে আঁকা। আর ২০২৩ সালের এক অনুসন্ধানের তথ্যমতে, লিওনার্দো আরেজ্জো প্রদেশের একটি সেতুর অনুকরণে তার ছবির সেতু এঁকেছিলেন।
তবে পিজ্জোরুসোর মতে, কেবল সেতুর সঙ্গে মিল খুঁজলে হবে না। কারণ এ ধরনের সেতু সে সময় ইতালি ও ইউরোপে অহরহ পাওয়া যেত। ‘সবাই সেতু নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু ভূতত্ত্বের দিকটা কেউ দেখলেন না।’
‘ভূতাত্ত্বিকেরা ছবি দেখেন না, আর শিল্প-ইতিহাসবিদেরা ভূতত্ত্ব খেয়াল করেন না,’ বলেন পিজ্জোরুসো। ‘শিল্প-ইতিহাসবিদেরা বলেছেন লিওনার্দো সবসময় তার কল্পনা ব্যবহার করেছেন। কিন্তু বিশ্বের যে কোনো ভূতত্ত্ববিদকে ছবিটা দেখান, তারা লেকো সম্পর্কে আমার যে বক্তব্য সেটাই বলবেন।’
এ বিশেষজ্ঞ খেয়াল করেছেন, লেকোর পাথরগুলো চুনাপাথর। আর লিওনার্দো তার ছবিতে পাথর এঁকেছেন ধূসর-সাদা রঙে — ‘যেটা বরাবর, কারণ লেকোতে ওই ধরনের পাথরই রয়েছে।’ লেকোর মতো বব্বিও বা আরেজ্জোতে কোনো হৃদ নেই, উল্লেখ করেন পিজ্জোরুসো।
মোনালিসার ছবি নিয়ে এ গবেষণা করার জন্য অ্যান পিজ্জোরুসো লেকো শহরও ভ্রমণ করেছেন। মোনালিসা ও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিষয়ে আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞও তার তত্ত্বের সঙ্গে একমত হয়েছেন।
এ সপ্তাহের শেষে লেকোতে ভূতত্ত্ব বিষয়ক একটি কনফারেন্সে নিজের প্রমাণ উপস্থাপন করবেন পিজ্জোরুসো।