ডিম ও মুরগির বাজারে সরকারের নজরদারি না থাকায় হরিলুট চলছে বলে অভিযো করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের (বিপিএ)। সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, গত ৬০ দিনে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে এ খাতের কর্পোরেট সিন্ডিকেট ৫৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের (বিপিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডিম ও মুরগির বাচ্চার দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছিল। প্রতিটি মুরগির বাচ্চা ওই দিন পর্যন্ত বিক্রয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও পরের দিন থেকেই মুরগির বাচ্চার দাম বাড়তে থাকে কোম্পানিগুলো। তারা এসএমএস’র মাধ্যমে এক দিনের বাচ্চা ৫৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করে। আবার কোনো কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান বিক্রি করছে ব্রয়লার, সোনালী কালার বার্ড, লেয়ার মুরগির বাচ্চা ৫৫ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত । সব ধরনের মিলে প্রতিদিন ৩০ লক্ষ মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় দেশে। সে হিসাবে প্রতিটি মুরগির বাচ্চা কোম্পানিগুলো গড়ে ৩০ টাকা বেশি মুনাফা করছে। এভাবে প্রতিদিন ৯ কোটি টাকা করে গত ৬০ দিনে শুধু মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে পকেটে ভরেছে ৫৪০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, কোম্পানিগুলো মুরগির বাচ্চায় অতিরিক্ত মুনাফা করেছে ৫৪০ কোটি টাকা। সরকার প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগির লাভের হার দিয়েছেন ৫ শতাংশ, অন্যদিকে কোম্পানি মুরগির বাচ্চায় ও ফিডে কত শতাংশ লাভ করবেন তার কোন নির্দিষ্ট হিসাব দেয়া হয়নি। সরকারকে এই বৈষম্য দূর করতে হবে। ফিড মুরগির বাচ্চা ডিম এবং মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষে ৮ থেকে ১০টি কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের কখনো দাম বাড়িয়ে দিয়ে বাজারকে অস্থির করে,আবার কখনো দাম কমিয়ে দিয়ে প্রান্তিক খামারিদের নিঃস্ব করে দেয়। তাই কর্পেট কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেট ভেঙে তাদের লাগাম টানতে হবে।তাহলেই ডিম ও মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে। প্রান্তিক খামারি ন্যায্য মূল্য পাবে।গ্রাহকও ন্যায্য মূল্যে ডিম মুরগি খেতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, একদিকে কোম্পানিগুলো আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে প্রান্তিক খামারীদের ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।আবার কোম্পানিগুলো একদিকে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে অন্যদিকে সরকারকে খুশি রাখতে ডিম ও মুরগির দাম কমিয়ে দিচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক খামারীরা। ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, প্রান্তিক খামারিদের রক্ষা করতে হবে। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে হবে। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ধীরে ধীরে খামারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন দেশের পোল্ট্রি খাতে বিদ্যমান ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে প্রান্তিক খামারিদের যে সংকটে পড়তে হচ্ছে, সে বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।সিন্ডিকেটের প্রভাবে মুরগির বাচ্চা ও ফিডের দাম কৃত্রিমভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়ে লাভের সুযোগ সংকুচিত করছে। এর ফলে বহু ছোট খামারি ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পোল্ট্রি খাত থেকে সরে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন। যার নেতিবাচক প্রভাব দেশের ডিম ও মুরগির বাজারে পড়ছে।
সুমন হাওলাদার বলেন, পোল্ট্রি খাতের এই সংকট নিরসনে সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। ফিড ও মুরগির বাচ্চার দামে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে খামারিরা সঠিক মূল্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে পারবেন। যা তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে সহায়ক হবে। এর ফলে প্রান্তিক খামারিরা সুরক্ষিত থাকবে এবং দেশে ডিম ও মুরগির সরবরাহও স্থিতিশীল থাকবে। এতে সাধারণ ভোক্তারাও সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম ও মুরগি ক্রয় করতে পারবেন, যা পুরো বাজারে স্বস্তি বয়ে আনবে। সিন্ডিকেট ভাঙতে বিপিএর পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে আছে-সরকারিভাবে ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাজারে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেন দামে কোনো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হয়। এর মাধ্যমে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। মুরগির বাচ্চা ও ফিডের দামে স্বচ্ছতা আনতে সুনির্দিষ্ট মূল্যসীমা নির্ধারণ করা, যা খামারিদের সঠিক দামে এসব পণ্য ক্রয়ে সহায়তা করবে।
এছাড়া মুরগির বাচ্চা ও ফিডের বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ নিরীক্ষণ করতে একটি নিয়ন্ত্রক কমিটি গঠন করা, যা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। এতে খামারিরা সম্মিলিতভাবে তাদের পণ্য ন্যায্যমূল্যে ক্রয় করতে পারবেন।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে দেশের ডিম ও মুরগির বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে, প্রান্তিক খামারিরা লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন এবং সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে পোল্ট্রি পণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হবেন।